প্রাক্তন প্রেমিকের নির্যাতনের শিকার অভিনেত্রী
মালায়ালাম সিনেমার অভিনেত্রী আনিকা বিক্রমন। প্রাক্তন প্রেমিক অনুপ পিল্লাই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ
ডিলান হাসান : গত ৫ মে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন চিত্রনায়িকা পপি। এ নিয়ে তিনি বেশ উচ্ছ¡সিত। পাশাপাশি শিল্পী সমিতির মাধ্যমে চলচ্চিত্রের বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণে ভূমিকা রাখতে চান। তিনি কীভাবে ভূমিকা রাখতে চান এবং চলচ্চিত্রের সংকটগুলো কি এসব বিষয় নিয়ে তার সাথে কথা হয়।
আপনাকে শিল্পী সমিতির সদস্যরা নির্বাচিত করেছে। আপনার অনুভূতি কি?
যে কোনো বিজয় আনন্দের। আমি আনন্দিত এবং কৃতজ্ঞ সমিতির সদস্যদের প্রতি। আমার ধারণা ছিল না, আমার সহকর্মীরা আমাকে এখনও মনে রেখেছেন এবং এত ভালবাসেন। তাদের ভালবাসায় আমি মুগ্ধ। এ ভালবাসা আমার দায়িত্বও বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের ভালবাসার যথাযথ মূল্যায়ন করতে আমি এবং সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য সদস্যরা কাজ করে যাব।
কী ধরনের দায়িত্ব অনুভব করছেন?
দেখুন, আমাদের প্রাণের চলচ্চিত্র দীর্ঘদিন ধরেই মহাসংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মান সম্মত সিনেমা নির্মিত হচ্ছে না। মানসম্মত সিনেমা হল নেই। দর্শক আমাদের চলচ্চিত্র থেকে অনেকটাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। অথচ এ পরিস্থিতি বিগত কয়েক বছর আগেও ছিল না। এর জন্য আমাদের চলচ্চিত্রের লোকজনই দায়ী। কারণ আমরা দর্শকের রুচি ও চাহিদা মতো সিনেমা উপহার দিতে পারছি না। দীর্ঘদিন ধরেই এ অবস্থা চলে আসছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের চলচ্চিত্র বলতে কিছু থাকবে না।
শিল্পী সমিতির একার পক্ষে কী ভূমিকা রাখা সম্ভব?
কাজ করার মানসিকতা এবং উদ্যোগ যদি থাকে, তবে অবশ্যই সম্ভব। এতদিন শিল্পী সমিতির কমিটি ছিল, কিন্তু চলচ্চিত্রের সংকট নিরসনে উদ্যোগী ভূমিকা ছিল না। সমিতিটিকে চলচ্চিত্রের স্বার্থে নয়, ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ চলচ্চিত্রের উন্নয়নে আমাদের শিল্পীদের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। এ বোধ বিগত কমিটির মধ্যে ছিল বলে মনে হয়নি। এবার আমরা যারা নির্বাচিত হয়েছি, তারা চলচ্চিত্রের উন্নয়নের কমিটমেন্ট করে এসেছি। সবচেয়ে বড় কথা, সমিতি শুধু নিজেদের স্বার্থ দেখার জন্যই নয়, চলচ্চিত্রের সার্বিক উন্নয়ন, অগ্রগতি দেখার দায়িত্বও রয়েছে। এজন্য আমরা অন্তত সরকারের কাছে গিয়ে চলচ্চিত্রের সংকটের কথা তুলে ধরতে পারি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে সমস্যাগুলো সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারলে নিশ্চয়ই তিনি শুনবেন এবং সমাধানের ব্যবস্থা নেবেন। এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা বিগত কমিটি কোনো দিন করেছে বলে আমরা শুনিনি। আমরা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের স্বার্থে যত ধরনের উদ্যোগ নেয়া যায়, তা করব।
বিগত কমিটি কি সফল হয়নি?
আমার কাছে তা মনে হয়নি। মনে হয়েছে, কমিটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ নিজের স্বার্থে সমিতিকে ব্যবহার করেছে। সমিতিকে জাতীয় পর্যায়ে না নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে ব্যক্তি কেন্দ্রিক করা হয়েছে। এই যে যৌথ প্রযোজনার নামে যে অনিয়ম হচ্ছে, এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা পালন করেনি। বরং সমিতির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করে অনিয়মকে প্রশ্রয় দিয়েছে। তারা মনে করেছে, আমি যৌথ প্রযোজনার সিনেমায় অভিনয় করতে পারছি, এটাই যথেষ্ট। অনিয়ম হচ্ছে কি হচ্ছে না, তা দেখার দায়িত্ব আমার নয়। এটা যে একটি আত্মঘাতী মনোভাবের পরিচয়, তা উপলব্ধিই করেনি। তাদের কাছে দেশের চলচ্চিত্রের সার্বিক স্বার্থের চেয়ে নিজের স্বার্থ বড় হয়ে উঠে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
যৌথ প্রযোজনায় কি অনিয়ম হচ্ছে?
আপনি যদি সত্যিকার অর্থে বিবেচনা করে দেখেন, তবে দেখবেন কোনো নিয়মই মানা হচ্ছে না। যৌথ প্রযোজনার সিনেমায় দুই দেশের শিল্পী ও কলাকুশলীদের সমান প্রাধান্য পাওয়ার কথা। অথচ কোনো সিনেমায়ই এই নিয়মটি মানা হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, আমাদের দেশের একজন নায়ক হলে বাকি সবই অন্য দেশের। এমনকি মুক্তির সময় সিনেমা প্রচারের ক্ষেত্রে আমাদের দেশের কোনো শিল্পীকেই প্রাধান্য দেয়া হয় না। কী পোস্টার, কী ট্রেইলর, সবক্ষেত্রেই আমাদের শিল্পীদের উপেক্ষা করা হয়। বোঝাই যায় না, এটি যৌথ প্রযোজনার নাকি কলকাতার সিনেমা। এটা তো যৌথ প্রযোজনার নীতিমালার মধ্যে পড়ে না। অথচ আমাদের দেশের যে গুটিকয় শিল্পী যৌথ প্রযোজনার সিনেমায় কাজ করছেন, এ ব্যাপারে তারা কোনো ভূমিকা রাখছে না। একজন নায়ক যিনি সমিতির শীর্ষ পদে রয়েছেন, তিনি তো অন্তত পক্ষে এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারতেন। তিনি তা করেননি। বরং তিনি সুযোগ পেয়েছেন, এটাই তার কাছে যথেষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী অন্য কেউ সুযোগ পেল কিনা, তা তিনি দেখছেন না। উল্টো আমাদের দেশের টেকনিশিয়ান ও কলাকুশলীদের বদনাম করেছেন। সমিতির শীর্ষ পদে থেকে কী করে তিনি এমন কথা বলেন। অথচ আমাদের এই চলচ্চিত্রই তাকে তৈরি করেছে।
যে নেতা, অভিনেতা বা নায়কের কথা বলছেন, চলচ্চিত্রে তার ভূমিকা আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
তিনি যা করেছেন নিজের স্বার্থ হাসিল করা ছাড়া কিছু করেননি। তিনি অনেক বড় বড় কথা বলেন। যদি তাকে প্রশ্ন করা হয়, নিজের সিনেমা ছাড়া চলচ্চিত্রের আর কি প্রসার ঘটিয়েছেন? তাহলে কী জবাব দেবেন? আমরা দেখেছি, এক সময় যারা শীর্ষ স্থানে ছিলেন, তারা শুধু নিজের চিন্তা করেননি। চলচ্চিত্রের সার্বিক দিক চিন্তা করেছেন। নিজের সিনেমার পাশাপাশি সিনেমার সংখ্যা আরও কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়, এমন পরিকল্পনা করেছেন। মান্না ভাইয়ের কথাই যদি ধরি, তবে দেখব তিনি সিনেমাকে শুধু নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি। সিনেমার সার্বিক উন্নতির বিষয় নিয়ে সব সময় চিন্তা করতেন। কারণ তিনি জানতেন, নিজে একা করলে হবে না, অন্য সবাইকে নিয়ে করতে হবে। অন্যদের সিনেমার কাজে যুক্ত করতে হবে। তাহলে সিনেমার প্রসার যেমন ঘটবে, বাজারও টিকে থাকবে। তার এ চিন্তা যে সঠিক ছিল, তা তার মৃত্যুর পর বোঝা গিয়েছে।
হ্যাঁ, বোঝা গিয়েছে। আপনাদের অনেকেই সিনেমা থেকে সরে গিয়েছেন...
বিষয়টি ঠিক তা নয়। একজনের এককেন্দ্রিক চিন্তা ও একক রাজত্ব প্রতিষ্ঠার মনোভাব আমাদের দূরে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি এমনই পলিটিক্স শুরু করেন যে আমাদের টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তার এই ব্যাড পলিটিক্সের শিকার হয়েছি আমরা।
আমরা বলতে কাদের বোঝাচ্ছেন?
যেমন আমি, শাবনূর, পূর্ণিমা, রিয়াজ, ফেরদৌস এরা।
একজনের ব্যাড পলিটিক্সের কাছে আপনারা হেরে গেলেন?
দেখুন, আমরা যে ধরনের পরিবারিক ব্যাক গ্রাউন্ড থেকে ফিল্মে এসেছি, তাদের পক্ষে নোংরা রাজনীতি করা অসম্ভব। ঐ নায়ক এমন নোংরা পলিটিক্স করেছে যা, কোনোভাবেই সভ্য ব্যাক গ্রাউন্ডের হতে পারে না।
তাহলে আপনারা একজনের কাছে হেরে গেছেন?
বলতে পারেন তাই। কারণ তিনি যেভাবে যে পন্থায় পলিটিক্স করেছেন, তা রুচিসম্পন্ন কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের পক্ষেও সম্ভব হয়নি।
তাহলে তো বলতে হয়, এর দায় আপনাদেরও রয়েছে...
কিভাবে?
এই যে মাঠ ছেড়ে দিয়ে সরে আসা।
আমি আগেই বলেছি, আমাদের পক্ষে নোংরা রাজনীতি করা সম্ভব হয়নি, সম্ভবও নয়।
আপনারা যারা ভাল তারা যদি একজোট হয়ে ব্যাড পলিটিক্স মোকাবেলা করতেন, তাহলে তো চিত্র ভিন্নও হতে পারত?
ঐ যে বললাম, আমাদের রুচি ও মানসিকতায় কুলায়নি।
এটা তো যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নের শামিল। কারণ যুদ্ধ ক্ষেত্রে শত্রæর কাছ থেকে ভাল আচরণ আশা করা তো বোকামি ছাড়া কিছু নয়!
আসলে আমরা এমন নোংরা পলিটিক্সের শিকার হবো, এটা কখনোই আশা করিনি।
চলচ্চিত্রে তো অনেক বড় বড় কথা বলা হয়ে থাকে। এ করে ফেলব, সে করে ফেলব। শেষ পর্যন্ত কিছুই হয় না...
এখন চলচ্চিত্রের যে অবস্থা তাতে আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া কোনো উপায় নেই। এজন্যই আমি চাই শিল্পী সমিতির মাধ্যমে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে চলচ্চিত্রকে একটি সুষ্ঠু পথে ফিরিয়ে আনা। দেখুন, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি বলতে কিছু নেই। ভাল ক্যামেরা, ডাবিং থিয়েটার, এডিটিং প্যানেল বলতে তেমন কিছু নেই। এভাবে কি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি চলতে পারে? সরকার বরাদ্দ দিলেও তা কাজে লাগানো হয় না। সিনেমা হলগুলোর যাচ্ছে তাই অবস্থা। আমার কথা হচ্ছে, উদ্যোগ না নিয়ে হাত গুটিয়ে বা চুপচাপ বসে থাকলে তো হবে না। অন্তত পক্ষে কাউকে না কাউকে সমস্যাগুলো তুলে ধরতে হবে। আমি চাই, শিল্পী সমিতির নব নির্বাচিত কমিটি এই উদ্যোগ নিক। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে সমস্যাগুলোর কথা বলুক। এতে সরকারতো অবহিত হতে পারবে, আমাদের কি সমস্যা।
যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নিয়ে আপনার মতামত কি?
দেখুন, আমাদের দেশের দর্শক আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির সিনেমা দেখতে চায়। বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশেরই সিনেমা দেখতে আগ্রহী। অন্য দেশের সিনেমা দেখতে পারে, তবে তাতে তাদের তৃপ্তি মেটে না। যখন আমার দেশের চিরপরিচিত শিল্প সংস্কৃতির মধ্যে সিনেমা নির্মিত হবে, তখন তা দর্শকের নিকট অতি আপন হয়ে ধরা দেবে। এ সিনেমাই তারা দেখবে। ঐ যৌথ প্রযোজনার নামে ভিনদেশের সংস্কৃতির সিনেমা দর্শক কখনোই পছন্দ করবে না। কাজেই আমাদেরকে আমাদের মতো করেই সিনেমা নির্মাণ করতে হবে। শুধু প্রয়োজন, সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ। তাহলেই দেখবেন সিনেমার পরিবর্তন হয়ে গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।