Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তানোরে চার ফসলি জমিতে হিমাগার নির্মাণ পরিকল্পনার অভিযোগ

নীতিমালা লঙ্ঘন ও শ্রেণী পরিবর্তন

| প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

তানোর (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা : রাজশাহীর তানোরে নীতিমালা লঙ্ঘন ও শ্রেণী পরিবর্তন না করে গভীর নলকুপের স্কীমভুক্ত চারফসলি কৃষি জমিতে হিমাগার নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা জানান, রহমান গ্রুপ এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এবং আমান গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ পৃথক দুটি হিমাগার নির্মাণ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে এই দুটি শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কাশিমবাজার ও দেবীপুর মোড়ে চারফসলি জমিতে দৃটি হিমাগার নির্মাণ স¤পন্ন করেছেন। এতে গভীর নলকুপের স্কীমভুক্ত চারফসলি প্রায় ৪০ বিঘা জমি নস্ট হয়েছে। আবারো এই দুটি প্রতিষ্ঠান তানোরের গোপালনগর মৌজায় চারফসলি প্রায় ৫০ বিঘা জমি নস্ট করে হিমাগার নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। এদিকে মাত্র একফসলি জমিতে পুকুর খননের অপরাধে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে জেল-জরিমানা করা হলেও, গভীর নলকুপ স্কীমের চারফসলি জমি নস্ট করে একের পর এক হিমাগার নির্মাণ করা হলেও এবিষয়ে কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এতে সাধারণের মনে প্রশ্ন উঠেছে, আসলে কি ? একই বিষয়ে একদেশে ভিন্ন আইন না কি ? আইন এসব প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। স্থানীয় কৃষি বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এলাকায় শিল্পায়ন হোক সেটা তারাও চাই, তাই বলে শিল্পায়নের নামে চারফসলি জমি নস্ট করে নয়, প্রয়োজনে পতিত বা একফসলি জমিতে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হোক। তারা আরো বলেন, এখনই এসব বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আগামিতে এই এলাকায় খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আবার যেসব জমিতে চারটি ফসল উৎপাদনের জন্য বিএমডিএ কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে গভীর নলকুপ স্থাপন করেছেন, এখন সেসব জমিতে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে কার স্বার্থে। জানা গেছে, দেশের প্রধান মন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা রয়েছে কোনো কৃষি জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে সেখানে কোনো স্থাপনা বা কল-কারখানা নির্মাণ করা যাবে না। অথচ প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য ও চারফসলী কৃষি জমি নস্ট করে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার নেপথ্যে মদদে বিএনপি নেতা লুৎফর রহমানের ভাই ফজলুর রহমান তানোর-মুন্ডুমালা রাস্তার দেবীপুরে প্রায় ৩০ বিঘা চারফসলি জমি নস্ট করে সেখানে রহমান পটেটো কোল্ড স্টোর নির্মাণ করছেন এবং আরো প্রায় ২০ বিঘা চারফসলি জমি নস্ট করে নতুন হিমাগার নির্মাণ শুরু করেছেন। এসব ঘটনায় কৃষকরা ভেতরে ভেতরে গুমরে গুমরে কাদলেও প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে পারছেন না। সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকগণ অভিযোগ করে বলেন, কৃষি প্রধান এলাকায় চারফসলি কৃষি জমি নস্ট করায় একদিকে খাদ্য সংকট ও অন্যদিকে লোকালয় হুমকিতে পড়বে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে হিমাগারের জিএম হালিম বলেন, প্রায় ১৫ বিঘা জমির উপর নির্মিত হয়েছে তাদের হিমাগারটি এবং আরো একটি হিমাগারের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। চারফসলি কৃষি জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে সেখানে কারখানা নির্মাণ করা যাবে না মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনা রয়েছে, তাহলে তারা কি ভাবে চারফসলি জমি নস্ট করে সেখানে হিমাগার নির্মাণ করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের অনেক কল-কারখানা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এমন নিয়ম আছে বলে তার জানা নেই । এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, চারফসলি কৃষি জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে সেখানে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না এটা সত্য তবে এ বিষয়ে তার করনীয় কিছু নাই। তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। এব্যাপারে একাধিকবার যোগাযোগের চেস্টা করা হলেও মুঠোফোন রিসিভ না করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাঃ শওকাত আলীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এব্যাপারে বিএমডিএ তানোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম বলেন, গভীর নলকুপের স্কীমভুক্ত চারফসলি জমিতে শিল্প-কারখানা স্থাপন করা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা, এর ফলে অদুর ভবিষ্যতে এলাকায় খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ল্যান্ডফোনে যোগাযোগ করা সেখান থেকে জনানো হয়, কৃষি জমির শ্রেণী পরির্বতন করে সেখানে কোনো ধরনের শিল্প-কারখানা বা হিমাগার তৈরী করা যাবে না, এ বিষয়ে বিস্তারিত খোজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ