পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বর্তমান সরকার দেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে, প্রশাসন চাপ দিয়ে বসে আছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল ঢাকা মহানগর উত্তরের এক কর্মী সভায় অধঃস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ না করায় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার উষ্মা প্রকাশের বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, আজকে প্রধান বিচারপতি অনেক অত্যন্ত জরুরী কথা বলেছেন, সত্য কথা বলেছেন। যে কথাগুলো আমরা বার বার বলে আসছি, এদেশের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন নয়। এর ওপরে প্রশাসন চাপ নিয়ে বসে আছে, সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে।
আমরা তো ভুক্তভোগী। নিচে (নিম্ন আদালত) হাকিমকে হুকুম দিলে জামিন হয়, না হলে জামিন হয় না। আজকেও দীর্ঘ ৬ বছর ধরে প্রধান বিচারপতি বিধিমালা চাচ্ছেন বিচারকদের, সেই বিধিমালা এখন পর্যন্ত দেয়া হয়নি। আজকেও সময় নিয়েছে এটর্নি জেনারেল (সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা)।
সরকার আড়াই বছরেও অধঃস্তন আদালতে বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ না করায় প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা উষ্মা প্রকাশ করেন। গতকাল সোমবার প্রধান বিচারপতি এটর্নি জেনারেলকে প্রশ্ন রেখেছেন, সুপ্রিম কোর্ট থেকে একটি ফাইল বঙ্গভবন ও গণভবনে যেতে কতদিন সময় লাগে।
কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে দেশব্যাপী পক্ষকালের ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগরের উত্তরের এই কর্মীসভা হয়। গত রোববার গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা মহানগর দক্ষিনের কর্মী সভা হয়।
গত ১৯ এপ্রিল ঢাকা মহানগরকে দুই ভাগ করে দক্ষিণে হাবিব উন নবী খান সোহেল ও উত্তরে এম এ কাইয়ুমকে সভাপতি করে কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়।
দশম জাতীয় সংসদের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে পার্লামেন্ট নেই বললেই চলে। এই পার্লামেন্ট নামে মাত্র পার্লামেন্ট, এই পার্লামেন্ট সরকারেরই একটা গৃহপালিত বিরোধী দল দিয়ে একটা পার্লামেন্ট আছে যেখানে কোনো কিছুই জবাবদিহিতা দেয়া হয়না। যেখানে সরকারের সমস্যা তুলে ধরে আলোচনা-সমালোচনা হওয়ার কথা সেখানে হয় না। সেই কারণে এই সংসদ কোনো সংসদই নয়।
অর্থাৎ গণতন্ত্রের লেশমাত্র এখানে নেই্। এই দেশ পুরোপুরিভাবে একনায়কোতন্ত্র চলছে, ফ্যাসিবাদ চলছে। সেইজন্যই আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বেশি সখ্যতা, স্বৈরাচার এরশাদের সঙ্গে বেশি সখ্যতা।
নব্বইয়ের আন্দোলনে পর তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী পতিত স্বৈরশাসক এরশাদকে বর্জন করার বিষয়টি উল্লেখ বিএনপি মহাসচিব বলেন, যাকে (এরশাদ) বর্জন করা হয়েছিলো, যাকে এদেশের মানুষ ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলো, তাকে এখন বিশেষ দূত বানিয়েছে। তার দলের তিনজনকে মন্ত্রী বানিয়েছে। আজকে এভাবে এদেশ গণতন্ত্রবিহীন হয়ে পড়েছে, আমাদের অধিকার নিয়ে গেছে, আমাদের বাক স্বাধীনতা, ভোট দেয়ার স্বাধীনতা সব কিছু হরণ করা হয়েছ।
এ থেকে উত্তরণে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সকল বিভেদ-ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম।
একাদশ নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন চাই, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হোক, সেটা আমরা চাই। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আমরা সরকারে যেতে চাই।
যে নির্বাচনে আপনারা একা খেলবেন, একা আপনারা রেফারী হবেন, মাঠ দখল করে রাখবেন, সেই নির্বাচন তো হবে না। লেভেল প্ল্যায়িং ফিল্ড তৈরি হবে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন এদেশে হতে হবে, অন্য কোনো নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না।
মহানগর উত্তরের নবনির্বাচিত সভাপতি এম কাইয়ুমকে সরকার রাজণৈতিক উদ্দেশ্যে ইতালীয় নাগরিক হত্যাকান্ডের সাথে জড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
শুধু কাইয়ুম সাহেব নয়, এভাবে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, আমাদের তরুন নেতা তারেক রহমানসহ এমন কোনো নেতা নেই, যার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা নেই। এটা হচ্ছে তাদের (সরকার) হাতিয়ার, এই হাতিয়ারটা তারা ব্যবহার করছে এজন্য যে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে পারছে না।
তারা (ক্ষমতাসীন দল) রাজনৈতিক দেউলিয়া হয়ে গেছে, নিঃশেষ হয়ে গেছে। তাদেরকে পুলিশ দিয়ে মোকাবিলা করতে হয়, মিথ্যা মামলা দিয়ে মোকাবিলা করতে হয়। এই দলের প্রয়োজনীয়তা এদেশে আর নেই।
মহানগর উত্তরের সভাপতি এম এ কাইয়ুম যিনি গুলশানে ইটালীয় নাগরিক তাভেল্লা সীজার হত্যাকান্ডের আসামী হয়ে দীর্ঘদিন মালয়েশিয়া অবস্থান করছেন, মালয়েশিয়াকে থেকে তার টেলিফোনে বক্তব্য মাইকে শুনানো হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশকে বাঁচাতে হলে বিএনপিকে দায়িত্ব নিতে হবে। গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেই সেই অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে।
আজকে গোটা দেশ মহানগরের দিকে তাঁকিয়ে আছে। সেজন্য মহল্লায় মহল্লায় যেতে হবে, পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে সংগঠন তৈরি করতে হবে। ১৬ কোটি মানুষের মুক্তির জন্য আজকে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশনেত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার দেশের অর্থনীতিকে রসাতলে নিয়ে গেছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থা একেবারে শেষ হয়ে গেছে। আজকে মন্ত্রিসভার বৈঠকে যে আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে, তাকে এখন পরিচালকরা যারা দুই মেয়াদ রয়েছেন, তারা আরো এক মেয়াদ থাকতে পারবেন। কেবল তাই নয়, এই আইন পাস হলে একই পরিবারের ৪ জন পরিচালক থাকতে পারবেন।
অর্থাৎ তারাই যখন সব ব্যাংক দখল করে নিয়েছে, এখন তাদের পরিবারের ৪জন করে পরিচালক থাকবেন এবং সেই ব্যাংকিং ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে গোটা অর্থনীতিকে তারা লুট করে ছেড়ে দেবেন। দ্রব্যমূল্যের উধর্বগতি বিশেষ করে মোটা চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, আজকে যখন হাওরের মানুষেরা না খেয়ে দুর্গত অবস্থায় আছে, তখন আপনারা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাদের মন্ত্রিরা-সচিবরা বিদেশে ঘুরতে যাচ্ছে। আর বলছে এতো উন্নয়ন নাকী দেশে কখনো হয়নাই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন- ২০১৭’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয়ের বক্তব্য প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকের পত্রিকায় এসেছে, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র বলেছেন, তিনি এ দেশটাকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া বানাতে চান। সিঙ্গাপুরে গণতন্ত্র নেই। মানুষ সেখানে তাদের নিজেদের কথা বলতে পারে না। মালয়েশিয়াতেও নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র।
আমরা বলতে চাই, সিঙ্গাপুরের মানুষ যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেনি। বাংলাদেশে মানুষ গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। এদেশের মানুষ কোনোদিনই ওই সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার মতো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে না। সত্যিকার অর্থে জনগণের গণতন্ত্র, জনগণের অধিকারের গণতন্ত্র তৈরি করবে।
মহানগর উত্তরের সহসভাপতি মুন্সি বজলুল বাছিদ আন্জুর সভাপতিত্বে কর্মী সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, সহসভাপতি সাহাব উদ্দিন, বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের মধ্যে যুব দলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নিরব, এসএম জাহাঙ্গীর, স্বেচ্ছাসেবক দল ইয়াসীন আলী, মহিলা দলের পেয়ারা মোস্তফা, ছাত্র দলের সাজ্জাদ হোসেন রুবেল প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।