Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

তানোরে সালিশের লাঞ্ছনা সইতে না পেরে আত্মহত্যা

| প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

তানোর (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা : রাজশাহীর তানোরের সরনজাই ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আলোচিত চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক মন্ডলের রায়ে গ্রাম্য শালিসে প্রকাশ্যে জুতাপেটা, কান ধরে ওঠবস ও থুথু চাটানোর ঘটনায় লাঞ্ছনা সইতে না পেরে ভিকটিম যুবক আকতার হোসেন ‘ঘড়া’ গতকাল দুপুরে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে আকতারের আত্মহত্যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আসলে এটি পরিকল্পিত হত্যা, না আত্মহত্যা? জানা গেছে, যে গামছায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে সেই গামছা নিহত আকতারের নয়। তানোরের সরনজাই ইউপির সিধাইড় গ্রামের জনকল্যাণ সমিতির কার্যালয়ের সামনে গতকাল দুপুর আত্মহত্যার মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় নিহতের লাশ পুলিশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন ও তানোর থানায় একটি ইউডি মামলা করা হয়েছে।
এদিকে এ খবর সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেকের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বছরের ২৭ অক্টোবর উপজেলার সিধাইড় গ্রামের শমসের আলীর পুত্র তোতা মিয়ার সঙ্গে পাশের ভাগনা গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের পুত্র আকতার হোসেন ঘড়া’র মধ্যে মারপিটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তোতা বাদী হয়ে সরনজাই ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেকের কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগের দুইদিন পর ২৯ অক্টোবর রাতে সিধাইড় গ্রামের কথিত জনকল্যাণ সমিতির কার্যালয়ের সামনে শালিস বৈঠক বসানো হয়। সালিশ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের চেয়ারম্যান জনকল্যাণ সমিতির সভাপতি ও সরনজাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মালেক মন্ডল।
শালিস বৈঠকে উপস্থিত থাকা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিহত আকতারের স্বজনরা জানান, শালিস বৈঠকে উভয়পক্ষের কথা শোনার পর নিহত আকতার হোসেন (ঘড়া)’র ৫০০ টাকা জরিমানা, সেই সঙ্গে ১০ ঘা জুতা, ১০ বার কান ধরে ওঠবস ও নিজের থুথু মাটিতে ফেলে তা জিহŸা দিয়ে চেটে খাওয়ার রায় ঘোষণা দেন সালিশ বৈঠকের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক। শালিস বৈঠকে চেয়ারম্যানের এমন রায় মেনে নিতে না পেরে সেখানেই আত্মহত্যার চেষ্টা করে আকতার। গত বছরের ৩০ অক্টোবর গ্রামের এক চায়ের দোকানে আকতার চা খেতে গেলে চেয়ারম্যানের ইন্ধনে তোতা ও তার ভাই শামিম আকতারকে মারপিট করে। এতে আকতার গুরুত্বর জখম হলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় তানোর থানায় মামলা হয়।
নিহতের স্ত্রী হিরা বিবি জানান, মামলার পর প্রতিপক্ষের লোকজন প্রতিনিয়ত আমার স্বামীকে মেরে ফেলার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। সেইসঙ্গে শালিস বৈঠকে প্রকাশ্যে শাস্তি দেবার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি তার স্বামী। প্রতিপক্ষের লোকজনের প্রতিনিয়ত হুমকির ভয়ে ও শালিস বৈঠকে লাঞ্ছনার ঘটনায় মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে তার স্বামী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে তার দাবি।
এ বিষয়ে সরনজাই ইউপি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক মন্ডল বলেন, শালিস বৈঠকে বোর্ড গঠনের মাধ্যমে বিচারকরা রায় দেন। শালিসের রায় মোতাবেক আকতারকে শাস্তি দেয়া হয়। তবে, শালিসের ঘটনা নিয়ে আকতার আত্মহত্যা করেনি বলে দাবি করেন চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক। কিন্তু শালিস বৈঠকে এ ধরনের রায়ের প্রতিফলন ঘটানো যায় কি না এমন প্রশ্নের তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়ে কৌশলে বিষয়টি সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান তিনি।
এ ব্যাপারে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর্জা আব্দুস ছালাম জানান, আকতার হোসেন ঘড়ার আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে ইউডি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে, আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে তদন্ত চলছে। গ্রাম্য শালিসে এ ধরনের রায় দিয়ে শাস্তি দেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে বা কেউ কোন অভিযোগ করলে চেয়ারম্যানসহ মাতাব্বরদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ