পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঐক্য সময়ের দাবি
স্টাফ রিপোর্টার : ভোটের রাজনীতিতে দেশের ইসলামী ধারার দলগুলো কার্যত হয়ে গেছে নিয়ামক শক্তি। দেশের রাজনীতিতে ইসলাম বিদ্বেষী অপপ্রচার রয়েছে। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে ইসলামী ধারার দলগুলোকে এতোদিন তুচ্ছতাচ্ছিল্য-উপেক্ষা করা হলেও ভোটে ক্ষমতায় যাওয়ার বাস্তবতায় দেশের আলেম-ওলামা ও ইসলামী ধারার দলগুলো হয় উঠছে সহায়ক শক্তি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব এটা বুঝতে পেরে শত বাঁধা-সমালোচনার মুখেই অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে ‘সমঝোতা’ করছে। টার্গেট আসন্ন নির্বাচনে কওমী মাদ্রাসা কেন্দ্রিক তৌহিদী জনতার ভোট। একই কারণে নানান সমালোচনা ও বিতর্কের মধ্যেও বিএনপি জামায়াতকে ছাড়ছে না। হেফাজতের আমিরের সঙ্গে দেখা করেছেন বিএনপির এক সিনিয়র নেতা। দেশের রাজনীতির যখন এই বাস্তবতা; তখনো ইসলামী ধারার দলগুলো ঐক্যবদ্ধ না হয়ে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে রেখেছে। অথচ ‘ইসলাম বিদ্বেষী অপপ্রচার’ ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে ইসলামী ধারার দলগুলো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে ইসলামী ধারার দলগুলো যদি নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে আগামী নির্বাচনের ভোটের ফলাফল নির্ধারণে তারাই হয়ে উঠবেন প্রধান নিয়ামক। সম্প্রতি সময়ে হেফাজতের কিছু দাবি সরকারের মেনে নিতে বাধ্য হওয়া এবং নব্বইয়ের দশকের প্রথমার্ধে বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে দেশছাড়া করতে ইসলামী দলগুলোই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ফলে সময়ের দাবি হয়ে গেছে ইসলামী ধারার দলগুলোর ঐক্য।
জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সাধারণ ভোটাররা ভোট দিলেও সবার স্বাতন্ত্র্য, জাতীয়তাবোধ, আদর্শ, ইতিহাস, ঐতিহ্য, তাহজিব-তমদ্দুন, মূল্যবোধে স্বাতন্ত্র্য সংস্কৃতির অভিন্ন চেতনা রয়েছে। হিন্দুত্ববাদের ব্যাপক প্রচারণায়ও দেশের সাধারণ মানুষ প্রভাবিত হয় না। এ বাস্তবতা বুঝতে পেরেই আওয়ামী লীগ হেফাজতের সঙ্গে সুসম্পর্ক করেছে। ‘হেফাজত ঘনিষ্ঠতা’ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভোটের রাজনীতির অংশ এবং এটি রাজনৈতিক স্বার্থেই হয়েছে এমন অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। এই সমালোচনার জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বাস্তবতা বিবেচনা করে রাজনীতি করা হচ্ছে। দেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক যে বাস্তবতা এবং জাতির যে অনুভূতি, তাতে আমরা যারা রাজনীতি করি, তাদের সেই বাস্তবতা নিয়ে এগোতে হবে।’ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামÐলীর সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘নির্বাচনের আগে সব দলই কৌশল অবলম্বন করে’। তুখোড় নেতাদের এসব উপলব্ধিতে প্রকাশ পায় দেশে ভোটের রাজনীতিতে ইসলামী ধারার দলগুলোর ভোট ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্ন হলো ইসলামী ধারার দলগুলো নিজেদের গুরুত্ব বুঝে ‘ঐক্যবদ্ধ হবেন’ নাকি নিজেদের মতো করে ‘যার মন যে পথে যায়’ নীতিতে চলবেন।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতিতে সক্রিয় ইসলামী দল, সংগঠন ও ব্যক্তিত্বের মধ্যে ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন সংশ্লিষ্ট সকলেই। তাঁরা মনে করেন, অতীতের যে কোন সময়ের চাইতে এখন ইসলামী দলগুলোর ঐক্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কারণ ইঙ্গ-মার্কিন-ইহুদী-ব্রাহ্মণ্যবাদী চক্রান্তে ইসলামী দলগুলো নানা সংকটের মধ্যে নিক্ষিপ্ত। দেশ-জাতি ও জনগণের স্বতন্ত্র জাতীয়তাবোধ, আদর্শ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, রীতি-নীতি, তাহযিব-তমদ্দুন, ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধ এবং সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের চেতনাকে ধ্বংস করার জন্যে হেন অপপ্রয়াস নেই, যা করা হচ্ছে না। সম্প্রতি গৃহীত কয়েকটি ইসলাম বিরোধী পদক্ষেপের পরিস্থিতিতে এবং আগামী নির্বাচনের প্রেক্ষিতে ইসলামী দলগুলোকে আরো কাছাকাছি হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে তারা মনে করেন। যেমন সুপ্রীম কোর্টের সামনে গ্রীক দেবী থেমিসের মূর্তি স্থাপন, সড়ক থেকে হাফেজ্জী হুজুর ও মুফতি আমিমুল এহছান মুজাদ্দেদীর নাম অপসারণ এবং সর্বশেষ প্রয়োজনে মসজিদ-মন্দির, মাদ্রাসা প্রভৃতি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণের ক্ষমতা সম্বলিত আইন প্রণয়ণের উদ্যোগ প্রভৃতি। এহেন পরিস্থিতিতে সকল ইসলামী দল, সংগঠন, উলামায়ে কেরাম ও ইসলাম মনস্ক লোকদের সমন্বয়ে একটি সংগঠিত, সমন্বিত ও ইসলামী ঐক্য গড়ে তোলা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বলে ইসলামী দলগুলোর নেতারা মনে করছেন। তাদের বর্তমান ভাবনা হচ্ছে, জাতীয় রাজনীতির সহায়ক শক্তি নয় বরং নিয়ামক শক্তি রূপে আবির্ভূত হওয়া।
উল্লেখ্য, ১৯৯১ সনের নির্বাচনকে সামনে রেখে ও অনুরুপ উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ফলে ১৯৯০ সনের ২২ ডিসেম্বর ৬ টি ইসলামী রাজনেতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত হয় ইসলামী ঐক্যজোট। দলগুলো হচ্ছে---মাওলানা আশরাফ আলী ধরমন্ডলির নেতৃত্বাধীন নেজামে ইসলাম পার্টি, শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিশ (ঐক্যবদ্ধ), সৈয়দ মাওলানা ফজলুল করিমের নেতৃত্বাধীন (পীর সাহেব চরমোনাই) ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন(ইসলামী আন্দোলন), শাহ আহমদ উল্লাহ আশরাফের নেতৃত্বাধীন খেলাফত আন্দোলন, মাওলানা আবদুল করিম শায়খে কৌড়িয়ার নেতৃত্বাধীন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও পীর মোহসেন উদ্দিন দুদু মিয়ার নেতৃত্বাধীন ফারায়েজি আন্দোলন। মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী মোর্চা ১৯৭৭ সনে ইসলামী ঐক্যজোটে যোগ দেয়।
২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে নিবন্ধন প্রাপ্তির পর জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস ও খেলাফত আন্দোলন ইসলামী ঐক্যজোট থেকে আলাদা হয়ে যায়। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামও খেলাফত মজলিস (ইসহাক-কাদের) ২০-দলীয় জোটে স্বতন্ত্রভাবে সদস্য হয়। ১৯৯৯ সনে ৪-দলীয় জোটে যোগদানকে কেন্দ্র করে ইসলামী আন্দোলন ইসলামী ঐক্যজোটের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। ফারায়েজি জামায়াত আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামী ঐক্যজোট ত্যাগ না করলেও জোটের কার্যক্রমে সক্রিয় নয়। উল্লিখিত ৬টি ইসলামী রাজনৈতিক দলের মধ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামও খেলাফত মজলিস (ইসহাক-কাদের) এখনো ২০-দলীয় জোটে আছে। অন্যান্য দলগুলো কোন জোটে নেই। ইসলামী ঐক্যজোট গত বছর ৭ জানুয়ারী আনুষ্ঠানিকভাবে ২০-দলীয় জোট ত্যাগ করে। ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস (শায়খুল হাদিস) ও খেলাফত আন্দোলন (আতাউল্লাহ-মিয়াজী) কোন জোটেই নেই। এ ৬টি দলের বাইরে রাজনীতিতে সক্রিয় ইসলামী ঐক্যআন্দোলন ও কোন জোটে নেই।
এসব দল নিয়ে নতুন কোন জোট নয়, বরং এসব দলের সমন্বয়ে একটি নির্বাচনী ঐক্য করা যায় কি না, এব্যাপারে সম্ভ্যাবতা যাচাই করে দেখছেন সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ। সমমনা অন্যান্য দলের সাথে যোগাযোগ করার জন্যে অতিসম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইসলামী ঐক্যজোটের মজলিশে শুরার বৈঠকে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ৭-সদস্য বিশিষ্টি একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
যেসব ইসলামী দল অতীতে বিভিন্ন জোটের রজনীতিতে সক্রিয় ছিল, এসব দলের নেতারা এখন বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখছেন, ইসলাম বহির্ভূত দলগুলোর সাথে জোটের লাভ-ক্ষতির বিষয়টি। তাঁদের ভাবনা হচ্ছে, জাতীয় রাজনীতির সহায়ক শক্তি নয়, বরং নিয়ামক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার প্রচেষ্টা চালানো।
চলমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের বিভিন্ন ধারা-উপধারা এবং নানা তাত্তি¡ক ও বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে এসব ধারা উপধারার মধ্যেকার দ্ব›দ্ব-কলহ নিরসন করে উলামা-মাশায়েখ ও দ্বীনদার বুদ্ধিজীবীদের একত্রিত রাখার প্রয়োজনীয়তা সকলেই অনুভব করছেন। তাই এ দায়িত্ব সম্পাদনের কাজকে ঐতিহাসিক কর্তব্য মনে করছেন সকল ইসলামী দল, সংগঠন ও উলামায়ে কেরাম। এবিষয়ে অনেকেরই মধ্যেই নমনীয় মনোভাব লক্ষ্যণীয়। নেতৃবৃন্দের মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধতার অনিবার্যতা দিন দিন ব্যাপক ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। তাঁরা বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের দিক-নির্দেশনা সন্ধান করছেন সুষ্পষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে এবং সকল ইসলামী দল, সংগঠন ও উলামায়ে কেরামের স্বাতন্ত্র্য নির্বিশেষে ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। কারণ ঐক্য প্রতিষ্ঠা ছাড়া আন্দোলনকে প্রাণবন্ত করার কোনও বিকল্প নেই।
পর্যায়ক্রমিক শাসনামলের দুর্নীতি, ব্যর্থতা, অযোগ্যতা, অদক্ষতা ও দুঃশাসনে সৃষ্ট ধসে জনগণের তিক্ত অভিজ্ঞতা এবং তাদের কর্মকান্ডে জনগণের মোহমুক্তি ও অনীহা মনোভাব রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ইসলামী ধারার ঐক্যকে অনিবার্য করে তুলেছে। ইসলাম মনস্ক লোকদের ঐক্যবদ্ধতার প্রয়োজনীয়তার আরো কারণ হচ্ছে, ইসলাম মুসলমান ও ইসলামের অনুশাসনের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগের সঙ্ঘবদ্ধ মোকাবেলা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।