Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্ষতি ৭২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় পণ্যাগারে অগ্নিকান্ড

| প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এমআইএস ইউনিটের জন্য ক্রয়কৃত ২০০টি ট্যাব পুড়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন
মাঠ পর্যায়ের সেবা কার্যক্রমে প্রভাব পড়বে না -কাজী মোস্তফা সারওয়ার
হাসান সোহেল : পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় পণ্যাগারে অগ্নিকান্ডে ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণ করেছে ইনভেন্টরি কমিটি। অধিদপ্তর গঠিত কমিটি সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করে ৭২ কোটি ৬৬ লাখ ১৪ হাজার ৬৪৪ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। এদিকে পণ্যগারের সফটওয়্যারে না থাকা স্বত্তেও এমআইএস ইউনিটের জন্য ক্রয়কৃত ২০০টি ট্যাব পুরে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক কোন তালিকায়ই ট্যাবের তথ্য পাওয়া যায়নি। অথচ অগ্নিকান্ডের ১০দিন পরে বিষয়টি ক্ষয়-ক্ষতিতে যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া এ ক্ষয়ক্ষতির প্রভাব মাঠ পর্যায়ের পরিবার পরিকল্পনা সেবা কার্যক্রমে কোন প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সারওয়ার।
প্রতিদেনের তথ্য মতে- দুর্ঘটনা ঘটার পূর্বের হিসেব (৬ এপ্রিল) অনুযায়ী ডবিøআইএমএস-এ সংরক্ষিত ২১৭টি নন জিরো আইটেম এবং ১৯৯টি জিরো আইটেমসহ মোট ৪১৬টি পণ্যের তালিকা পাওয়া যায়। তদন্ত কমিটি একাধিকবার সরেজমিনে তদন্ত করে। তাদের পর্যবেক্ষণে ৮৫ প্রকার পণ্য সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য ৫২ কোটি ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৯০৫ টাকা। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ২৯ প্রকার পণ্যের নিরূপিত আর্থিক মূল্য ২১ কোটি ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৫৮৯ টাকা, অগ্নিকান্ডে পুড়ে যাওয়া ভবনের ক্ষতির পরিমাণ ৭৪ লাখ ১৮ হাজার ৮৯৯ টাকা এবং অগ্নিকান্ডে পুড়ে যাওয়া ভবনের অভ্যন্তরে ব্যবহৃত আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার ও অন্যান্য মালামালের আনুমানিক আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ৫২ লাখ ৭১ হাজার ২৫০ টাকা।
এদিকে পণ্যাগারে কম্পিউটারের ক্ষতি নিয়ে ইনভেন্টরি কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে- প্রাথমিক যাচাইকালে পণ্যাগারে সফটওয়্যার হতে প্রাপ্ত ৬ এপ্রিলের সর্বশেষ এন্ট্রি অনুযায়ি পণ্যাগারে মোট ২১৭ প্রকার পণ্য সংরক্ষিত থাকার তথ্য পান। কিন্তু গত ১৮ এপ্রিল পরিচালক ড্রাগস এন্ড স্টোরস জানায় যে, পণ্যাগারে এমআইএস ইউনিটের জন্য ক্রয়কৃত ২০০টি ট্যাবলেট পিসি (ফ্লোরা লিমিটেড কোম্পানী সরবরাহকৃত, কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ নং জিএফপি/এমআইএস-৩১/১৫ ক্ষতিগ্রস্ত গুদামে সংরক্ষিত ছিল বলে জানায়। যা অগ্নিকান্ডে ধ্বংস হয়েছে। একই সঙ্গে ট্যাবের বিষয়টি সফটওয়্যারে এন্ট্রি হয়নি। এসব ট্যাবের ক্রয়মূল্য ধরা হয়েছে ৫২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। তাই ট্যাবসহ পণ্যাগারে মোট ২১৮টি পণ্য ধরা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
ট্যাব কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তা তালিকায় কিভাবে এসেছে জানতে চাইলে কাজী মোস্তফা সারওয়ার বলেন, বিষয়টি সবার কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়সহ অধিদপ্তরে আলোচনা হয়েছে। সঠিক সময়ে ট্যাবগুলো কেন মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়নি। একই সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতিতে কিভাবে এসেছে এ নিয়ে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। খুব শিগগিরই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দিবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।      
এছাড়া অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মালামালের মধ্যে ৫ প্রকার জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ছিল। যার মধ্যে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইনজেক্টবলস ডিপো প্রোভেরা যার মোট পরিমাণ ৫২ লাখ ৫০হাজার ৯০০ ভায়াল, যার ক্রয় মূল্য ১৯ কোটি ৯০ লাখ ৯ হাজার টাকা। একই সঙ্গে আইইউডি যার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৯৪ হাজার ৪০০ পিস, যার ক্রয় মূল্য ৯১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। কনডম ও খাবার বড়ি স্টকে উল্লেখ থাকলেও তা জায়গার অভাবে কেন্দ্রীয় পণ্যগারের পরিবর্তে সরবরাহকারীর গুদামে সংরক্ষিত ছিল বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। কনডম ছিলো ৮ লাখ ৭৪ হাজার ৮০০ পিস এবং খাবার বড়ি ১ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ৭৬০ চক্র। এছাড়া মা, শিশু, এ্যাডোলেসেন্ট হেল্থ এবং পরিবার পরিকল্পনায় ব্যবহৃত অনেক ওষুধসহ ১৫ প্রকার ৭০৭টি নথি এবং আইসিআরসহ বিভিন্ন প্রকার রেজিস্টার সংরক্ষিত ছিল যা ধ্বংস হয়েছে।
কমিটির আহবায়ক হিসেবে ছিলেন- পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (এমসিএইচ সার্ভিসেস) ডা. মোহাম্মদ শরীফ। সদস্য হিসেবে ছিলেন- স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঢাকা সিটি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন, অধিদপ্তরের এমআইএস প্রোগ্রাম ম্যানেজার মেহবুব মোর্শেদ, অধিদপ্তরে পরিকল্পনা ইউনিটের সহকারী প্রধান মো. হুমায়ুন কবির, অধিদপ্তরের সিসিএসডিপি উপ-পরিচালক ডা. মো. মাহমুদুর রহমান এবং অধিদপ্তরের উপকরণ ও সরবরাহ ইউনিটের উপ-পরিচালক (বৈদশিক সংগ্রহ) সাবিনা পারভীন।  
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সারওয়ার ইনকিলাবকে বলেন, ক্ষয়ক্ষতি পোষাতে ডেভলপমেন্ট পার্টনারদের সাথে আলোচনা হয়েছে। ইউএনএফপিএ ও ইউএসআইডি জন্মনিরোধক ইনজেকশন দিবে এবং ওষুধ শিল্প সমিতি মেডিসিন দিবে। একই সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয় বিশেষ বরাদ্দের ব্যবস্থা করবে। সার্বিক বিষয়টি সচিব এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রী দেখভাল করছেন।
কাজী মোস্তফা সারওয়ার বলেন, সারাদেশে পরিবার পরিকল্পণা সেবার সার্বিক কার্যক্রমে এ ঘটনা কোন প্রভাব ফেলবে না। কারণ জন্মনিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য ওষুধের আরও ৩/৪মাসের মজুদ রয়েছে। মজুদ থেকে উপজেলা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে সমন্বয় করা হবে। এক্ষেত্রে সাপ্লাই চেইন মনিটরিং কমিটি এই সমন্বয়ের কাজ করছে। যাতে কোথাও শর্ট না পড়ে। তিনি বলেন, এই সময়ের মধ্যে ওষুধ পেয়ে যাবো। মাঠ পর্যায়ে কোন ধরণের সমস্যা হবে না। কারণ কেন্দ্রীয়ভাবে ছাড়াও ২১টি আঞ্চলিক, ৩৮টি উপজেলা কেন্দ্র এবং সার্ভিস ডেলিভারি কেন্দ্রে (মাঠ কর্মীদের) যে ওষুধ ও দ্রব্যসামগ্রী মজুদ রয়েছে সেখান থেকে সমন্বয় করা হবে। তিনি আরও বলেন, অপারেশন প্ল্যান এ মাসেই পাশ হবে। জুন মাসের মধ্যে ওষুধসহ অন্যান্য দ্রব্য সামগ্রী ক্রয় করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, গত ৮ এপ্রিল রাতে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাখালীস্থ কেন্দ্রীয় পণ্যাগারে আগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। পরে গত ৯ এপ্রিল ঘটনা তদন্তে অধিদপ্তর ৬ সদস্য বিশিষ্ট ইনভেন্টরি কমিটি গঠন করে। এছাড়াও ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ফায়ার সার্ভিস পৃথক কমিটি গঠন করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনও ইতোমধ্যে জমা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অগ্নিকান্ড

১১ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ