Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলাম শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে

উপ-সম্পাদকীয়

| প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আফতাব চৌধুরী : মানুষের এ শ্রেষ্ঠত্বের প্রধান কারণ তার আত্মসচেতনতা যা অন্যান্য জীবের নেই। আত্মসচেতনতার মূল আধার মানুষের মন। আর মনের বিকাশ হয় জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে, যার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষা। শিক্ষার মাধ্যমেই মনুষ্যত্বের পূর্ণবিকাশ সাধিত হয়। সুস্থ পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন গঠনের জন্য প্রত্যেক মানুষের মধ্যে নৈতিকতাবোধ জাগ্রত হওয়া একান্ত প্রয়োজন। উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণই এ লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ। তাই পবিত্র ইসলাম ধর্মে শিক্ষার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ধূলির ধরায় মহান আল্লাহ্ মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে সৃষ্টি করেছেন এবং আদি মানব হযরত আদমকে সৃষ্টি করে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিয়েছেন (২ঃ৩০,৩১)। পবিত্র কোরআনের সর্বপ্রথম প্রত্যাদেশ ‘পাঠ কর, তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে রক্তপিন্ড হতে। পাঠ কর; আর তোমার প্রতিপালক অতিদানশীল। তিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে,যা সে জানত না (৯৬ঃ ১, ২, ৩, ৪, ৫)।’ এভাবে মহান আল্লাহ্ মানুষকে সর্বাগ্রে লেখাপড়া শেখার নির্দেশ দিয়েছেন।
শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত হয় জ্ঞান। জ্ঞানের পরশে আত্মা আলোকিত হয়, মন সবল হয়। চিন্তাধারা তীক্ষè হয়, ন্যায়-অন্যায়,ভালোমন্দ বোধ জাগ্রত হয়, সুন্দর ও অসুন্দরের মধ্যে পার্থক করার ক্ষমতা আসে। জ্ঞান ব্যতিত আল্লাহর উপাসনা চলে না, জ্ঞান ছাড়া ধর্মকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা যায় না। তাই বিশ্বনবী তাঁর অনুসারীদের জ্ঞানার্জনের জন্য কঠোর সাধনায় ব্রতী হতে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘‘শৈশব থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জ্ঞান অন্বেষণ কর।’’ তিনি তাঁর অনেক বাণীতে জ্ঞান সাধনার জন্য মানুষ জাতিকে অনুপ্রাণিত করেছেন। যেমন, মহানবীর ঘোষণা ‘যে জ্ঞানান্বেষণ করে সে আল্লাহকে অন্বেষণ করে।’ ‘যে ব্যক্তি জ্ঞানান্বেষণে বহির্গত হয় সে গৃহে প্রত্যাবর্তন করা পর্যন্ত আল্লহর রাস্তায় থাকে।’ জ্ঞান শিক্ষার জন্য এর চেয়ে বেশি মর্যাদা আর কী হতে পারে?
ক্বোরআন, হাদিস তথা দ্বীনি শিক্ষা ইসলামী জীবন ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। তাই রসুল (সঃ) বলেছেন, ‘রাত্রে এক ঘন্টা জ্ঞানানুশীলন করা সমস্ত রাত্রি জেগে উপাসনা করা অপেক্ষা উত্তম।’ ‘জ্ঞান চর্চা আল্লাহর কাছে নামাজ, রোজা, হজ্ব ও জেহাদ অপেক্ষা অধিকতর পূণ্যকর কাজ।’ জ্ঞান সাধকের যথোপযুক্ত মর্যাদা প্রদান করতে মহানবীর দীপ্তকণ্ঠে ঘোষণা ‘জ্ঞান সাধকের দোয়াতের কালি শহীদের রক্তের চেয়ে পবিত্র।’ ‘নক্ষত্র মন্ডলীর ওপর পূর্ণচন্দ্রের যেরূপ শ্রেষ্ঠত্ব, সমস্ত উপাসক মন্ডলীর ওপর জ্ঞানীর শ্রেষ্ঠত্বও তদরূপ।’
ইসলাম শুধুমাত্র একটি আচার সর্বস্ব ধর্ম নয় বরং এক সুসংহত ও মহান জীবনবিধান। তাই ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি জাগতিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে ইসলাম। মহানবীর ঘোষণা ‘ ইহকাল পরকালের শস্যক্ষেত্র।’ এই শস্যক্ষেত্রের সদ্ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত জাগতিক জ্ঞান আহরণ অত্যাবশ্যক। আত্মপরিচয় ও অস্তিত্ব রক্ষায় ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব যেমন অপরিসীম তেমন উন্নত ও মর্যাদা সম্পন্ন নাগরিক জীবনের জন্য সাধারণ শিক্ষা ক্ষেত্রে ও উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা গ্রহণ অপরিহার্য। এ সম্পর্কে আল্লাহ রসুলের সেই মহাবাণী অতিশয় প্রাসঙ্গিক-‘জ্ঞান অন্বেষণ কর যদি তার জন্য সুদূর চীন দেশে যেতে হয়।’ অর্থাৎ জ্ঞান-বিজ্ঞানের উচ্চতর পঠন-পাঠনের জন্য প্রয়োজনে বিদেশ ভ্রমন করতেও নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্বনবী।
যে শিক্ষায় মানুষের কোনও কল্যান সাধিত হয় না, যে শিক্ষায় মানুষ পথভ্রষ্ট হয় সে শিক্ষা ইমলামের শিক্ষা নয়। তাই মহানবী (সঃ) সাবধান বাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘ কুলেখক কুকর্মীর তুল্য। শিক্ষিত মানুষের মধ্যে যারা অসৎ মানব সমাজের মধ্যে তারা সর্বাপেক্ষা অধম।’ এভাবে পবিত্র কোরাআন ও হাদিসের বিভিন্ন বাণীতে মানবজাতিকে শিক্ষার মাধ্যমে উন্নত জীবন গড়ে তুলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইসলামি জীবনদর্শনে নারী জাতিকে কখনও বৈষম্যমূলক দৃষ্টিতে দেখা হয়নি। বরং সর্বত্র নারী ও পুরুষের ভারসাম্য রাখা হয়েছে। মহাগ্রন্থ ক্বোরআন স্বামী-স্ত্রীকে পরস্পরের সমতুল্য বলে ঘোষণা করেছে। বলেছে ‘তোমরা একে অপরের ভূষণ স্বরূপ।’ অধিকন্তু স্ত্রীর সম্মানে বিশ্বনবীর বাণী ‘তোমাদের মধ্যে তারাই সর্বোত্তম যারা তাদের নিজ নিজ স্ত্রীর কাছে সর্বোত্তম।’ আবার মায়ের মর্যাদা প্রদানে রসুল ঘোষণা করেছেন, ‘তোমাদের বেহেস্ত তোমাদের নিজ নিজ মায়ের পদতলে।’ নরনারীর পারস্পরিক অবস্থান সম্পর্কে-ঐশী গ্রন্থ ক্বোরআন-এ অনেক বাণী পাওয়া যায়। যেমন (১) ‘তিনি সৃষ্টি করেছেন যুগল পুরুষ ও নারী স্থলিত শুক্রবিন্দু থেকে’ (৫৩ঃ৪৫,৪৬)। (২) ‘বিশ্বাসী হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎ কর্ম করবে আমি তাকে নিশ্চয় আনন্দপূর্ণ জীবন দান করব আর তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার দান করব’ (১৬ঃ৯৭)। (৩) ‘আমি তোমাদের মধ্যে কোন কর্মনিষ্ঠ পুরুষের বা নারীর কর্ম বিফল করি না। তোমরা পরস্পর সমান’ (৩ঃ১৯৫)। (৪) ‘পুরুষ যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য আর নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য’ (৩৯)। (৫) ‘বিশ্বাসী নরনারী একে অপরের বন্ধু (৯ঃ৭১)। (৬) ‘আল্লাহ বিশ্বাসী নর ও নারীকে জান্নাতের প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন’ (৯ঃ৭২)। (৭) ‘হে মানবজাতি, আমি তোমাদের এক পুরুষ ও নারী হতে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে যাতে তোমরা একে অপরকে চিনতে পার’ (৪৯ঃ১৩)।
পবিত্র ক্বোরআনে বার বার মানুষকে পড়াশোনা করতে, জ্ঞানার্জনে ব্রতী হয়ে আল্লাহর সৃষ্টিকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে বলা হয়েছে। কিন্তু কোথাও জ্ঞান শিক্ষার যোগ্যতা এককভাবে পুরুষদের দেয়া হয়নি। আর সে জন্য মহানবী (দঃ) দ্বিধাহীনভাবে ঘোষণা করেছেন ‘প্রত্যেক মুসলিম নর ও নারীর জন্য জ্ঞানার্জন করা ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য। তাঁর অনুসারীরা মূর্খ হোক এমন কামনা করেন নি আল্লাহর রসুল। তাই তিনি সাবধান করে বলেছিলেন, ‘মূর্খতা অপেক্ষা বড় দারিদ্র আর নেই।’ ‘জ্ঞানীর নিদ্রা মূর্খের উপাসনা অপেক্ষা উত্তম।’ স¤প্রতি আমাদের দেশে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। অথচ ১৪০০ বছর আগে আরবের মাটিতে মহানবী নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শিক্ষা গ্রহণকে ফরজ বলে ঘোষণা করেছেন ও শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন। ইসলামের প্রাথমিক যুগের বিদূষি নারীরা শিক্ষাক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। হযরত মোহাম্মদ (দঃ) কে শিক্ষানুরাগী মহিলারা একবার বললেন, ‘আপনি জ্ঞানশিক্ষা দেয়ার জন্য সবসময় পুরুষদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকেন। তাই আমাদের জন্য একদিন নির্দিষ্ট করুন।’ মহানবী তদনুসারে তাদের শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করেছিলেন। এমনকি তিনি প্রতিনিধি পাঠিয়েও নারীদের শিক্ষা দিতেন। ফলস্বরূপ অনেক মহিলা পন্ডিতের উদয় হয়েছিল, যারা ইসলামের মহান শিক্ষা প্রচারে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, হযরত আয়েশা সাফিয়া, উম্মে সালমা, ফাতিয়া বিনতে কায়েস, সৈয়িদা নাফিসা, উম্মে আদদারদা, আয়শা বিনতে সাদ, জয়নাব বিনতে সালমা, রসুলের কন্যা ফাতেমা জোহরা, উম্মে আতিয়া, শিমা, সাকিনা, উম্মে হাবিবা, উম্মে সারিক, উম্মে ইউসুফ প্রমুখ। ইসলামী দর্শন ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন তখনকার মহিলারা। এমনকি চিকিৎসা বিজ্ঞানেও মহিলাদের অসামান্য অবদান ছিল। খলিফাদের শাসনকালেও নারীরা শিক্ষাদীক্ষা, সাহিত্য, কাব্যচর্চা ও সমাজসেবায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে ইসলামী দর্শন নারী শিক্ষার উৎসাহদাতা ও পথ প্রদর্শক। ইসলামে নারী শিক্ষার সুযোগ সীমিত এমন বহুল প্রচারিত ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। মানবজাতির অর্ধাংশ নারী জাতিকে অজ্ঞানতার অন্ধকারে রেখে কোন জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। কারণ নারী ও পুরুষের সমন্বয়ে গঠিত দ্বি-চক্র বিশিষ্ট এ মানব সমাজের এক চাকা দুর্বল হলে তার গতি শ্লথ হতে বাধ্য। নিজেদের অজ্ঞানতা হেতু এ উপমহাদেশের মুসলিম সমাজ ইসলামের প্রাথমিক যুগের নারীদের শিক্ষাক্ষেত্রে অংশগ্রহণের উজ্জ্বল ইতিহাস বিস্মৃত হয়ে যান। তাই এদেশে নারী শিক্ষা বলতে অর্থ না বুঝে তোতা পাখির মতো ক্বোরআন পাঠ-ই মুসলিম নারীর শিক্ষার মানদন্ড হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষভাবে অযোগ্য সমাজপতিদের দূরদর্শিতার অভাবে এদেশে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে ইসলামী আদর্শের যথোপযুক্ত মূল্যায়ন হয়নি। ফলস্বরূপ অগণিত মুসলিম মহিলা অজ্ঞানতার নাগপাশে আবদ্ধ হয়ে এক করুণ জীবন যাপন করছেন এবং সমগ্র সমাজকে পশ্চাৎ দিকে টেনে ধরে রেখেছেন। এরা সমাজের নিকট এমন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন যে এদের সঙ্গে নেয়া যাচ্ছে না, ফেলে দেয়াও যাচ্ছে না। আধুনিক যুগে মানুষের মেধা ও কর্মক্ষমতাকে সম্পদ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অতএব নারীদের অশিক্ষিত রাখা নিঃসন্দেহে মানব সম্পদের অপচয়।
নারী পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তাই তার জন্য যথোপযুক্ত শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করা অত্যাবশ্যক। অথচ আল্লাহর দাসীদের জ্ঞান শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রেখে যুগযুগ ধরে অজ্ঞানতার অন্ধকারে রাখা হয়েছে, যা এক ধরনের জাতীয় অপরাধ বললে বোধ হয় ভুল হবে না। উপযুক্ত মানুষ হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা নারীর ন্যায্য অধিকার, যা ইসলামী পরিভাষায় ‘হক্কুল এবাদ’ এর পর্যায়ে ধরে নেয়া সমীচীন বলে মনে হয়। সুস্থ মাতৃত্ব, সন্তান পালন, সন্তানের শিক্ষা, পরিবার পরিচালনার জন্য নারীকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতেও শিক্ষার প্রয়োজন অনস্বীকার্য। মুসলিম সমাজেও মহিলা শিক্ষক, অধ্যাপক, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, বাস্তুকার, বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক প্রযুক্তিবিদ ইত্যাদির প্রয়োজনীয়তা কি অস্বীকার করা যায়? সুতরাং যতদূর সম্ভব ইসলামী জীবনবিধান প্রদত্ত সীমারেখা ও অনুশাসন মেনে নারীর জন্য উপযুক্ত শিক্ষা তথা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত। ধর্মীয় শিক্ষায় উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষালাভের জন্য ক্বোরআন তফসির, হাদিস, ফেক্বাহ ইত্যাদি শাখায় তাদের জন্য পঠন-পাঠনের বিশেষ ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন। এমনকি সুস্থ মাতৃত্বের জন্য মেয়েদের পৃথক শিক্ষারও প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের দেশে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে নারীর উপস্থিতি অতিশয় নগন্য। মুসলিম নারীর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মীয় শিক্ষার বিশেষ কোন উদ্যোগ সরকারী পর্যায়ে নেই বললেও চলে। শুধুমাত্র শৈশব তথা বাল্যাবস্থায় মসজিদ-মক্তবে সামান্য প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। তাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপরিকল্পিত ও অসংগঠিত। কিন্তু পুরুষদের জন্য যথেষ্ট সংখ্যক ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি, বেসরকারী উভয় পর্যায়ে রয়েছে। তাই ধর্মীয় শিক্ষায় সুশিক্ষিত নারী সমাজ গঠনের জন্য সরকারী পর্যায়ে মহিলা মাদ্রাসা স্থাপন একান্ত আবশ্যক। এমনকি সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত মহিলাদের জন্য ইসলামী শিক্ষার সুযোগ করে দিতে বিশেষ পাঠক্রম চালু করা যেতে পারে।
নারী শিক্ষার প্রধান বাধা হল উপযুক্ত পরিবেশের অভাব। সত্যি নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে কোন ধরনের শিক্ষাকে ইসলাম সমর্থন করে না। কিন্তু পরিবেশের দোহাই দিয়ে জাতির অর্ধাংশকে অজ্ঞানতার অন্ধকারে রাখা আত্মঘাতী বলা যায়। পরিবেশ তো আপনা থেকে সৃষ্টি হয় না। পরিবেশ গড়তে হয়। পবিত্র ক্বোরআনের ঘোষণা-‘যদি কোন স¤প্রদায় নিজের অবস্থার পরিবর্তন না করে তবে আল্লাহ এমন নন যে তিনি তাদের যে সম্পদ দান করেন তা পরিবর্তন করবেন’ (৮ঃ৫৩)।
অনেকে ভাবেন পর্দাপ্রথা নারী শিক্ষা, নারী প্রগতির প্রধান অন্তরায়। কিন্তু ইসলামের পর্দা নারীর মান, সম্মান, সম্ভ্রম ও ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। পর্দাপ্রথার দোহাই দিয়ে নারীকে গৃহবন্দি রেখে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করা, ইসলামের অনিন্দ্যসুন্দর জীবন বিধান অবজ্ঞা করা ছাড়া কিছু নয়। নারীদের মূর্খ রেখে মুসলমান স¤প্রদায়কে দরিদ্র, কুসংস্কারাছন্ন অনগ্রসর তথা অনুন্নত শ্রেণীতে পরিণত করার অধিকার সমাজ কর্তাদের দেয়নি ইসলাম। তাই বিকৃত পর্দাপ্রথার অবসান ঘটিয়ে নারীসমাজে ক্বোরআন নির্দেশিত পর্দার প্রচলন অত্যাবশ্যক।
দ্রæত পরিবর্তনশীল আধুনিক সমাজে মুসলিম নারীদের চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে। তাই সমাজকর্তাদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে মুসলিম নারীরাও আজ স্কুল, কলেজ তথা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ করছে। পুরুষরাও প্রয়োজনানুসারে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ শিক্ষার অভাবহেতু সমাজে আরেক নতুন সংকট সৃষ্টি হতে চলেছে। কারণ আদর্শহীন এবং নৈতিকতা বর্জিত শিক্ষিত পুরুষের মতো শিক্ষিত নারীও সমাজের কাম্য নয়। জনৈক শিক্ষা-বিশেষজ্ঞদের স্পষ্ট বক্তব্য-‘কুশিক্ষিত হওয়ার চেয়ে অশিক্ষিত থাকাই ভাল।’ তাই সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামী মূল্যবোধ শিক্ষায় মুসলিম নারীদের উদ্বুদ্ধ করা ও এর জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া আজ সময়ের আহ্বান বলা যায়।
ইহকাল ও পরকালের সুপথ রচনা করার জন্য সুশিক্ষা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তাই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানবজাতির জন্য জীবনের সর্বক্ষেত্রে শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়েছে ইসলাম। ১৪০০ বছর পূর্বে প্রচার করা মহানবীর মহান বাণীসমূহ আজো সমভাবে প্রাসঙ্গিক। বিশ্বনবী হযরত মুহম্মদের (দঃ) বৈপ্লবিক উপদেশ: ‘রোগীর সেবার জন্য এক মাইল যাও, দুই ব্যক্তির বিবাদ মিমাংসা করার জন্য দুই মাইল যাও, তোমার এক বিশ্বাসী ভাইয়ের সাক্ষাতের জন্য তিন মাইল যাও এবং জ্ঞানের একটি কথা শেখার জন্য ছয় মাইল যাও।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট



 

Show all comments
  • Md. Abu sayed ১৩ মে, ২০১৭, ১০:২২ এএম says : 0
    বিসমিল্লাহ হির রাহমানির রাহীম। সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ রাব্বুলআলামীনের দরবারে যিনি আমাদেরকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে ,মুসলমান হিসেবে,মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর উম্মত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। আজকের কলামটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো ,আলহামদুলিল্লাহ। আশা করি এইরকম কলাম আরো লিখবেন। মহান আল্লাহ আল্লাহ রাব্বুলআলামীন আপনাকে যেন নেক হায়াত দেন করেন আমীন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ