Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কেসিসি’র অধিকাংশ ওয়ার্ড সচিব বিকল্প পেশায় ঝুঁকছেন

| প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম


জনসেবায় গাফিলতির অভিযোগ স্থানীয়দের
আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : নাগরিক সেবায় ঢিলেমি করে ব্যক্তিগত ব্যবসা ও আয়ের বিকল্প পথে ঝুকছেন খুলনা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড অধিকাংশ সচিবরা। আইনজীবী, প্রথম শ্রেণির ঠিকাদারী, জমির দালালী, পোল্ট্রি ফার্ম থেকে শুরু করে ডিম বিক্রেতার মতো বিকল্প পেশায় ঝুঁকছেন তারা। সম্মানজনক বেতন-ভাতা পাওয়ার পরও ওয়ার্ড সচিবদের ব্যক্তিগত ব্যবসার কারণে নাগরিক সেবা বঞ্চিত হচ্ছে নগরবাসী। ভ‚মিষ্ঠ থেকে মৃত্যু সনদ পর্যন্ত নগরবাসীর সমস্ত প্রকার নাগরিক সেবার কেন্দ্রবিন্দু ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস। আর কাউন্সিলর কার্যালয়টি’র মূল সঞ্চালক ওয়ার্ড সচিব। তাই সচিবদের দায়িত্বে অবহেলায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সম্পর্কেও বিরূপ ধারণা জন্মাচ্ছে হয়রানির শিকার ওয়ার্ডবাসীর।
কেসিসি’র হিসাব শাখার সূত্রমতে, ওয়ার্ড সচিবদের মূল বেতন (মাসিক) ১৭ হাজার ১০০টাকা। ভাতাদি যোগ করে মোট বেতন দাড়ায় প্রায় ২৫ হাজার টাকা। কেসিসি’র নাগরিক সনদের বর্ণনা মতে, সর্বদাই নাগরিক সেবা দ্বোর গোড়ায় পৌঁছে দিতে দায়বদ্ধ প্রত্যেক জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসাবে সিটি কর্পোরেশনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য ও নাগরিকদের সেবা গ্রহণ প্রক্রিয়া সহজ করনের জন্য “নাগরিক সনদ” একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। তবে তৃণমূল নাগরিকদের জন্য সে ‘নাগরিক সনদ’ কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ‘সময়ের খবর’ গত দু’সপ্তাহে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় ও ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুস সালামের ভাই মোঃ নূর ইসলাম ২নং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর সাহেদা বেগমের সচিব। তিনি একজন আইনজীবী ও প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার। ৬নং ওয়ার্ডের সচিব মোঃ আবু মুসা নিয়মিত শিডিউল কেনেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্র জানিয়েছেন। এছাড়া, ৩০নং ওয়ার্ডের অফিস সহায়ক মোঃ নূর ইসলাম খান প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার। তার পরিচালিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খালিশপুরের আইসিটি ভবনটির নির্মাণ কাজ করছে। সম্প্রতি ওয়ার্ড অফিস থেকে বদলি হয়ে কেসিসি’র হিসাব শাখায় এসেছেন তিনি। ৩১নং ওয়ার্ডের সচিব মোঃ হাফিজুর রহমান, ২৫নং ওয়ার্ডের মোঃ কবির হোসেন, ২৯নং ওয়ার্ডের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ বাহাদুর হোসেনসহ কেসিসি আরো ৮/১০জন সচিব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। আশ্চর্য্যরে বিষয় হল- ঠিকাদারী লাইন্সেসগুলো রয়েছে স্ত্রী-সন্তান, ভাই ও নিকট আত্মীয়দের নামে। তাই সাদা চোখে তাদের বুদ্ধিমত্তা ধরা দুরূহ ব্যাপার। ২২নং ওয়ার্ডের সচিব আব্দুল করিম মোল্যা দীর্ঘদিন জমি কেনা-বেচার সাথে জড়িত। আবার, ১৪নং ওয়ার্ড সচিব মোঃ নাসির উদ্দিন বিশাল পোল্ট্রি ফার্মের মালিক। দিনের বেশিভাগ সময় কাটে তার ফার্ম দেখভাল ও ডিম বিক্রির কাজে।
তবে ওয়ার্ড সচিবরা বিকল্প পেশায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে বললেন, ওয়ার্ডবাসীর সেবায় তারা কোন অফিস টাইম অনুসরণ করেন না। সকাল ৯টা থেকে গভীর রাত অবধি জনসেবায় ব্যস্ত থাকেন তারা। স্বার্থ হাসিল করতে না পারা স্বার্থন্বেষীরাই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে পারে বলে মন্তব্য করলেন তারা। এদিকে, স্থানীয়দের অভিযোগ- সচিবরা ওয়ার্ড কার্যালয়ে নিয়মিত বসেন না। নিজেরা বেতন দিয়ে পার্ট টাইম লোক নিয়োগ দিয়ে রাখেন দৈনন্দিন কাজ করানোর জন্য। তারা ব্যস্ত থাকেন নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, ঠিকাদারী ও বিকল্প আয়-উপার্জনে। বিকল্প আয়ের মাধ্যম নেই যাদের তারা আবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অফিসিয়াল ডিউটি পালন করেন। কিন্তু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি কাউন্সিলরকে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জনগনের পাশে থাকতে হয়। এসব সময়ে সচিব না থাকায় নাগরিক সেবা বঞ্চিত হয় ওয়ার্ডবাসী। তাছাড়া চাকুরী ও কর্মজীবীরা সারাদিন পর সন্ধ্যায় কাউন্সিলর অফিসে গিয়ে পান না কাঙ্খিত সেবা।
জনগনের দোর গোড়ায় সরকারি সেবা নিশ্চিত করা, সেবার মান বৃদ্ধি এবং সেবাকে অধিকতর জনবান্ধব করার জন্য সরকারি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। জনপ্রশাসনে কাজের গতিশীলতা, উদ্ভাবনী দক্ষতা বৃদ্ধি এবং নাগরিক সেবা দ্রæত, সহজিকরণের পন্থা উদ্ভাবন ও উত্তম চর্চার লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় থেকে উপজেলা পর্যায়ে একটি করে ইনোভেশন টিম গঠনে প্রজ্ঞাপনজারী করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সে হিসেবে গত ৭ ফেব্রæয়ারি কেসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ কান্তি বালাকে ইনোভেশন কর্মকর্তা করে ছয় সদস্যের টিম গঠন করা হয়। কেসিসি’র ইনোভেশন কর্মকর্তা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপ-সচিব) পলাশ কান্তি বালা বিদেশ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
সিটি মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি বলেন, এধরণের অভিযোগ তো আগে শুনিনি। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিবো। যদি সেটা হয়-তাহলে তো জনগনের সেবায় ত্রæটি হতেই পারে। কেসিসি’র প্রত্যেক জনপ্রতিনিধি, কর্মকর্তা-কর্মচারী নগরবাসীর দ্বোরগড়ায় সেবায় পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ