Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

রাজবাড়ীতে ইটভাটায় পুড়ছে বনের কাঠ

| প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) উপজেলা সংবাদদাতা : রাজবাড়ী জেলার দুই তৃতীয়াংশ ইটভাটা চলছে অনুমোদন ছাড়া। কয়েকটির অনুমোদন নেওয়া হলেও পরে তা আর নবায়ন করা হয়নি। এ ছাড়া পরিবেশের ক্ষতি করে দেদার কাঠ পোড়ানো হচ্ছে এসব ইটভাটায়। রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টরেট কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, রাজবাড়ীতে মোট ইটভাটার সংখ্যা ৬২। এর মধ্যে ৩৯ টিরই কোনো অনুমোদন (লাইসেন্স) নেই। বাকি ২৩ টির লাইসেন্স নেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে ১১ টির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। অবশ্য, এসব তথ্য ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে হালনাগাদ করা। রাজবাড়ী সদর উপজেলার ২৮ টি ইটভাটার মধ্যে ১১ টির লাইসেন্স নেওয়া হয়। তবে ৪ টির লাইসেন্স পরে আর নবায়ন করা হয়নি। বাকি ১০ টি ভাটা কোনো লাইসেন্স নেয়নি। অপর ৭ টি ইট ভাটার বিষয়ে কোনো তথ্য নেই জেলা প্রশাসনের কাছে। কালুখালী উপজেলার ১০টি ইটভাটার মধ্যে লাইসেন্স নেওয়া হয় ৩ টির। এর মধ্যে ১ টির লাইসেন্সের মেয়াদ আছে; আরেকটির মেয়াদোত্তীর্ণ; অন্যটির ব্যাপারে কোনো তথ্য দেওয়া নেই। আরেকটির লাইসেন্স নবায়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অবশিষ্ট ৬ টি ইটভাটার কোনো লাইসেন্স নেই। এই ৬ টি ইটভাটার মধ্যে ২টি বন্ধ রয়েছে। পাংশা উপজেলার ১১ টি ইটভাটার মধ্যে ৩টির মালিক লাইসেন্স নিয়েছিলেন। তবে ২টির মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও তা নবায়ন করা হয়নি। বাকি ৮ টি লাইসেন্স ছাড়াই চলছে। বালিয়াকান্দি উপজেলার ৯ টি ভাটার মধ্যে ৩ টির লাইসেন্স নেওয়া হয়। তবে ২ টির লাইসেন্স পরে আর নবায়ন করা হয়নি। বাকি ৬ টির কোনো লাইসেন্স নেই। গোয়ালন্দ উপজেলার ৪ টি ইটভাটার মধ্যে ২ টির লাইসেন্স নেওয়া হয়। তারাপরে আর সেটি নবায়ন করেনি। তবে হালনাগাদ নবায়নের জন্য ১ টি ভাটার আবেদন করেছে। অপর ভাটা ২ টির কোনো লাইসেন্স নেই। তবে এ তথ্যের সঙ্গে মিল নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যের। তাদের হিসাবমতে, রাজবাড়ীতে মোট ইটভাটা আছে ৭৩ টি। এর মধ্যে অধিদপ্তরের অনুমতি সাপেক্ষে এবং আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ভাটা পরিচালিত হচ্ছে ৫৯ টি। অবৈধ ফিক্সড চিমনি ব্যবহার করছে ২৭ টি। এগুলো বন্ধের নোটিশ দেওয়া হলেও উচ্চ আদালতে আপিল করে নোটিশের ওপরে স্থগিতাদেশ নিয়ে মালিকেরা ভাটাগুলো চালাচ্ছেন। সরেজমিনে জেলা সদররের এনআইবি ব্রিকস, এ গিয়ে দেখা যায়, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এগুলোতে দেদার পোড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন গাছ। ভাটার ওপরে ও চারপাশে কাঠ আর ডালপালা স্তুপ করে রাখা হয়েছে। ট্রাক ও ইঞ্জিনচালিত লরিতে করে কাঠ আনা-নেওয়া করা হচ্ছে। ভাটার পাশে স্থাপিত করাতকলে কাঠ চিরে ভাটায় ফেলা হচ্ছে। ভাটার চিমনি দিয়ে বেরোনো কালো ধোঁয়া চারদিকে দূষণ ছড়াচ্ছে। এছারাও সদর উপজেলার সরদার ব্রিকস গিয়ে দেখা যায়, কয়েক ব্যক্তি কাঠ ওজন দেওয়া এবং স্তুুপ করার কাজে ব্যস্ত। ওমর শেখ নামের একজন নিজেকে কাঠ সরবরাহকারী পরিচয় দিয়ে বললেন, প্রতিদিন এ ভাটায় ২০০-৩০০ মণ কাঠ লাগে। গড়ে প্রতি মণ খড়ির দাম ১১০ টাকা। সে হিসাবে প্রতিদিন এ ভাটায় ৩৩ হাজার টাকার কাঠ পুড়ছে। একই উপজেলার এসআইবি ব্রিকসের ব্যবস্থাপক আবদুল মান্নান বলেন, প্রতিদিন তাঁদের ভাটায় প্রায় পাঁচ টন কয়লা লাগে। কয়লার ওপর চাপ কমাতে কাঠ ব্যবহার করেন তাঁরা। ভাটায় কাঠ পোড়ানোর নিয়ম নেই এ কথা স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, অনেক সময় রাস্তার আশপাশের অনেক মরা গাছ লোকজন বিক্রি করে দেন। সাধারণত তাঁরা সেগুলো কেনেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়েই কাঠ পোড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করেন মান্নান। তবে তিনি এ-সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ পরিচালক মো. সাইফুল্লাহ তালুকদার বলেন, ‘ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর নিয়ম নেই। গত বছরের অক্টোবর মাসে আমরা সব ইটভাটার মালিককে নোটিশ দিয়ে কাঠ পোড়াতে নিষেধ করেছি। এর আগে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। প্রয়োজনে আবার আলোচনা সাপেক্ষে করণীয় ঠিক করব।’ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক জিনাত আরা বলেন, জেলা প্রশাসন কিছুদিন আগে ইটভাটার মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। নিয়ম না মানলে ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৈঠকে প্রশাসনের এই অবস্থান তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে অভিযানও শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে কাঠ পোড়ানোর অপরাধে রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদ ওহাপুরের দুটি ই্ট ভাটা মালিককে দুই লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ