Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

চৌদ্দগ্রামে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক

| প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোআকতারুজ্জামান, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) থেকে : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভাসহ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে মাদক। ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখানে হাত বাড়ালেই মাদক পাওয়া যাচ্ছে। ভারতীয় সীমান্তে কাটা তারের বেড়া থাকার পরও মাদক কিভাবে বাংলাদেশে আসছে- এমন প্রশ্ন সবার। জানা গেছে, চৌদ্দগ্রামের ৪৪ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে সীমান্ত এলাকা। অপরদিকে সীমান্তের দেড়’শ থেকে পাঁচশ গজের মধ্যে দেশের ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতীয়রা মাদকসহ বিভিন্ন দ্রব্য পাচার করে দেয়। বিনিময়ে তারা নিয়ে যায় বাংলাদেশের মাছ ও আলুসহ বিভিন্ন মূল্যবান পণ্য সামগ্রী। এজন্য রাতের বেলায় চৌদ্দগ্রামের ৪৪ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা চোরকারবারিদের দখলে থাকে। অভিযোগ উঠেছে, চোরাকারবারিরা সীমান্তরক্ষী বিজিবিকে ভ‚য়া ইনফরমেশন দিয়ে অন্য স্পটে রেখে অনায়াসে পাচার কাজ চালায়। স্থানীয়রা জানায়, ১২ বছর আগে ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় কাটা তারের বেড়া ছিল না। তখনও বাংলাদেশের ট্রাক ভারতের ভিতরে ঢুকে মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন ভারতীয় পণ্য নিয়ে আসতো। এখন আর ট্রাক যেতে না পারলেও মাদকদ্রব্যসহ অন্যান্য পণ্য আদান প্রদানের ঘটনা অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর অর্ধশতাধিক সংঘবদ্ধ চক্র মাদক ব্যবসা ও পাচার কাজে জড়িত রয়েছে। জানা যায়, ২০০৫ সালের মাঝামাঝি সময় ভারত সরকার তাদের নিজস্ব সীমান্ত এলাকার ১৫০ গজ ভিতরে কাটা তারের বেড়া দেয়। ওই ১৫০ গজ সীমানার ফসল আনা-নেয়ার জন্য দুই কিলোমিটার পর পর গেইট রাখা হয়। প্রত্যেক গেইটের পাশে রয়েছে একটি দ্বোতলা ঘর। যা ওয়াচ টাওয়ার নামে পরিচিত। ওই টাওয়ার থেকে প্রতিদিনই পাহারা দিচ্ছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। অপরদিকে বাংলাদেশী সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিদেরও গেইট পার্শ্ববর্তী এলাকা ছাড়া অন্য কোথাও পাহাড়া দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। দুই দেশের সীমান্তরক্ষীরা পাহাড়ায় থাকা সত্তে¡ও রহসজন্যক কারণে ভারত থেকে অবাধে আসছে ফেনসিডিল, গাঁজা ও ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদব্য। এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের দেখা দিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় চৌদ্দগ্রামের মাদক নিয়ে বহুবার সংবাদ প্রকাশ করা হলেও মাদক পাচার কিছুতেই কমেনি। বরং মাদক পাচার উদ্বেগজনক হারে আরও বহুগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। জানা গেছে, যে সমস্ত গেইট সোজা বাংলাদেশের রাস্তা আছে সে সকল গেইট দিয়ে সবচেয়ে বেশী মাদকদ্রব্য আসছে। সেগুলো হলো; আলকরা ইউনিয়নের দত্তসার, সোনাইছা, কাইচ্ছুটি, জগন্নাথদীঘি ইউনিয়নের সাতঘড়িয়া, বেতিয়ারা, জগন্নাথ, চিওড়া ইউনিয়নের ডিমাতলী, সুজাতপুর, বাতিসা ইউনিয়নের কালিকাপুর, আনন্দপুর, চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার জামে মসজিদ রোড, রামরায়গ্রাম, ঘোলপাশা ইউনিয়নের মতিয়াতলী, আমানগন্ডা, বাবুর্চি বাজার, কালিকাপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর, মিরশান্নী, উজিরপুর ইউনিয়নের চকলক্ষীপুর, জগমোহনপুর ও শিবের বাজার। ইতোপূর্বে চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশ সীমান্তরক্ষী বিজিবির কয়েকজন লাইনম্যানের ঘর থেকে ফেনসিডিলসহ বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য আটক করেছে। তবে বিজিবি দাবি করেছে- তাদের কোন লাইনম্যান নেই। মাদকদ্রব্য পাচার ও আটকের বিষয়ে কথা বলতে গেলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিজিবির একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিজিবির সদস্য সংখ্যা কম ও ভারতীয় বিএসএফ গেইট দিয়ে মাদকদ্রব্য পাচারের সুযোগ দেওয়া কারণে মাদকদ্রব্য পাচার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা যাচ্ছে না। অপরদিকে বিজিবির ওই কর্মকর্তারা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে থানায় মামলা থাকলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার না করায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। চৌদ্দগ্রাম থানার কয়েকজন এসআই জানান, মাদকদ্রব্য মূলত ভারত থেকেই বাংলাদেশে আসে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির অনেকটা অসচেতনতার কারণেই মাদকের সয়লাব হয়েছে। তাছাড়া মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম এলাকাটি দীর্ঘ হওয়ার কারণে এবং মাদক ব্যবসায়ীরা পাচারকাজে উন্নতমানের গাড়ি ব্যবহার করায় পুলিশের পুরাতন গাড়ি দিয়ে ধাওয়া করে তাদেরকে ধরা সম্ভব হয় না। তাছাড়া পুলিশ প্রায় প্রতিদিনই মাদকসহ ব্যবসায়ী ও পাচারকারীদের আটক করছে। গত কয়েক মাসে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ অন্তত ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে বলেও তারা দাবি করেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০ কারণে বাড়ছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। কারণগুলো হলো- ব্যর্থতা ও হতাশা, গণবেকারত্ব, কৌতুহল, ফ্যাশন, সঙ্গদোষ, মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা, আনন্দদায়ক অনুভ‚তির সৃষ্টি, দরিদ্রতা, যুব অসন্তোষ, নিরক্ষরতা ও অজ্ঞতা, অতিরিক্ত পরিশ্রম, মাদক বিরোধী আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়া, সামাজিক শিক্ষার অভাব, ধর্মীয় অনুশাসনের অভাব, অপসংস্কৃতিক, শিল্পায়ন ও শহরায়ন, আন্তর্জাতিক সংযোগ, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, পারিবারিক পরিবেশ ও মূল্যবোধের অবক্ষয়। সীমান্তবর্তী দোকানগুলো জমজমাট : বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাতের বেলায় বাংলাদেশ ও ভারতে অবস্থিত সীমান্তবর্তী দোকানগুলো জমজমাট থাকে। ফলে ওই এলাকায় দিন দিন বখাটে ও মাদক ব্যবসায়ী-পাচারকারীর সংখ্যা বাড়ছে।
চৌদ্দগ্রামের মর্যাদা হানি হচ্ছে : কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, নাঙ্গলকোট ও লাকসামসহ পাশ্ববর্তী কয়েক উপজেলার যুবকরা চৌদ্দগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় এসে মাদক সেবন ও পাচার করার সময় আটক হয়। ফলে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় প্রায় প্রতিদিনই চৌদ্দগ্রামে মাদক উদ্ধার ও ব্যবসায়ী বা পাচারকারীদের আটকের খবর প্রকাশিত হয়। এজন্য বহিরাগত লোকদের কারণে চৌদ্দগ্রামের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে বলেও অনেকে দাবি করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ