পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই
স্টাফ রিপোর্টার : একাদশ নির্বাচনে সমতল মাঠ ছাড়া খেলা হবে না, সরকারকে একতরফা খেলতে দেয়া হবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বুধবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই হুশিয়ারি দেন।
সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে হবে। সংবিধান তো আপনি ভেঙ্গে-কেটে-ছুঁড়ে, ছিন্ন-ভিন্ন করেছেন। এখন যেটা তৈরি করেছেন, সেটা তো সংবিধান না, আপনারদের মনগড়া একটা কাগজ তৈরি হয়েছে। সেখানে নির্বাচন করতে বলেছেন। নির্বাচন কী করবেন? আপনারা রেফারী-লাইন্সম্যানসহ সবাই অত্যন্ত সুন্দরভাবে খেলবেন আর আমাদের খেলতে দেবেন না। একতরফাভাবে গোল দিয়ে যাবেন, এই খেলা হবে না। একতরফা খেলা হবে না, লেভেল প্ল্যায়িং ফিল্ড ছাড়া খেলা হবে না।
বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া কঠিন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনাদের অধীনে নির্বাচন হওয়া কঠিন- এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে। সহায়ক সরকার প্রয়োজন হবে নির্বাচনকালীন সময়ে। কিভাবে হবে আসুন আলোচনা করি, আসুন সংলাপ করি, কথা-বার্তা বলি।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বক্তব্য উদ্ধৃতি করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধান বিচারপতির অভিযোগ একটা বড় অভিযোগ। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তিনটি প্রধান স্তম্ভ, তিনটি প্রধান প্রতিষ্ঠান। সেই তিনটির একটি যার ওপর আমাদের শেষ আশ্রয় হিসেবে নির্ভর করি-বিচার বিভাগ। এই বিভাগের প্রধান বলছেন, আরেকটি বিভাগ প্রশাসনিক বিভাগ অর্থাৎ সরকার তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে, স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিচ্ছে না। এর জবাব কী? সরকার কোনো জবাব দিতে পারবে না।
গতকাল (মঙ্গলবার) সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, সমন্বয়ক করে কাজ করতে হবে। উনি ( সম্পাদক) বলেছেন যে, বিচার কী সমন্বয়ক করে হতে পারে। বিচার তো সমন্বয় করে হয় না, বিচার বিচারই। সত্য উৎঘাটন করে যে দোষী তাকে সাজা দিতে হবে। এখানে যেটা চলছে, এক দলের শাসন চলছে, এক ব্যক্তির শাসন চলছে। এখানে আর অন্য কিছু নাই।
রাজধানীর তোপখানা রোডে জাতীয় শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক কল্যাণ পার্টির উদ্যোগে ‘রাজনীতিতে গুনগত পরিবর্তন ও আগামী নির্বাচন’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
সরকারের দেশ পরিচালনার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে এমন একটা শাসনব্যবস্থা চালু হয়েছে যাকে একটা ফ্যাসিবাদের সাথে তুলনা করা যেতে পারে, অন্য কারো সাথে নয়। সেখানে বিরোধী কন্ঠ স্তব্ধ করে দেয়া হয়, ভিন্নমতকে ধ্বংস করে দেয়া হয়। যেখানে প্রতিবাদ করলে তাকে গুড়িয়ে দেয়া হয়, গুম করা হয়, হত্যা করা হয়। সেখানে গণতন্ত্রের কথা বলা কঠিন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সরকার সচেতনভাবে আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়েছে, আমাদের অর্থনীতিকে লুন্ঠন করে শেষ করে দিচ্ছে, আমাদের পররাষ্ট্রনীতিকে নতজানু পররাষ্ট্রনীতিতে পরিণত করেছে। কী দুভার্গ্য আমাদের, প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন কিন্তু আমাদের পানি সমস্যার সমাধান হয় নাই এবং কোনো সম্ভাবনাও নেই। অথচ যে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা পানির জন্য দরকাষাকষি করতে পারতাম, সেই বিষয়গুলো আমরা তাদের হাতে তুলে দিয়েছি। এই কথাগুলো অর্থ এই না যে, আমরা ভারত বিরোধী কথা বলছি। আমি আমার স্বার্থের কথা বলছি।
বিএনপি ভারত বিরোধী নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি কখনো ভারত বিরোধী নই, আমার দল কখনো ভারত বিরোধী নয়, আমার জোট (২০ দল) ভারত বিরোধী নয়। ভারত আমাদের প্রতিবেশি বন্ধু। যুদ্ধের সময়ে আমাদের সহযোগিতা করেছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, আমি নতজানু হয়ে আমার সব কিছু বিলিয়ে দেবো, আমার স্বার্থ আমি পাবো না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে এই মুহুর্তে মোটা চালের দাম সবচেয়ে বেশি। হাওর অঞ্চলে একটা দুর্ভিক্ষ অবস্থা চলছে। অনেক দিন পরে গেলেন প্রধানমন্ত্রী, গিয়ে কিছু ত্রাণের কাজ করে এসে উল্টো আবার বিএনপিকে দোষারোপ করলেন। তাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে, যা কিছু হারাই গিন্নী বেটা বলেন, চেষ্টা বেটাই চোর। সবকিছুই বলতে চায় যে, বিএনপিই এরজন্য দায়ী। অথচ এতোদিন পরে তারা হাওরে গেলেন, এখনো হাওরের মানুষের আহজারি কমেনি। আজকের পত্রিকায় সংবাদ আছে গতকালই (মঙ্গলবার) সরকারের মৎস্য ও পশু পালন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবসহ কর্মকর্তারা অষ্ট্রেলিয়া গেছেন। এরআগে হাওর উন্নয়ন অধিদপ্তরের ডিজি বিদেশে ছিলেন, এখন এসছেন।
তিনি বলেন, এরা এই দেশটাকে তাদের একটা বিনোদনের জায়গা মনে করছে। এখান থেকে তারা অর্থ উপার্জন করবে আর বিদেশে ঘুরবে, বিরোদন করবে। আর এখান থেকে সব সুষে নিয়ে চলে যাবে। এখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেই দিয়েছেন যে যা আয়-টায় করছো, তা নিয়ে তো বিদেশে পালিয়ে যেতে হবে, এখানে থাকতে পারবে না। যদি দলকে ক্ষমতায় রাখতো না পারো।
খ্বু পরিস্কার তাদের মুখে আসছে, তারা দেশটাকে কি করেছে। সেজন্য আমরা পরিবর্তন চাই, পরিবর্তন চায় দেশের মানুষ এই সরকারের যা এদেশকে আজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছে। পরিবর্তন চায় সমাজের যে সমাজকে তারাই কুলষিত করেছে। সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবানও জানান বিএনপি মহাসচিব।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা আজাদ মাহবুব, মো. ইলিয়াস, সাহিদুর রহমান তামান্না, সৈয়দ নুরুল ইসলাম, আবুল কাশেম ভুঁইয়া, স্বাধীনতা ফোরামের আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ জিয়া নাগরিক ফোরামের মিয়া মো. আনোয়ার, জাতীয় নাগরিক মঞ্চের ইসমাইল হোসেন তালুকদার খোকন প্রমূখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই : বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে অপর এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যে রাষ্ট্রের গণতন্ত্রের জন্য আমরা যুদ্ধ করলাম, কথা বলার স্বাধীনতার জন্যে, সেই রাষ্ট্র আজকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বন্ধ করে দিচ্ছে, সাংবাদিকদের কন্ঠ রোধ করছে।
এই সরকার সংবাদপত্রকে নিয়ন্ত্রন করছে। দুভার্গ্য আমাদের যে, আওয়ামী লীগ ও মুক্ত গণমাধ্যম-এটা একসাথে যায় না। তারা যতবার ক্ষমতায় এসে প্রথম আক্রমন করেছেন গণমাধ্যমের ওপর। আজ দেশে না আছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, না আছে রাজনৈতিক স্বাধীনতা, না আছে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। সব কিছুই একটা বিশেষ গোষ্ঠির হাতে চলে গেছে, আওয়ামী গোষ্ঠির হাতে চলে গেছে। তাদের বাইরে এখানে কিছু করতে পারবে না। ফলে গোটা অর্থনীতি রসাতলে যাচ্ছে, লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাঁচার হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতেও পরামর্শ দেন তিনি।
জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বিএনপি সমর্থিত ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগ এই আলোচনা সভায় সাংবাদিকরা সরকার কর্তৃক দেশের গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রন ও সাংবাদিকদের নির্যাতনের নানা চিত্র তুলে ধরেন।
বিএফইউজে‘র সভাপতি শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে ও বিএফইউজে‘র মহাসচিব এম আব্দুল্লাহ ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, এম এ আজিজ, আব্দুল হাই শিকদার, আব্দুস শহীদ, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, কাদের গনি চৌধুরী, মোদাব্বের হোসেন, খুরশিদ আলম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, সাধারণ সম্পাদক মোরসালীন নোমানী, বাংলাদেশে ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম মহসীন প্রমূখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
পরে বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতনের ওপর এক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।