ইবি ভিসির অফিসে তালা, অডিও ক্লিপ বাজিয়ে আন্দোলন
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালামের অডিও ফাঁসের ঘটনায় তৃতীয় দিনেও ভিসি
ঐ নতুনের কেতন ওড়ে, ওরে কাল বোশেখীর ঝড়, তোরা সব জয়ধ্বনী কর”- বিদ্রোহী কবির প্রলয়োল্লাস কবিতার সেই জয়ধ্বনী তুলতেই যেন নবীন শীক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ। শিক্ষাজীবনের ১২টি সিঁড়ি পার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমন। উচ্চশিক্ষার এ বিদ্যাপীঠকে কেন্দ্র করে কতই না স্বপ্ন তাদের বুকে। কেউ গবেষক, কেউ আইনবিদ, কেউ প্রযুক্তিবিদ আবার কেউবা শিক্ষকতার মতো মহান পেশার স্বপ্ন-কে বুকে লালন করছে। বিশ্ববিদ্যালয় যেন তাদের এ স্বপ্নগুলো পূরণে তাদেরকে আরো একধাপ এগিয়ে দিল। এখন বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে তাদের স্বপ্ন।
গত ৩০ জানুয়ারি ক্লাস শুরু হওযার মাধ্যামে ইসলামী বিশ্ববিদ্যাালয়ের সবুজ প্রাঙ্গনে পা রেখেছে আরো একটি নতুন ব্যাচ। আড্ডা আর বন্ধুদের সাথে পরিচয়ে সবাই ব্যস্ত। ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য দিনটি ছিল সত্যিই আনন্দের। চান্স পাওয়ার পর থেকেই তারা নতুন ক্যাম্পাস, নতুন পরিবেশ নিয়ে মনে মনে আঁকতে থাকে নানা স্বপ্ন। কিভাবে কাটবে প্রথমদিন? প্রবীণরাও প্রস্তুতি নিতে থাকে নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেয়ার জন্য। প্রস্তুতি শেষে ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে সেসব প্রকাশ পায়। আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু হয়। প্রত্যেক বিভাগে পৃথকভাবে নবীনদের বরণ করে নেয়া হয়। এছাড়া গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলানায়তনে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বরণ করে নেয়া হয় নবীনদেরকে। নবীন-বরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আব্দুল মান্নান। শিক্ষকরা নবীনদের রজনীগন্ধা ও গোলাপ ফুল উপহার দিয়ে তাদেরকে ক্যাম্পাসে স্বাগত জানান। এসময় তারা পরিচিতিমূলক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। এছাড়াও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন অবহিতপূর্বক সকল কে তা মেনে চলার আহ্বান জানান। সব শেষে সকলকে মিষ্টি মুখ করানো হয়। সবাই আনন্দের জোয়ারে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। পুরো ১৭৫ একরজুড়ে মেতেছিল নতুন আমেজে। তখন একটি কবিতাই মনে পড়ছিল, “এসেছে শত পুষ্পের দল, করছি তাদের বরণ, হাতে হাতে শোভা পাবে, তাদের দেওয়া মন”।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে এখন রঙিন স্বপ্ন। ইসলামের ইতিহাস বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী আব্দুস সামাদ। তার কাছে ভবিষ্যতের লক্ষ্য কি জিজ্ঞাসা করতে সে বলল, “আমি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করতে চাই এবং নিজের জায়গা থেকে দেশের উন্নয়নে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে চাই।” ক্যাম্পাসের ডায়না চত্বরের পাশে বসে আড্ডায় মেতেছিল বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী কণা, তুহিন, জিনিয়া ও তৃষা। তাদের কাছে স্বপ্নের কথা জিজ্ঞাসা করতেই তুহিন বলে উঠল “আমি চাই গবেষক হতে। নতুন উদ্ভাবনীর দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকে উজ্জ্বল করতে চাই।” তার কথা শেষ না হতেই পাশ থেকে তৃষা বলল “আর্মা ইচ্ছা ভালো রেজাল্ট করা আর পরবর্তীতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া। কারণ একজন শিক্ষকই পারে জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে।” নবীনরা আরো জানান, একটি মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর এবার তাদের পথচলা স্বপ্নকে গড়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন পরিবেশ কেমন লাগছে জিজ্ঞাসা করতেই তারা জানান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেকে গড়ে তোলার ও নিজের স্বপ্ন কে পূরণ করার সব সুযোগই রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের যেমন আন্তরিকতার অভাব নেই, তেমনি রয়েছে দক্ষ শিক্ষকবৃন্দ, সমৃদ্ধ পাঠাগার, গবেষণাগারসহ বড় ভাইবেনদের আন্তরিক সহযোগিতা। এছাড়াও রয়েছে তারুণ্য, আবৃত্তি, বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার, ডিবেটিং সোসাইটিসহ অনেক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। যাদের সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে নিজেকে ব্যতিক্রমী হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে।
১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর প্রতিষ্ঠার পর থেকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে এসেছে ৩৮টি বছর। বর্তমানে ৫টি অনুষদের অধীনে ২৫টি বিভাগ, ১টি ইনিস্টিউট, প্রায় ১৩ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছেন। যার সাথে যোগ হলো আরো দেড় হাজার নতুন শিক্ষার্থী। এই নবীন শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের দেশ গড়ার কান্ডারী। তারা এখন ব্যস্ত তাদের স্বপ্ন পূরণে। তাদের মনে প্রাণে এখন ধ্বনিত হচ্ছে “আমরা করব জয়, নিশ্চয় একদিন”।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।