Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তীব্র গ্যাস সঙ্কটে প্রস্তুতি নিয়েও চালু করা যাচ্ছে না সিইউএফএল

২৭ মাসে ১৩ লাখ ৭৭ হাজার মে. টন সার উৎপাদন ব্যাহত

| প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা : সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও তীব্র গ্যাস সংকটে চালু করা যাচ্ছে না চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল)। কারখানাটি চালু করতে দৈনিক ৪০ মিলিয়ন ঘনফুটেরও বেশি গ্যাসের প্রয়োজন হয়। কিন্তু সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, যা দিয়ে কারখানাটি পুরোদমে চালু করা যাচ্ছে না। এরইমধ্যে গ্যাস সংকট ও যান্ত্রিক ত্রæটির কারণে কারখানাটি দীর্ঘ ২৭ মাস বন্ধ আছে। দীর্ঘসময় কারখানা বন্ধ থাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা। এছাড়া সার উৎপাদনের বার্ষিক টার্গেট পূরণ হওয়া নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারখানা সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি কারখানাটির রিঅ্যাক্টর লিকেজ ও কুলিং টাওয়ার অচল হয়ে পড়ে। এরইমধ্যে বিসিআইসির মাধ্যমে ইটালিয়ান এএক্সও কোম্পানির কারিগরি সহায়তায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে রিঅ্যাক্টর রিলাইনিং এবং এর সাথে কুলিং টাওয়ারের মেরামত কাজ সম্পন্ন করা হয়। সংস্কার কাজ সম্পন্ন হলে গত ১৯ জানুয়ারি গ্যাস সরবরাহ করে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (কেজিডিসিএল)। কারখানায় সরবরাহ করা গ্যাসের চাপ কম থাকায় উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নতুন করে সমস্যা দেখা দেয়। এরই প্রেক্ষিতে গত ১৭ ফেব্রæয়ারি একই রিঅ্যাক্টরে আবারো লিকেজ দেখা দেয়। ফলে উৎপাদনে যেতে যেতেও আবার বন্ধ হয়ে যায় কারখানা। এরপর গত ৪ এপ্রিল লিকেজ হওয়া রিঅ্যাক্টর মেরামতের কাজ পুনরায় শুরু করে ইটালিয়ান এক্সপার্টরা। গত সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ রিঅ্যাক্টর মেরামতের কাজ সম্পন্ন হলেও গ্যাস সংকটের কারণে চালু করা যাচ্ছে না সিইউএফএল। এদিকে সিইউএফএল পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ না পেলেও কাছাকাছি এলাকায় বহুজাতিক সার কারখানা কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো) পুরোদমে চলছে। অভিযোগ উঠেছে, সিইউএফএলকে গ্যাস সরবরাহে অগ্রাধিকার না দিয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে কাফকোকে। এতে করে চরম বৈষম্য হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবি জানিয়ে সিইউএফএল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সহ-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজিম সবুজ বলেন, কারখানার মেরামত কাজ শেষে স্বাভাবিক উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করতে গিয়ে দেখা যায় গ্যাসের চাপ কম। যার ফলে কারখানা চালু করা যাচ্ছে না। উৎপাদনে যেতে কারখানার ঊর্ধŸতন কর্মকর্তারা কেজিডিসিএলের কাছে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের অনুরোধ করেও কোনো প্রকার সাড়া পায়নি। জানা গেছে, দুই বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ আছে সিইউএফএল। এ কারখানায় দৈনিক সার উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন। ২৭ মাসে অন্তত ১৩ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন সার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এ জন্য চলতি বছরের শীত মৌসুমে কারখানাটি চালু করার জোর দাবি উঠেছিল। কারণ শীত মৌসুমে গ্যাসনির্ভর বেশিরভাগ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ থাকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গেল বছর ডিসেম্বরের শেষভাগে কারখানাটি চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। এব্যাপারে চাহিদা মাফিক গ্যাস সরবরাহ করতে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে (কেজিডিসিএল) চিঠি দেয়া হয়। গ্যাস পাওয়ার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতেই সার কারখানাটি চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু এ পর্যন্ত গ্যাসের চাপ উঠানামার কারণে অ্যামোনিয়া প্লান্টও চালু করা যায়নি। গ্যাস সংকটে উৎপাদন না হওয়ায় কারখানায় কর্মরত শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে ক্ষোভ, হতাশা ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এদিকে, সিইউএফএল চালু অনিশ্চিত থাকলেও পুরোদমে সার উৎপাদন হচ্ছে অন্য সার কারখানা কাফকোয়। বহুজাতিক এ কারখানার উৎপাদিত সার সরকারকে আন্তর্জাতিক মূল্যে কিনতে হয়। যার দাম সিইউএফএল থেকে উৎপাদিত সারের চেয়ে অনেক বেশি পড়ে। জানতে চাইলে সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু তাহের ভূঁইয়া ইনকিলাবকে জানান, এখনো পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যায়নি। গ্যাসের অভাবে কারখানা চালু করা যাচ্ছে না। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি, বাড়তি গ্যাস পেলেই কারখানা চালু করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ