রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
আবদুল ওয়াজেদ কচি, সাতক্ষীরা থেকে : প্রাণসায়র খাল এখন শহরের বড় ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। বড় বাজার ব্রিজ এবং কেষ্ট ময়রার ব্রিজের পাশে গেলে আন্দাজ করা যায় সমগ্র খালের অবস্থা। শুধু তাই নয়, প্রাণসায়র খালের আরো অনেক জায়গায় এরকম ডাস্টবিনের দেখা মিলবে। শুধু কি তাই দেখা মিলবে চটের বস্তা দিয়ে ঘেরা বাথরুম। খালের পাশে দখলের জন্য এক শ্রেণির মানুষ গাছের গায়ে বস্তা দিয়ে আবর্জনার স্ত‚প তৈরি করেছে। সাতক্ষীরা পৌরসভার ডাস্টবিনগুলো প্রতিদিন পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু প্রাণসায়ের খালের ডাস্টবিনগুলো কখনো পরিষ্কার করা হয় না। সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রায় সব বড় বড় ড্রেনগুলার বর্জ্য এই খাল দিয়ে নিষ্কাশিত হয়। কিন্তু প্রাণসায়ের খাল নিজেই বর্জ্যে পরিপূর্ণ হওয়ায় সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রায় সব বড় বড় ড্রেনগুলা দিন দিন কার্যকারিতা হারাচ্ছে। এর ফলে ভবিষ্যতে সাতক্ষীরা শহরের মানুষ ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের কবলে পড়তে যাচ্ছে। দূষণে কালো হয়ে গেছে নোংরা পানি। খালের বুকে ময়লার ভাগাড়টা যেন দাঁত ভেংচাচ্ছে। একটু দূরেই বরফকল, শৌচাগার। বাণিজ্যিক দোকান, বসতঘর আর মাছের বাজারও আছে খালের বুকজুড়ে। গড়েরকান্দায় পাড় থেকে খালের বুকে এগিয়ে দখলের দম্ভ ঘোষণা করছে প্রভাবশালীর পাকা দেওয়াল। পাকা পুলের কাছে খালের ওপর ঝুঁকে যেন উপহাস ছড়াচ্ছে গড়ে ওঠা ভবন। অনেক আগেই মজে গেছে প্রাণসায়র। জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরীর উদ্যোগে ১৮৬৫ সালে কাটা এই খাল তাই এখন প্রাণহীন। বছরের পর বছর ধরে শহরের বর্জ্য মিশতে থাকায় ঐতিহাসিক এই খাল পরিণত হয়েছে ডাস্টবিনে। তাই একসময় যে খালের পানি মানুষ পান করত, সে পানির কাছে আসতে এখন রুমাল চাপা দিতে হয় নাকে। শহরের মাঝ বরাবর অবস্থানের কারণে শহরবাসীকে নিত্যদিন এই খাল পাড়ি দিতেই হয়। শুনতে হয় প্রাণসায়রের প্রাণ হারানোর আর্তনাদ। কিন্তু সে আর্তনাদও চাপা পড়ে যায় প্রভাবশালীদের খাল দখলের মচ্ছবে। শহরের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে ওঠার বদলে এই খাল তাই এখন বিষের কাঁটা হয়ে ব্যথা ছড়ায় সাতক্ষীরাবাসীর বুকে। জমিদার প্রাণনাথের খোঁড়া এই খালের সংযোগ দক্ষিণের মরিচ্চাপ নদী থেকে উত্তরের নৌখালী খালের সঙ্গে। প্রাণসায়র আর সায়রের খাল নামেও পরিচিতি আছে এর। খননের পর এই খালই হয়ে উঠেছিল সাতক্ষীরা শহরের যোগাযোগের অন্যতম রুট। মাল আর যাত্রীবাহী বড় বড় নৌযান চলাচলে এক সময় দিনমান ব্যস্ত থাকত প্রাণসায়র। খননকালে এর দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ১৩ কিলোমিটার। প্রস্থ ছিল প্রায় ২শ’ ফুট। কিন্তু সেই প্রশস্ততা কমে এখন অনেক স্থানেই ২০ ফুটের নিচে নেমে গেছে। লঞ্চ-নৌকা তো দূরের কথা, ভেলা ভাসানোর মতো ¯্রােতও নেই প্রাণহীন প্রাণসায়রে। অথচ একসময় ইছামতির হাড়দ্দাহ দিয়ে কলকাতা খাল হয়ে বড় বড় স্টিমারই ঢুকত প্রাণসায়র খালে। এই খাল খননের ফলে সাতক্ষীরার ব্যবসা-বাণিজ্য আর শিক্ষার প্রসার ঘটতে থাকে দ্রæত। এ শহর তাই পরিণত হয় সমৃদ্ধিশালী নগরে। কিন্তু ১৯৬৫ সালের দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে বন্যা নিয়ন্ত্রণের নামে বেশ ক’টি ¯øুইস গেট নির্মাণ করা হলে প্রাণসায়রের মৃত্যুযাত্রা শুরু হয়। ¯øুুইস গেট গড়া হয় ইছামতির হাড়দ্দাহ খাল, কলকাতার খাল, বেতনা নদীর সংযোগ খাল, বালিথা, খেজুরডাঙি নারায়ণজোল ইত্যাদি স্থানে। এরই ধারাবাহিকতায় খোলপেটুয়া নদীর ব্যাংদহা খালের মুখে ¯øুইসগেট নির্মাণের চেষ্টা শুরু হলে প্রাণসায়রের মৃত্যু নিশ্চিত হয়। নদীর ¯্রােত খালের মধ্যে ঢুকতে না পেরে পলি জমে ভরাট হতে থাকে প্রাণসায়র। শোনা যায়, এ খালের তীরে নাকি গড়ে উঠবে দৃষ্টিনন্দন পার্ক। যে পার্কের দোলনায় দোল খেতে খেতে একদিন প্রজন্মের শিশুরা জানতে পারবে আমাদের গৌরবগাঁথা ইতিহাস আর ঐতিহ্যের কথা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।