পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মালেক মল্লিক : নতুন প্রজন্মকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা এবং অল্প বয়স থেকেই দুর্নীতি বিরোধী নৈতিকতায় উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। তাই স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা পড়–য়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সততা-নিষ্ঠাবোধ ও নৈতিকতা জাগ্রতের লক্ষ্যে ‘সততা স্টোর’ চালু করছে। দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য নতুন প্রজন্মকে প্রস্তুত করার লক্ষ্যেই মূলত এই অভিনব উদ্যোগ নেয় দুদক। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় অন্তত ৩৯টি সততা স্টোর চালু করেছে। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি জেলার একটি উপজেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুলে ‘সততা স্টোর’ করার উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে বিক্রি হবে শিক্ষার্থীদের বই, খাতা, পেন্সিল। তবে এখানে থাকবে না কোন বিক্রেতা। ক্রেতারা নিজেদের পছন্দমত প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে ক্যাশ বাক্সে দাম রেখে যাবেন। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তাদের মতে, নিঃসন্দেহ এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিকতা ও সততার চর্চা হলে তাদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে দুর্নীতিকে না বলবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল ইনকিলাবকে বলেন, তরুণ সমাজের মধ্যে সততা-নিষ্ঠাবোধ জাগ্রত করতে সততা স্টোর একটি প্রথম পদক্ষেপ। ফলে নিজেরা দুর্নীতি মুক্ত হিসেবে গড়ে উঠেবে। দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গঠনের তারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত ৩৯টি সততা স্টোর গঠন করা হয়েছে। আগামীতে সারা দেশে এই কার্যক্রম চালু করা হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, তরুণদের মধ্যে সততা চর্চা করা বিষয়টি নিশ্চয় একটি ভাল উদ্যোগ। এটাকে বাস্তবায়ন করতে পারলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সততা দৃষ্টিভঙ্গি জাগ্রত হবে। এতে করে দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গঠন করা যাবে। এতে করে দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর। আমি সততা স্টোরের সাফল্য কামনা করি। আশা করব এটা যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়।
দুদক সূত্রে জানা যায়, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ১৭ (ট) ধারা অনুযারী দুর্নীতি প্রতিরোধে সমাজের সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তিদের নিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সততা সংঘ গঠন করে। সারা দেশের ৩৩ হাজার ৩৯৯ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মধ্যে হতে কমিশন ২১ হাজার ৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সততা সংঘ গঠন করা হয়। এছাড়াও ১২ হাজার ৩৬৪টি প্রতিষ্ঠানে গঠনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সততা সংঘ মতবিনিময় সভা, পথসভা, মানববন্ধন, পদযাত্রা ও দুর্নীতিবিরোধী সংস্কৃতি অনুষ্ঠান কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব কার্যক্রমের ফলে তরুণ প্রজন্মনের মধ্যে নৈতিকতা বজায় রেখে জীবন যাপন বিষয়ে ব্যাপক আগ্রহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। এর ধারাবাহিকতায় গত ১০ই নভেম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সততা স্টোর স্থাপনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিক্ষামন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় দুদক। এতে উল্লেখ করা হয়, প্রতিটি জেলার একটি উপজেলায় স্কুলে পরীক্ষামূলকভাবে এই সততা স্টোর চালু হবে। সততা স্টোর পরিচালনা করবে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি। অর্থায়ন করবে দুদক। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে পরামর্শক্রমে পুঁজি ও বিনিয়োগ সংগ্রহ করবে। মনিটরিং করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলায় ও মহানগর পর্যায়ে জেলা প্রশাসক কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তি। তাদের মনিটরিং করবে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি, সম্পাদক, তার মনোনীত প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সমন্বয়ে ৩ সদস্যের প্রতিনিধি।
সততা স্টোরে পণ্যের তালিকা: স্টোরে বিক্রি হবে শিক্ষার্থীদের বই, খাতা, পেন্সিল। এছাড়াও জ্যামিতি বক্স, রং পেন্সিল, চিপস, বিস্কুট। আর সততা সংঘের পরিচালনা কমিটির নিকট যে সকল পণ্য শিক্ষার্থীদের জন্য আবশ্যক বলে প্রতীয়মান হয় তাও রাখা যাবে। স্টোরে প্রবেশের আগে শিক্ষার্থীকে রেজিস্টারে তার নাম, শ্রেণি ও রোল নম্বর লিখতে হবে। পণ্যের দাম দেখে শিক্ষার্থীকে ক্যালকুলেটরে হিসাব করে সাদা কাগজে পণ্যের নাম ও সমপরিমাণ টাকা লিখে ক্যাশ বাক্সে রেখে আসতে হবে। এছাড়া স্টোরে একটি প্রি-অর্ডার খাতা রাখা হবে, যেখানে চাহিদার পণ্য না পেলে প্রি-অর্ডার বুকের অর্ডার দিয়ে আসতে পারবে শিক্ষার্থীরা। পরিচালনা পর্ষদ প্রতি মাসে অন্তত একবার বৈঠক করবে হিসাব-নিকাশ যাচাই ও ক্রয়যোগ্য পণ্যে তালিকা প্রণয়নপূর্বক প্রয়োজনীয় অর্থ স্টোর কমিটি নিকট প্রদান করবে। এছাড়াও ১ দিন অন্তর অন্তর স্টোরে মনিটর করবে নিয়মিত পণ্যাদি চাহিদা আছে কিনা জানবে।
সততা স্টোরসমূহ: এ পর্যন্ত প্রায় ৩৯টি সততা স্টোর গঠন করা হয়েছে। কুমিল্লা আওতাধীন স্টোর সমূহের তালিকা হচ্ছে- বি-বাড়িয়া সদর চিনাইর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অনার্স কলেজ, চিনাইর আঞ্জুমান আরা উচ্চ বিদ্যালয়, অন্ন্দা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বাঞ্ছারামপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, উজানচর কে এন উচ্চ বিদ্যালয়, নবীনগর ইছাময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরাইল সরকারি অন্নদা উচ্চ বিদ্যালয়, সাবেয়া সোবহান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, কসবা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
এছাড়াও কুমিল্লার নবাব ফয়জুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কুমিল্লা জিলা স্কুল, লাকসাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। ফরিদপুরের এ আর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, নোয়াখালীর সৈকত ডিগ্রি কলেজ, শহীদ জয়নাল আবেদীন মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, রাঙ্গামাটির সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রাণী দয়াময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এছাড়াও খুলনার ডুমুরিয়া এন জি সি এন্ড এন সি কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাগেরহাটের কচুয়া সি এস বিদ্যালয়, বাগেরহাট বহুমুখী বালক বিদ্যালয়, যশোর কালেক্টরেট স্কুল, কুষ্টিয়া কুমারখালী এম, এন হাইস্কুল, চুয়াডাঙ্গা সদন উপজেলার ঝিনুক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দামুড়হুদা পাইলট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ সততা স্টোর চালু করা হয়েছে। এছাড়াও বরিশাল বিভাগের বরিশাল সদরের এ কে ইনস্টিটিউশন, এ আর এস বালিকা বিদ্যালয়। ঝালকাঠির সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, কাঠালিয়া পাইলট বালিকা বিদ্যালয়, পিরোজপুরের সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, ভান্ডারিয়া বন্দর সরকারি বিদ্যালয়, শিয়ালকাঠি বিদ্যালয়, বরগুনা জিলা স্কুলে ও বরগুনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।