Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সীতাকুন্ড-স›দ্বীপ চ্যানেলে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে যাত্রীরা

সাগর উত্তাল তবুও লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই চলাচল

| প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) থেকে : স›দ্বীপে নৌ-দুর্ঘটনায় ১৮ যাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার রেশ কাটার আগেই আবারো ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী পারাপার শুরু হয়েছে। অতি লোভী ইজারাদাররা সতর্ক সংকেত, উত্তাল সাগরের ঢেউ কোন কিছুরই তোয়াক্কা করছেন না। শুধুমাত্র অর্থের লোভে তারা সব প্রতিক‚লতার মধ্যেও যাত্রী পারাপার অব্যাহত রাখছেন। এমনকি ঘাট থেকে জাহাজে যাত্রী আনা-নেয়ার সময় অনেক ক্ষেত্রে লাইফ জ্যাকেটও ব্যবহার হচ্ছে না। এতে যে কোন সময় ফের বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাগর উত্তাল থাকা ও সতর্ক সংকেতের কারণে গত কয়েকদিন ধরে দ্বীপ উপজেলা স›দ্বীপে যাতায়াতকারী যাত্রীরা চরম আতংকের মধ্যে রয়েছেন। বিশেষত চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে স›দ্বীপের উপকূলের পৌঁছানোর পরও একটি নৌযান দুর্ঘটনায় ১৮ জনের মৃত্যুর ঘটনা সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এরপরও কাজের প্রয়োজনে প্রতিদিনই এ উপজেলা থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করতে হচ্ছে হাজার হাজার মানুষকে। আবহাওয়া ভালো থাকলে বঙ্গোপসাগরের সীতাকুন্ড-স›দ্বীপের এ বোর্ড জার্নি যাত্রীরা যে খুব উপভোগ করেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু উত্তাল সাগরে এ যাত্রা হয়ে উঠে চরম উদ্বেগ ও আতংকের। এ সময় কত তাড়াতাড়ি যাত্রা শেষ হবে সেই চিন্তাই করতে থাকেন যাত্রীরা। এমনকি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে যাত্রাও বাতিল করেন অনেকে। অবশ্য দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় যাত্রী আনা-নেওয়াও নিষিদ্ধ বলে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনাও রয়েছে। কিন্তু এ নির্দেশনা আসলেই কাগজে-কলমে। সেসব নির্দেশনার কোন তোয়াক্কা করেন না প্রভাবশালী ইজারাদাররা। যে কোন পরিস্থিতিতে তারা যাত্রী আনা নেওয়া করেন। শুধুমাত্র উপার্জনের লোভে তারা যাত্রীদের জীবন ঝুঁকিতে ঠেলে দিতে পিছুপা হন না। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলেও বড় ধরনের দুর্ঘটনার পর তারা কিছুটা সতর্ক হন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এবারও সে চিত্রও যেন বদলে গেছে। চলতি মাসের ৩ এপ্রিল সীতাকুন্ডের কুমিরা থেকে যাত্রী নিয়ে সী-ট্রাক এমভি শহীদ এসটি সালাম স›দ্বীপ ঘাটে পৌঁছানোর পর জাহাজ থেকে নৌযানে করে ঘাটে যাত্রী তোলার সময় অর্ধ শতাধিক যাত্রী নিয়ে নৌ-দুর্ঘটনার পর ১৮ জন যাত্রীর করুন মৃত্যু হলেও ইজারাদারদের সতর্ক হতে দেখা যায়নি। যাত্রীদের অভিযোগ সে দুর্ঘটনার পর ৩ সপ্তাহও অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই বর্তমান দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াতে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী পারাপার করছেন ইজারাদাররা। প্রতিদিন স্পিড বোট ও সী-ট্রাকে করে যাত্রী আনা-নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল সরেজমিন সীতাকুন্ডের কুমিরা-গুপ্তছরা ঘাটঘর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এখনো অসতর্কভাবে যাত্রী আসা-যাওয়া করছে। দেখা গেছে, স›দ্বীপ থেকে আসা বে-ক্রশ ইন্টারন্যাশনাল নামক সী-ট্রাক (জাহাজ) থেকে যাত্রীরা নৌকায় নেমে ঘাটে এসে উপরে উঠছেন। কিন্তু ঘাট থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার সমুদ্রের মধ্যে নৌকায় নামার পরও যাত্রীদের গায়ে লাইফ জ্যাকেট নেই! অথচ চলতি মাসে স›দ্বীপ উপকূলে এই দূরত্বের মধ্যেই দুর্ঘটনায় ১৮ জনের প্রাণহানি হয়। এরপরও যাত্রী বা ইজারাদার কারোরই সতর্কতা না থাকা প্রসঙ্গে কয়েকজন যাত্রীর কাছে জানতে চাইলে স›দ্বীপের কালাপানিয়া থেকে আসা যাত্রী মোঃ নুরুন্নবী বলেন, জাহাজের ভেতরে লাইফ জ্যাকেট পরেছিলাম। এরপর ঘাট তো আধ কিলোমিটারের মত তাই আর পরলাম না। কিন্তু স›দ্বীপে এই দূরত্বের মধ্যেই তো এত প্রাণহানি হয়েছিল। যদি আবার এ ধরনের ঘটনা ঘটে তাহলে? এমন প্রশ্নের জবাবে যাত্রী নুরুন্নবী বলেন, নৌকা থেকে লাইফ জ্যাকেট দেয়নি। তাই পরা হয়নি। মুছাপুর থেকে আসা অপর এক যাত্রী মোঃ ইলিয়াছ হোসেন বলেন, আপনি লাইফ জ্যাকেটের কথা বলছেন? দুর্যোগের মধ্যেও তো নৌকা চলে। গত সোমবার ৩নং সতর্ক সংকেত ছিল। আজকেও (মঙ্গলবার) সাগর প্রচন্ড উত্তাল স্পিড বোট, জাহাজ সব কিছুই তো চলছে। বিপদ হলে তো গভীর সাগরেও হতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের কপাল এরকমই। প্রতি মুহূর্তেই ঝুঁকি নিয়ে চলছি আমরা। না চলেও তো কোন উপায় নেই। বাড়ি ফিরতেই হবে আবার কাজও করতে হবে। এসব ঝুঁকি ও মৃত্যুর জন্য কাকে দায়ী করেন? ইলিয়াছের কাছে এমন প্রশ্ন করলে হেসে উড়িয়ে দেন তিনি। বলেন, ভাই ভাসুরের নাম কেউকি মুখে নেয়? আপনাকে এসব কথা বলে কোন লাভ তো হবেই না বরং উল্টো আমি রোষানলে পড়ব। এদিন কুমিরা ঘাটে কয়েক ঘণ্টা অবস্থানকালে দেখা যায়, স›দ্বীপ থেকে আসা যাত্রীর মত সেখানে যাবার যাত্রীও প্রচুর। স›দ্বীপগামী যাত্রীরাা লাইন দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন। এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে সারিকাইত এলাকার বাসিন্দা আজমল হোসেন বলেন, দুপুর ২-৩টায় জাহাজ বে-ক্রশ ইন্টার ন্যাশনাল ছাড়লে ঐ জাহাজে তিনি স›দ্বীপ যাবেন। এই আবহাওয়াতে কোন ঝুঁকি মনে করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঝুঁকি থাকলেও না গিয়ে তো কোন উপায় নেই। ঐ জাহাজে তার মত আরো আড়াইশ-তিনশ যাত্রী যাবেন। তাই কপালে যা আছে তা মেনে নিয়েই যেতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে এ বিষয়ে কথা বলতে চেয়ে জেলা পরিষদের ঘাটের ইজারাদার মোঃ আনোয়ার চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলতে একাধিকবার তার মোবাইলে ফোন করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ