Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

আতঙ্কে পথ চলতে হয় সব শ্রেণির মানুষকে

মলম পার্টি ও ছিনতাইকারীরা ফের সক্রিয়

| প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : জীবনটা হাতে নিয়ে ঘর থেকে বের হতে হয় পথচারীদের। পথেঘাটে বেরুলেই একদিকে সড়ক দুর্ঘটনার ভয় তো আছেই তার ওপর ছিনতাইকারী ও মলম পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছে বেশ কিছু পরিবার। ব্যবসার শেষ সম্বল হারিয়ে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়েছেন কেউ কেউ। পথের এ ছিনতাই কবল থেকে বাদ যায় না প্রশাসনের লোকজনও। উভয় সংকটের ঝান্ডা মাথায় নিয়ে কোনোমতে জীবন সংগ্রামের পথ বেয়ে নিরুপায় প্রায় জনপদের সাধারণ লোকজন। এমনটাই মনে করেন রূপগঞ্জের সুশীল সমাজ। সূত্র জানায়, সাংবাদিক, পুলিশ, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজনের পকেটের টাকা ছিনতাইকারী ও মলম পার্টি তাদের পকেটে নিতে খুন করতেও দ্বিধা করে না। অনায়াসে ছুরি বসিয়ে কিংবা বিষাক্ত স্প্রে বা মলম মেখে জীবননাশ করেই লুটে নেয় সাথে থাকা অর্থকড়ি। ফলে ক্রমেই অনিরাপদ হয়ে উঠছে রাস্তাঘাট। ভয় আর আতঙ্ক নিয়েই মানুষজন জীবিকার তাগিদে বের হচ্ছেন। সম্প্রতি গাউছিয়া তাঁতবাজারের ব্যবসায়ী হাফেজ আবদুর রহমান তার আলবারাকা ঘড়ির দোকানের বিভিন্ন মালামাল ক্রয় করতে ঢাকার চকবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। এ সময় ভুলতা এলাকার থেকে মেঘলা পরিবহনে মলম পার্টির দুজন সদস্য যাত্রীবেশে পাশের সিটে বসেন। গাড়িটি ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় পৌঁছলে উক্ত দলের এক সদস্য ব্যবসায়ী আবদুর রহমানকে একটি চকলেট খেতে দেয়। এ সময় বিশ্বাস করে তা মুখে দেয়। পরে কখন সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে তা বলতে পারে না। সিটে ফেলে রেখে অজ্ঞান পার্টির লোকজন ব্যবসায়ীর পকেটে থাকা ৪০ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে বাসের শেষ গন্তব্য কলাবাগান পৌঁছুলে বাসের চালক তাকে দেখে চিনতে পারে। পরে বাসায় খবর দিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। ৩ দিন পর জ্ঞান ফিরে ব্যবসায়ী আবদুর রহমানের। একই এলাকার গাউছিয়া মার্কেট-১ এর একটি কসমেটিকসের দোকানে ক্রেতাবেশে প্রবেশ করে মহিলা পকেটমার চক্র। তারা মধুখালী এলাকার গৃহিণী তাহছিনা আক্তারের হাতব্যাগে থাকা ৫ হাজার টাকা চোখের পলকে ছিনিয়ে নেয়। গৃহিণী প্রথমে তা টের না পেলেও ক্রয়কৃত পণ্যের দাম দিতে গিয়ে বুঝতে পারেন টাকা খোয়া গেছে। এ সময় কসমেটিকস দোকানের সিসি ক্যামেরায় ওই পকেটমার চিহ্নিত হলেও মহিলা হওয়ায় ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা তাদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেননি। একইভাবে কর্তব্য কাজ শেষে গোলাকান্দাইল ৫নং ক্যানেল পাড় দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে রাত ৮টার দিকে বাড়ি ফিরছিলেন বরপার দিকে চ্যানেল জিটিভির ক্যামেরা পার্সন রুবেল সিকদার ও দৈনিক আলোকিত সকালের তুষার আব্দুল্লাহ। পথিমধ্যে পুলিশ পরিচয়ে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে একটি অস্ত্রধারী সংঘবদ্ধ চক্র। এ সময় উভয়ের গলায় ধারালো চাপাতি ও কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে পকেটে থাকা টাকা পয়সা ও মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে যায় চক্রটি। তবে সাংবাদিক পরিচয় জানতে পারায় মোটরসাইকেল না নিয়েই পালিয়ে যায় তারা। অপর এক ঘটনায় সেলিম মিয়া (২২) নামে এক অটোরিকশা ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সেলিম মিয়া চরপাড়া এলাকার শুক্কুর আলীর ছেলে। রূপগঞ্জ থানা সূত্রে জানা যায়, সেলিমসহ একটি ছিনতাইকারী সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে কাঞ্চন পৌরসভার চরপাড়া ও তার আশপাশ এলাকায় অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ছিনতাইসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করে আসছে বলে পুলিশের কাছে সংবাদ ছিল। তাই তাকে আটক করে জেলে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ক্রেতাবেশে ও ডিলার সেজে ব্যবসায়ীদের গতিবিধি নজরদারি রাখেন চক্রটি। এ চক্রের রয়েছে নারীসহ বিভিন্ন স্পটে ৫ শতাধিক সদস্য। তারা সুযোগ বুঝে পথচারী ও ব্যবসায়ীদের ওপর হানা দেয়। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েই এ হামলা চালায় বলে জানা গেছে। কোনো কোনো ছিনতাই কাজে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পূর্ব শত্রæতার জের ও জমিজমার শত্রæতায় প্রতিশোধ নিতে ভাড়া করা হয় এসব চক্রকে। সূত্র আরো জানায়, কাঞ্চন মায়ারবাড়ি, বাহ্মণখালীর হাবিবনগর, পূর্বাচলের ৩০০ ফুট রাস্তা, কালনী, হিড়নাল, মুড়াপড়া মঠের ঘাট, ব্রাহ্মণগাঁও বেবিস্ট্যান্ড, কালাদি বেবিস্ট্যান্ড, রূপসী চৌরাস্তা, ডেমড়া স্টাফ কোয়ার্টার হতে চনপাড়া এলাকাসহ বেশ কিছু এলাকায় দিনদুপুরে এমন অহরহ ছিনতাইর কবলে পড়ছে যাত্রী ও পথচারীরা। এসব প্রতিরোধে থানা প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নেই বলে মনে করেন স্থানীয়রা। তাই দিন দিন ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে রূপগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ। এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ওসি ইসমাইল হোসেন বলেন, রাস্তাঘাটে এমন ঘটনায় অনেকে অভিযোগ করতে আসেন না। ফলে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় প্রতারক চক্র। তারা কৌশল পাল্টায় বলে তাদের ধরতে হিমশিম খাচ্ছে থানা পুলিশ। এসব হাইওয়ে পুলিশের কাজ বলে মন্তব্য করেন তিনি। থানা পুলিশের জনবল সংকটের কারণও রয়েছে বলে জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ