Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

তিস্তার পানির দাবিতে জাতিসংঘে যান : মির্জা ফখরুল

| প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম


শাহরিয়ার কবির বাচ্চু সাহেবরা প্রেসিডেন্ট জিয়ার সঙ্গেও ঘুরে বেড়িয়েছেন
স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তিস্তার পানি নিয়ে অনেকেই আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে আশ্বাসেরও ইতি টেনেছেন। তিনি না বলেছেন। তাই সরকারের উচিত আন্তর্জাতিক আদালতে জাতিসংঘে যাওয়া। গতকাল এক অনুষ্ঠানে ভারতের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমার পাওনাটা কোথায়? পাওনার কথা বললেই আমি ভারতবিরোধী হয়ে গেলাম? আমরা ভারতের জনগণের বিরুদ্ধে নই।
তিনি বলেন, শাহরিয়ার কবির, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু সাহেব প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতেন। তারা জিয়াউর রহমান সাহেবকে অস্বীকার করতে পারবেন না।
সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও জিয়াউর রহমান গবেষণা পরিষদের উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়। অনুষ্ঠানে ‘জিয়াউর রহমান বীরোত্তম’ সংকলিতগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও সংগঠনের ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিস্তার পানির ন্যায্যা দাবি জাতিসংঘে তুলতে পরামর্শ দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন,  এই সরকার দেশের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে দিয়েছে। দুঃখ হয়, যখন দেখি প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে ফিরে আসলেন আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাতে পারিনি। কারণ, তিনি আমাদের জন্য কিছু আনলেন না, দিয়ে আসলেন। আমরা ন্যূনতম যে তিস্তা নদীর পানি, সেটাও আবার কয়েকজন আশ্বাস দিলেন- এটা খুব শিগগিরই হবে। মমতা (পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) গতকাল (মঙ্গলবার) সেটা শেষ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে প্রশ্নই উঠতে পারে না। আমার তিস্তায় কোনো পানি নাই, পানি দেয়ার কারণ নাই। আমরা বলব, অভিন্ন নদীর হিস্যার প্রয়োজনে জাতিসংঘে যাক সরকার, যাতে করে আমরা আমাদের ন্যায্য হিস্যা পাই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমার পাওনাটা কোথায়? আমার পাওনার কথা বললেই আমি ভারতবিরোধী হয়ে গেলাম? আমি কখনোই ভারতবিরোধী নই। আমরা ভারতের জনগণের বিরুদ্ধে নই। আমার অধিকার যারা হরণ করে, আমার নেতৃত্ব যদি সেই অধিকার রক্ষা করতে না পারে, তার সমালোচনা অবশ্যই করব। যারা সরকারে আছেন, তাদের দায়িত্ব হচ্ছে আমার স্বার্থ রক্ষা করা, তারা সেই স্বার্থ রক্ষা করতে পারেননি। এই সরকার ব্যর্থ হয়েছে আমাদের দেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষা করতে।
হাওরের ব্যাপক বন্যার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আজকে হাওরের পানির ঢল  নেমেছে। কোত্থেকে নেমেছে উজান থেকে। সেখানে কোনো বাঁধ দেয়ার ব্যবস্থা নেই,  কোনো প্রকল্প নেই আমাদের এদিকে। তারা (ভারত) বাঁধ দিয়ে যখন বেশি বৃষ্টি হয়, পানি ছেড়ে দেয়, আমরা ডুবে যাই, তলিয়ে যাই। এটা তো হতে পারে না। আন্তর্জাতিক আইন আছে অভিন্ন নদীগুলোর ক্ষেত্রে- সেটা আমরা চাই, অবিলম্বে তার ওপরে চুক্তি হোক। এটার জন্যে প্রয়োজনে জাতিসংঘে যাক সরকার যাতে করে আমরা আমাদের ন্যায্য হিস্যা পাই।
নির্বাচন ও সহায়ক সরকার প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা গণতন্ত্র চাই, আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তন চাই। সেই নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায়। আমাদের জনগণকে তাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে হবে পুরোপুরিভাবে।
নির্বাচন করার জন্য ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে, আমাকে জায়গা দিতে হবে। আমাকে কথাই বলতে  দেয়া হবে না, আমার জনসভা করার জন্য অনুমতি দেয়া হবে না, র‌্যালি করার জন্য অনুমতি দেয়া হবে না। কোথাও একটা সভা করতে গেলে বলবে নাশকতার পরিকল্পনা করছিল। এভাবে আমাদের অসংখ্য ছেলেকে ধরে নিয়ে যায় নাশকতার অভিযোগে।  
সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে আবারো জেলে নিয়েছেন। জেলে পুরে বেশি দিন রাখা যাবে না, বিরোধী নেতাকর্মীদের হত্যা করেও কাজ হবে না। এ দেশের মানুষ অধিকার আদায়ের জন্য অতীতে যেভাবে সোচ্চার হয়েছে, আন্দোলন করেছে, ছিনিয়ে এনেছে, এখনো মানুষ তার অধিকার ছিনিয়ে আনবে।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বহুমুখী প্রতিভা ও দূরদর্শিতার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে অতি অল্প সময়ের মধ্যে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন এবং উন্নয়নের দিকে অত্যন্ত দ্রæততার সাথে যাচ্ছিলেন। কৃষি, শিল্প, সংস্কৃতি- কোথায় হাত দেননি জিয়াউর রহমান। বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গায় যাবেন, দেখবেন এখনো তার (জিয়াউর রহমান) অস্তিত্বটা আছে।
আজকে যে শাহরিয়ার কবির সাহেব অনেক কথা বলেন, বহু কথা বলেন। এই শাহরিয়ার কবির সাহেব জিয়াউর রহমান সাহেবের সঙ্গে হেলিকপ্টারে করে ঘুরে বেড়াতেন, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু সাহেব জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতেন। তারা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন যে, জিয়াউর রহমান সাহেবকে অস্বীকার করতে পারবেন।
সংগঠনের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন জিমির সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেহজর জেনারেল (অব.), সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, খন্দকার আব্দুুল মুক্তাদির, আব্দুুল হাই শিকদার, মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব, মুক্তিযুদ্ধ ও জিয়াউর রহমান গবেষণা পরিষদের মোক্তাদির হোসেন তরু, জামিল হোসাইন মোরসালিন, জোবায়ের হোসেন তুহিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সরকার আদালত-প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার করছে
বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দল রাষ্ট্রের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের করায়ত্ত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। আইন-আদালত, প্রশাসনসহ সকল ক্ষেত্রে  বেআইনি প্রভাব বিস্তারে মেতে উঠেছে সরকার শুধু নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদল নেতা মোকাদ্দেম হোসেন সজল, এহসানুল কবির রিপন, আব্দুুল মতিনসহ ২৫ জনকে দ্রæত বিচার আইনে পাঁচ বছরের সাজা দেয়ার ঘটনায় এই বিবৃতি দেন বিএনপি মহাসচিব। এ ঘটনায় তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, স¤প্রতি সমঝোতা স্মারক ও বিভিন্ন চুক্তি নিয়ে দেশবাসীর তীব্র ক্ষোভ, হাওরে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের আহাজারি এবং গুম, খুন ও বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঢাকতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে সরকার।
বিএনপি মহাসচিব অবিলম্বে ওই ২৫ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করে তাদের সাজা বাতিলের জোর দাবি জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ