Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চৌগাছায় কালবৈশাখীতে ধান-পান পাট ও শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতি

বজ্রপাতে মারা গেছে ২ গরু

| প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আবুল কাশেম, চৌগাছা (যশোর) থেকে : যশোরের চৌগাছায় বজ্রপাতে মারা গেছে ২টি গরু কালবৈশাখীতে ভেঙে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি ও শিলাবৃষ্টিতে উঠতি ইরি-বোরো ধান, পান, পাট, আম ও শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সোমবার হঠাৎ উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টির তান্ডবে প্রায় ৬শ’ হেক্টর জমির পাকা ধান প্লাবিত হয়েছে। কৃষকের নয়ন ভরা স্বপ্ন ভেঙে গেছে নিমিশে, নেমে এসেছে হতাশা। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে কয়েকটি গ্রাম। কালবৈশাখী বৈরী আবহাওয়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎই ধারণ করে এক মূর্তিমান রূপ। শুরু হয় শিলাবৃষ্টি ও প্রচন্ড ঝড়। আর এই শিলাবৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার শত শত একর জমির ইরিধান, নষ্ট হয়েছে পানের বরজ, আম, পাটসহ শাকসবজির ক্ষেত। বিশেষ করে ক্ষেতে কেটে রাখা ধানে বেশি ক্ষতি হয়েছে। কৃষকের কাটা ধানের ক্ষেতে জমে রয়েছে অথৈ পানি। এলোমেলো ঝড়-বাতাসে ধানগাছ মাটির সাথে মিশে গেছে। নিচু এলাকার ক্ষেতের এসব ধান পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। প্রচন্ড ঝড়ে আম ক্ষেত ও পানের বরজগুলো ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। উপজোলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলার ১৪ হাজার ৭৩২ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান, ১ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে মিষ্টিকুমড়া, লাউ, পটল, কলা, মরিচ, বেগুন, শসা, উচ্ছে, পুঁইশাক, লালশাক, ধনিয়াসহ বিভিন্ন জাতের তরিতরকারির চাষ হয়েছে। হঠাৎ কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টির তান্ডবে প্রায় সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। সরেজমিনে মাঠে-মাঠে ঘুরে দেখা গেছে, সোনালি পাকা ধান বাতাসে দোল খেলেও আবহাওয়ার বৈরী ভাবের ফলে সামান্য পরিমাণ জমির ধান কাটা হয়েছে। আর যা কাটা হয়েছে তাও ঘরে তুলতে পারেনি কৃষক। মাঠের প্রায় সব ক্ষেতের ধানই পেকে গেছে। আর মাত্র ১০/১২ দিন আবহাওয়া ভালো থাকলে কৃষকের অধিকাংশ ধান ঘরে উঠে যেত। এদিকে প্রায় ৬শ’ হেক্টর জমির বরজভরা পান, বাগানভরা আম, ক্ষেতভরা শাকসবজি ও অন্যান্য ফসল হঠাৎ কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টির তান্ডবে নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার হাকিমপুর, নারায়ণপুর, স্বরূপদাহ, সুখপুকুরিয়া, ধুলিয়ানী, চৌগাছা, ফুলসারা, সিংহঝুলীসহ পৌর এলাকার ইছাপুর, পাঁচনমনা, তার্ণিবাস, বেড়বাড়িসহ নি¤œ অঞ্চল প্লাবিত হয়ে ইরি-বেরো ধান, পান, পাট, মরিচ, বেগুন, লাউ, শসা, উচ্ছে, পুঁইশাক, লালশাক, ধনিয়াসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার খড়িঞ্চা গ্রামের কৃষক সামাউল ইসলাম জানান, এক বিঘা জমিতে বোরোধান চাষ করেছিলাম, যা ৫/৬ দিনের মধ্যে ঘরে উঠে আসত। কিন্তু আবহাওয়ার বৈরী আচরণের ফলে তা কাটা সম্ভব হয়নি। হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে প্রায় সব শেষ হয়ে গেছে। টেংগুরপুর গ্রামের কৃষক নুরুল আমিন জানান, আমি এক বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করেছিলাম কিন্তু গতকালের প্রবল বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে মরিচ গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলার রামভাদ্রপুর গ্রামের পান চাষি জামাল হোসেন জানান, এই ক’দিনের বৃষ্টির পানিতে আমার প্রায় ২ লাখ পান পচে নষ্ট হয়ে গেছে। পৌর এলাকার বিশ্বাস পাড়া গ্রামের কৃষক মাহিনুর রহমান বলেন, আমাদের মাঠে শাকসবজির সমস্তটায় পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। কাটা ধান পানিতে ভাসছে। বজ্রপাতে মারা গেছে উপজেলার কমলাপুর গ্রামের কৃষক মমিনুর রহমানের দুটি হালের বলদ। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ২ লাখ টাকা। ফতেপুর বাঁওড় এলাকায় বিদ্যুতের ৫টি খুঁটি ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎবিহীন রয়েছেন উপজেলার ধুলিয়ানী ইউনিয়নের ফতেপুর, কুষ্টিয়া-রামভাদ্রপুর, আজমতপুর, ধুলিয়ানী, মক্তারপুর, উজিরপুর, ভাদড়াসহ কয়েকটি গ্রাম। এ ব্যাপারে এই প্রতিবেদক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে কৃষি অফিসে গেলে কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ একেএম শাহাবুদ্দিন বলেন, হঠাৎ কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টিতে উঠতি ইরি-বোরো ধান-পান, পাট, আম ও শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দাবি চৌগাছা উপজেলাকে দুর্যোগ কবলিত এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করা হোক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ