Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

রাজারহাটে পুকুর পুনঃখনন প্রকল্পে অনিয়ম তদন্তের দাবি

| প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে : কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ‘রংপুর বিভাগে মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পুকুর পুনঃখনন কাজের কোটেশনে ঘাপলার অভিযোগ উঠেছে। অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে ভুয়া কোটেশন দেখিয়ে প্রকল্পের আওতায় কর্মরত ছিনাই ইউনিয়নের সম্প্রসারণ কর্মীকে পুকুর পুনঃখননের কাজ দেয়া হয়েছে। এতে প্রতিযোগিতা করে কাজ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় হবে বলে অভিযোগ করেছেন প্রকৃত ঠিকাদারগণ। এদিকে এই কোটেশনের বিষয়ে একেক কর্তৃপক্ষ একেক রকম বক্তব্য দিয়েছেন। তারা এ বিষয়ে একে অপরকে দায়ী করেছেন। প্রকল্প পরিচালক ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, কোটেশন উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে করা হয়েছে। অপরদিকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দাবি, কোটেশন প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় থেকে করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে রংপুর বিভাগে মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পটি বিগত ২০১৫ সালে শুরু হয়েছে। আগামী ২০১৮ সালে এর কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ অবস্থায় ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এই প্রকল্পের আওতায় রাজারহাট উপজেলার আবাসন পুকুর ও উকিলের ছড়া বিল পুনঃখনন কাজের অনুমোদন আসে। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিষয়টি গোপন রেখে রংপুর বিভাগের আওতায় রাজারহাট উপজেলা মৎস্য অফিসের ছিনাই ইউনিয়ন সম্প্রসারণ কর্মী শাহ মো. মোস্তাফিজুর রহমান রিজু খন্দকারের সাথে যোগসাজশ করে তার নামে ভুয়া কোটেশন তৈরি করে তাকে কাজের নির্দেশ প্রদান করেছেন। উক্ত ব্যক্তি এরই মধ্যে আবাসন পুকুর পুনঃখনন কাজ শুরু করলেও বর্ষার কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। অথচ কাজ ছাড়াই বিল উত্তোলনের পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদার সফিউর রহমান, লিয়াকত আলী বাবু ও আজাদ অভিযোগ করেন, পুকুর পুনঃখননের কাজটির কোটেশন অত্যন্ত সঙ্গোপনে করা হয়েছে। এর ফলে তারা প্রতিযোগিতা করে কাজ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় হবে বলে জানান। এ ঘটনায় প্রকৃত ঠিকাদারদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করেন, সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভুয়া কোটেশনের মাধ্যমে প্রকল্পে অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মরত কর্মী শাহ মো. মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে রিজু খন্দকারকে পুকুর খননের কাজ দেয়া হয়েছে। এই কর্মী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার নিকটাত্মীয়। তারা এর তদন্ত দাবি করেন। উপজেলা মৎস্য কমিটির সদস্য আমজাদ হোসেন জানান, পুকুর পুনঃখননের কোটেশন বিষয়ে কিছু জানেন না। এ বিষয়ে কোন সভায় তাকে ডাকা হয়নি। অপর সদস্য যোগেন্দ্র নাথ জানান, উকিলের ছড়া বিলটি মৎস্য চাষের জন্য তিনি লিজ নিয়েছেন। বিলটি পুনঃখননের কাজ প্রসঙ্গে তাকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কাজগুলো মন্ত্রণালয় থেকে রিজু খন্দকার এনেছেন। সেই করবে। এরপর কবে কোটেশন করা হয়েছে জানি না। কমিটির সদস্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান জানান, অনেক মিটিংয়ের চিঠিই তো আসে। সব মিটিংয়ে যাওয়া হয় না। তবে এ বিষয়ে কোনো চিঠি পাননি। কোনো সভাতেও যাননি। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হাশেম জানান, কোটেশনের বিষয়ে কিছু জানেন না। তবে কয়েকদিন আগে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাকে আবাসনের পুকুর পুনঃখননের কাজ দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। এ বিষয়ে রাজারহাট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহমুদুন্নবী মিঠু বলেন, রংপুরে অবস্থিত পিডি অফিস থেকেই সবকিছু ড্রিল হয়। কোটেশন হয়েছে রংপুর থেকে। কাজ পেয়েছে রিজু। কত টাকার কাজ তার কাগজপত্র পিডি অফিসে আছে। সেখানে যোগাযোগ করুন। তাছাড়া রিজু’র খালাতো ভাই জয়েন্ট সেক্রেটারি-আগে জেলা মৎস্য অফিসার ছিলেন। তাকে দিয়ে কাজ করে নেয় আর কি। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান জানান, এই প্রকল্পের কার্যক্রম পিডি অফিস থেকে সরাসরি উপজেলা অফিসের মাধ্যমে করা হয়। তারপরও জেনেছি, আবাসন পুকুর পুনঃখনন প্রকল্পের বরাদ্দ ৫ লাখ এবং উকিলের ছড়া বিল পুনঃখননের বরাদ্দ ৬ লাখ মোট ১১ লাখ টাকা। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. নজরুল ইসলামের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দু’টি পুকুর পুনঃখনন কোটেশন রাজারহাট উপজেলা অফিস থেকেই হওয়ার কথা। এখন অফিসের কাজে ঢাকায় আছি। ফেরার পর কাগজপত্র দেখে বিস্তারিত তথ্য দেব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ