Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শেভরনের গ্যাসক্ষেত্র কিনে নিচ্ছে চীন

বাংলাদেশকে না জানিয়ে অন্য কোন দেশের কাছে সম্পদ বিক্রি না করতে মন্ত্রণালয়ের চিঠি

| প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম



বিশেষ সংবাদদাতা : বাংলাদেশের সম্পদ বিক্রির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে আমেরিকার কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ। চীনের হিমালয় এনার্জি কোম্পানি লিমিটেড এই সম্পদ কিনে নিচ্ছে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস ক্ষেত্রটি আমেরিকার পরিবর্তে চীনের নিয়ন্ত্রণে যাবে। তবে এই সম্পদ বাংলাদেশকে না জানিয়ে অন্য কোন পক্ষের কাছে হস্তান্তর কিংবা বিক্রি না করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে শেভরনকে চিঠি দেয়া হয়েছে।  
হলিআর্টিজানে হামলার কিছুদিন পর অক্টোবর মাসে শেভরন বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার কার্যক্রম শুরু করে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়। বিদেশী সংবাদ মাধ্যমে এ সংবাদটি ফলাও করে প্রকাশও হয়েছে। তখন শেভরন কর্তৃপক্ষ বলেছিল, চীনের জিনহুয়া কোম্পানির সাথে সম্পদ বিক্রির বাণিজ্যিক আলোচনা চলছে। সে সময় জিনহুয়া ওয়েল-এর মুখপাত্র ঝ্যাং শিয়াওদি রয়টার্সকে জানান, শেভরনের সম্পদ কেনার জন্য বাণিজ্যিক আলোচনা চলছে।
এদিকে, এ বিষয়টি নিয়ে  পেট্রোবাংলা এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
অপরদিকে পেট্রোবাংলা কোন প্রতিক্রিয়া না জানালেও শেভরনের ব্যবস্থাপক শেখ জাহিদুর রহমান বলেন, পেট্রোবাংলা শেভরনের অন্যতম অংশীদার। নিয়ম অনুযায়ী যথাসময়ে এ বিষয়ে পেট্রোবাংলাকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। শেভরনের সম্পদ বিক্রির বিষয়াদি নিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ রয়টার্সকে জানিয়েছেন, শেভরনের সম্পদ কিনে নেয়া বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে কি না, তা এখনও যাচাই করে দেখছে ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেঞ্জি। পরামর্শকের প্রতিবেদন হাতে আসার আগে তাড়াহুড়া করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। সে পর্যন্ত সময় প্রয়োজন। আশা করব, আমাদের অনুরোধ শেভরন রাখবে।
সূত্র জানায়,  শেভরনের সকল সম্পদ এবং দায় কিনে নিচ্ছে হিমালয়। এখন থেকে বাংলাদেশের তিনটা গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানা, মৌলভীবাজার ও জালালাবাদ থেকে গ্যাস উত্তোলন ও ক্ষেত্র পরিচালনা করবে হিমালয় এনার্জি। বর্তমানে প্রতিদিন মোট গ্যাস উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক এই তিন ক্ষেত্র থেকে আসে।
উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে বিদেশী কোন কোম্পানি তাদের সম্পদ অন্য কোম্পানির কাছে বিক্রি করতে পারে। তবে পেট্রোবাংলার অনুমোতি নিতে হবে। বাংলাদেশ শেভরনের সম্পদ কিনতে চাইলেও সে বিষয়ে উদ্যোগের কোন অগ্রগতি হয়নি। শেভরনের গ্যাসক্ষেত্রগুলো কেনার বিষয়ে পেট্রোবাংলাই অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা। শেভরনের সম্পদ কেনার জন্য পেট্রোবাংলা আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনাও করেছে বলে জানা গেছে। এজন্য আন্তর্জাতিক জ্বালানি উপদেষ্টা উড ম্যাকেঞ্জিকে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়াও চলছিল। তাদের শেভরনের সম্পদ মূল্য নির্ধারণ ও ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখার কথা ছিল বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
গত বছর অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার কথা জানায় শেভরন। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় লোকসান হয়েছে এমন কথা বলে বাংলাদেশসহ ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের সম্পদ বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানানো হয়েছি শেভরনের পক্ষ থেকে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, শেভরনের গ্যাসের উৎপাদন গত দুই বছর ধারাবাহিকভাবে কমেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছর শেভরন প্রায় চার হাজার ৬০০ কোটি টাকার গ্যাস পেট্রোবাংলাকে বিক্রি করেছে। যা ২০১৫-১৬ সালে এসে কমে হয়েছে চার হাজার কোটি টাকা। এই তিন গ্যাসক্ষেত্রে এক বছরের ব্যবধানে শেভরনের বিনিয়োগ কমেছে ১৯ শতাংশ।
সূত্র মতে, এ তিন ক্ষেত্রে ২০১৪ সালে শেভরন খরচ করেছে ৪১ কোটি ২৯ লাখ ডলার। ২০১৫ সালে করেছে  ৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। অন্যদিকে ২০১৩ সালে খরচের পরিমাণ ছিল ৪৮ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। এ হিসাবে দুই বছরে বাংলাদেশে শেভরনের বিনিয়োগ কমেছে ২২ কোটি ৮৯ লাখ ডলার।
চীনের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের পর এটাই বড় বিনিয়োগ হতে যাচ্ছে চীনের। এদিকে চীন থেকে বিদ্যুৎ আমদানিরও চিন্তা করছে বাংলাদেশ। বর্তমানে চীন-বাংলাদেশ যৌথভাবে ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। সব দিলে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে চীন হবে বড় অংশীদার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্যাস

২৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ