Inqilab Logo

শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১, ০৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মৌলভীবাজারে ১১৪ কোটি টাকারও বেশি ফসল ও মাছের ক্ষতি

| প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এস এম উমেদ আলী : অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওর, হাইল হাওর, বড় হাওর, সোনাদিঘি, কাওয়াদিঘির হাওর ও করাইয়ার হাওরসহ সাত উপজেলার ১৭ হাজার ৪৩২ হেক্টর জমি পানির নীচে তলিয়ে যায়। এর মধ্যে ১০ হাজার ২৭৬ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১১৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। অপরদিকে মৎস্য বিভাগ জানায়, হাকালুকি হাওরের পানিতে তলিয়ে থাকা ধান পচে অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস সৃষ্টি হয়ে মাছ, গৃহপালিত হাঁস, শামুক, কাঁকড়াসহ নানা প্রজাতীর জলজ প্রাণী মারা যায়। শুধু বিষক্রিয়ায় হাকালুকি হাওরে ২৫ মেট্রিক টন মাছ মারা গেছে। যার আনুমানিক মূল্য ৫০ লাখ টাকা। বোরো ধান তলিয়ে নষ্ট হওয়ায় দুর্ভোগ বাড়ছে এলাকার সাধারণ কৃষকদের মধ্যে। তাদের মাঝে বিরাজ করছে হাহাকার। ছয় মাসের ঘামঝরা পরিশ্রমের ফসল এক মুঠুও ঘরে আনতে পারেননি জেলার কৃষকরা। বোরো চাষিদের স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
ওই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেক সিন্ডিকেট চাল ব্যবসীয়রা ইতোমধ্যে কয়েক দফায় চালের দাম বৃদ্ধি করেছেন। যার কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে দু-মুঠু ভাত খেতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেক দিনমজুর-কৃষক।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার কাঞ্জার হাওর, মানিক হাওর, হাইল হাওর ও কাউয়াদিঘি হাওর পানির নীচে তলিয়ে আবাদকৃত ১০ হাজার ৪২৫ হেক্টের জমির মধ্যে সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে ৩৪৮ হেক্টর, শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওর পানির নীচে তলিয়ে আবাদকৃত ৯ হাজার ৫৬৬ হেক্টের জমির মধ্যে ২৫০ হেক্টর, রাজনগর উপজেলার সোনাদীঘি, কাইয়াদীঘি ও সিঙ্গাহুরা হাওর পানির নিছে তালিয়ে আবাদকৃত ১৩ হাজার ২০০ হেক্টের জমির মধ্যে ৯৮৭ হেক্টর, কমলগঞ্জ উপজেলার কেওলার হাওর পানির নিছে তালিয়ে আবাদকৃত তিন হাজার ৮৭৫ হেক্টের জমির মধ্যে ১০৯ হেক্টর, জুড়ি উপজেলা হাকালুকি হাওর ও কইরকোনা বিল পানির নীচে তলিয়ে গেছে আবাদকৃত পাঁচ হাজার ৪৭০ হেক্টের জমির মধ্যে তিন হাজার ২১৬ হেক্টর।
কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি হাওর, ডলডল হাওর, রফিনগর হাওর, খাদিমপাড়া হাওর, আলিয়ার হাওর, বহিষমারা বলি, মেঘাবিল, হাওর বিল, কালাপানির বিল, পালের বিল, হাগুয়া বিল ও লাউয়র বিলসহ অন্যান্য বিল পানির নীচে তলিয়ে গেছে আবাদকৃত ছয় হাজার ৫৫০ হেক্টের জমির মধ্যে তিন হজিরি ৩৯৬ হেক্টর, বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি হাওর, মালাম বিল ও হুয়ালা বলি পানির নীচে তলিয়ে গেছে আবাদকৃত চার হাজার ৩৪০ হেক্টের জমির মধ্যে এক হাজার ৯৭০ হেক্টর।
হাকালুকি হাওর পাড়ের ভুকশিমইল এলাকার মো. লিচু মিয়া, শামীম আহমদ, তৈমুছ আলী, সাদিপুরের কয়েছ আহমদ বটলাই, ফয়সল মিয়া, মো. নাসিম, হাবিজ আলীসহ অনেকেই জানান, চৈত্রের অকাল বন্যায় আমাদের সব শেষ। যেখানে লাখ টাকার ধান কৃষকের ঘরে উঠার কথা, সে খানে ওঠেনি এক কেজি ধানও। একেকটি পরিবারে ১০-১২ জন সদস্য তাদের খানি খোরাক হবে কি করে। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া চালাব কি করে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাজান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দিচ্ছে কৃষিবিভাগ। ক্ষতি পোষিয়ে উঠতে এ বছর আউশ ধান চাষে অনাবাদি পাঁচ হাজার হেক্টর জমি চাষের আওতায় আনা হচ্ছে।
হাওরজুড়ে মরছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। মরেছে শামুক, জোঁক, সাপ, ব্যঙসহ নানা প্রাণী। জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, হাকালুকি হাওরে ২৫ হাজার মেট্রিক টন মাছ মারা গেছে। যা টাকার অঙ্কে ৫০ লাখেরও বেশি। মাছ মারা গেছে কুলাউড়ায় আট মে. টন জুড়িতে সাত মে. টন ও বড়লেখায় ১০ মেট্রিক টন। তবে ক্ষতির এ পরিসংখ্যান স্থানীয় বিল ইজারাদার সঠিক নয় বলে দাবি করেন। চকিয়া বিলের ইজারাদার আনোয়ার হোসেন জানান, শুধু তার বিলেই প্রায় ১০০ কোটি টাকার মাছ মারা গেছে। অপরদিকে নাগুয়া বিলের ইজারাদার আব্দুর রব কামাল জানান, তার বিলে মাছ মরে ক্ষতি হয়েছে ৫০ লাখ টাকার। এ ধরনের ছোট-বড় মিলে হাকালুকি হাওরে বিল রয়েছে ২৩৮টি। কিন্তু কি পরিমাণ জলজ প্রাণীর ক্ষতি হয়েছে তা এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা দূষিত পানিতে জীববৈচিত্রে ভরপুর হাকালুকিতে বিরল ও বিলুপ্ত প্রজাতির জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৌলভীবাজার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ