Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বাংলাদেশের প্রতি ভারতের যে কোনো অন্যায়কে আ’লীগ অন্যায় বলে মনে করে না-রিজভী

হাওরে মাছের মড়ক তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে বিএনপির প্রশ্ন

| প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলে মাছের মড়ক-এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রুহুল কবির রিজভী। গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনের বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এই প্রশ্ন তুলেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, হাওর এলাকায় সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। সারাদেশে পুলিশ বিশেষ অভিযানের নামে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের আবারো গণগ্রেফতার।
রিজভী আহম্মেদ বলেন, হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যার পানির সাথে উজানের ইউরেনিয়াম খনির বর্জ্য ভেসে আসার ফলে জলজ প্রাণীর মড়ক ধরেছে। গণমাধ্যমসহ ফেসবুকে এই বিষয়টি এসেছে। এ বিষয়ে সরকার যে তদন্ত করেছে, তাতে সেখাকার পানি পরীক্ষা ছাড়াই বলা হচ্ছে পানিতে কোনো তেজস্ক্রিয়তা নেই।
এই সরকারের কোনো তদন্তই জনগণ বিশ্বাস করে না। পার্শ্ববর্তী দেশের সরকার বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের এতোই অকৃত্রিম বন্ধু যে, বাংলাদেশের প্রতি ভারত যেকোনো অন্যায়কে এরা অন্যায় বলে মনে করে না।
আণবিক শক্তি কমিশন বলেছে হাওরের বন্যার পানিতে তেজস্ক্রিয়তা নেই। আপনারা কিসের ভিত্তিতে বলেছেন, তেজস্ক্রিয়তা আছে- প্রশ্ন করা হলে রিজভী বলেন, আমরা বলছি, বিষয়টি পত্র-পত্রিকায় এসছে, ভারতের ফেসবুকে এসছে। যেভাবে জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে। বন্যার পানিতে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফসলাদির ক্ষয়ক্ষতি হয় কিন্তু জলজ প্রাণী মারা যায়- এটা কখনো শুনিনি। এই  যে মাছের মড়ক- এটা গণমাধ্যমেও এসছে। আমরা গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে বলছি।
গত রোববার আনবিক শক্তি কমিশনের তদন্ত দলের প্রধান ড. দিলীপ কুমার সাহা বলেছেন, সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার পানিতে ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। হাওরের পানি দূষিত হওয়ার পেছনে ইউরেনিয়ামের প্রভাব রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য শনিবার সুনামগঞ্জে যায় বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন রিজভী বলেন, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জসহ হাওর এলাকাগুলোতে মেঘালয়ের পাহাড় থেকে বয়ে আসা পানির ঢলে বিস্তৃীর্ণ এলাকার অধিবাসীরা এখন হাহাকার করছে। ধানক্ষেতগুলো পাহাড়ী ঢলে ভেসে গেছে। হাজার হাজার টন মাছ ও জলজ প্রাণী পচে গিয়ে সারা এলাকা এক বিভৎস পুঁতি দুর্গন্ধময় পরিবেশে মানুষ নি:শ্বাস নিতে পারছে না। লাখ লাখ মানুষের গৃহে খাবার নেই।
ধানক্ষেতগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ফসলের মৌসুমে কৃষকের গোলা ধানে ভরে উঠবে না। এখানে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই।
তিনি বলেন, কোনো ইসু বা আন্দোলন সংগ্রাম কিংবা কোনো কারণ ছাড়াই বিশেষ অভিযানের নামে দেশব্যাপী বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের আবারো গণগ্রেফতার শুরু করেছে। নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ ও ডিবি পুলিশ ব্যাপক তান্ডব চালাচ্ছে। বাড়িতে নেতা-কর্মীদের না পেলে তাদের পরিবারের সদস্যদের লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। এমনকি শিশুরাও রক্ষা পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিপীড়ন থেকে। আমরা এহেন গণগ্রেফতারের নিন্দা জানাচ্ছি। কেনো এই গ্রেফতার অভিযান? কেনো এই মিথ্যা মামলা দায়ের? গণবিরোধী সরকার যখন গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, যখন আন্দোলন সংগ্রামকে ভয় পায় তখন বেপরোয়াভাবে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়, গ্রেফতার করে।
যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমরা অবিলম্বে অমাণবিক, ন্যক্কারজনক পুলিশি অভিযান বন্ধের আহŸান জানাচ্ছি। এই অভিযান চালিয়ে সরকার পার পাবে না। বরং এর মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের পতনের স্বেচ্ছায় স্বাক্ষরদান করলো। সরকার দেশব্যাপী যে দুঃশাসন চালাচ্ছে তা থেকে উত্তরণে কোনো সমীকরণই কাজে লাগবে না।
মহানগর ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, চুয়াডাঙ্গা, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে ব্যাপক ধড়পাকড় ও হয়রানি-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন রিজভী।
তিনি বলেন, বিশেষ অভিযানের নামে গতকাল (রোববার) নয়া পল্টনে ঢাকা মহানগর কার্যালয়  থেকে ফেরার পথে ৯নং ওয়ার্ড নেতা শামসুদ্দিন বকুল ও মো. হারুণকে, জামালপুরে ১৮৯ জন, সাতক্ষীরায় ৪১ জন, ঝিনাইদহ ও মেহেরপুরে শতাধিক, বাগেরহাটে ৩৯ জন, পঞ্চগড়ে ৪ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। শিল্পনগরী টঙ্গি থেকে ২০ দলীয় জোটের ১৫ জন  নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মেহেরপুরে ২০০ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও ৭ জনকে আটক করা হয়েছে।
কেবল তাই নয়, রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় কুমিল্লায় নির্বাচিত মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি-পরোয়ানা জারির পাশাপাশি সিটির নির্বাচিত কাউন্সিলর একরাম হোসেন বাবলুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সরকার বকধার্মিক সাজছে
রিজভী বলেন, সরকারের পায়ের তলায় মাটি সরে গিয়ে চোরাবালির মধ্যে ডুবে যাচ্ছে। যার কারণে এখন তারা বকধার্মিক সাজছে। যে হেফাজতের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নিরীহ ছাত্র ও আলেমদের ওপর পৈশাচিক রক্তাক্ত আক্রমণ চালিয়ে হত্যাকান্ড চালানো হয়েছে তা দেশবাসী ভুলে যায়নি। বিশেষ নজরদারির নামে কওমী মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের জঙ্গিদের সাথে যুক্ত করে যেভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দলন-পীড়ন করেছে, তা নজিরবিহীন। এখন আবার সরকার সেই হেফাজতের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলতে চাচ্ছে শুধুমাত্র ভোটের জন্য। এটা ভোটারবিহীন সরকার ও সরকার প্রধানের আপোষকামী অনৈতিক রাজনীতির এক কলঙ্কজনক দৃষ্টান্ত। অতীতেও বর্তমান সরকার প্রধান ধর্মীয় লেবাস পরিধান করে জনগণকে ধোঁকা দিয়েছেন ভোটের সময়, ভোট শেষ হওয়ার পর লেবাস খুলে স্বমূর্তি ধারণ করেন। এই দ্বিচারিতার রাজনীতি যাতে কেউ ধরতে না পারে, সেজন্য বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারে অভিযান চলাচ্ছে।
ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা সমাঝোতা স্মারকের বিরুদ্ধে জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়াকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সরকার ‘বিরোধী দলের ওপর নির্যাতনের’ পথ বেছে নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
গত ২২ এপ্রিল ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের হাতে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কালিদাসপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড নেতা শওকত আলী ফরাজী হত্যাকাÐের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানান রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন ভিপি জয়নাল, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম আজাদ, মোরতাজুল করীম বাদরু, মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ