Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মাছ না পাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে হাজারো জেলে পরিবার

ধরলার বুকে ধুধু বালুচর

| প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মহসিন আলী মঞ্জু, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) থেকে : কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ভেতর দিয়ে বয়ে চলা এক সময়ের উত্তাল ধরলা এখন ধুধু বালুচর। পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ধরলার বুকচিড়ে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। হারিয়ে গেছে কয়েক প্রজাতীর মাছ। ধরলার সুস্বাদু কর্তী, বরালি, আইড়, বাইন, চিলকি, বাঘাআইড়, কনে, পাপদা আর আগের মতো জেলেদের জালে ধরা পড়ে না। মাছ না পাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে হাজার হাজার জেলে পরিবার। ঋণের জালে জড়িয়ে পৈত্রিক ব্যবসা ছেড়ে কাজের সন্ধানে কেউ পাড়ি জমিয়েছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। কেউ অটোরিকশা চালান, কেউ বা চালানি মাছের ব্যবসা করেন, কেউ হয়েছেন দিনমজুর। খাদ্য আর বাসস্থানের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে কয়েক প্রজাতির পাখি। বাপ-দাদার কাছে শোনা, বিখ্যাত গায়ক আব্বাস উদ্দিন ফুলবাড়ীতে এক অনুষ্ঠানে গান গাইতে আসার সময়, ধরলা নদীর দু’পাশের বাঁশঝাড়, বড় বড় গাছে অসংখ্য বক পাখি আর শিকারিদের পুঁটি মাছ দিয়ে ফাঁদ দিয়ে বক ধরার দৃশ্য দেখে পথে গরুর গাড়িতে বসে, ফান্দে পড়িয়া বকা কাঁন্দেরে... ফাঁদ পাতাইছে ফাঁন্দি ভাইয়া... ধরলা নদীর পাড়ে। গানটি গরুর গাড়িতে বসে লিখে সুর করে অনুষ্ঠানে গেয়েছিলেন। বিখ্যাত সেই গান দেশ-বিদেশের মানুষের মুখে মুখে ফিরলেও ধরলা পাড়ের সেই বক আর নেই। বাঁশঝাড়ও উধাও হয়ে গেছে। পানি কমে যাওয়ায় ধরলা নদী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ডাবকি, হাড়গিলা, শল্লী, কোড়া, শামকুড়া, চখা-চখী, পানকৌড়ী, দলপিঁপি ইত্যাদি পাখি। এক সময় নদীর চরে দাপিয়ে বেড়াতো গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া প্রভৃতি গৃহ পালিত প্রাণী। গৃহস্তদের যার পালে যত বেশি গরু, মহিষ থাকতো তার সামাজিক মর্যাদা ততো বেশি হতো। নদীর পানি কমে যাওয়া, ঘনঘন নদীর গতি পরিবর্তন, নদীর চরে কৃষি কাজ শুরু হওয়ায় গরু, মহিষের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এখন চরে রাখালের বাঁশির সুর আর শোনা যায় না। সারাদিন চলে কৃষকের খোঁড়াখুঁড়ি। ফলে চর থেকে উধাও হয়ে গেছে কাশবন, ঝাউবন, ও কাটাবন। পানির অভাবে সকলের জীবন আজ বিপন্ন। অথচ একদিন ধরলার রূপ, লাবণ্য, ঐতিহ্য সবই ছিল। ৫০ বছর আগেও ধরলা ছিল ব্যবসা বাণিজ্যের অন্যতম মাধ্যম। লালমনিরহাট, ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম, এবং চিলমারীর বন্দর হয়ে দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে পণ্য আনা নেওয়া হতো। ১৫ শতকে চাঁদ সওদাগর তার চৌদ্দ ডিঙ্গা নিয়ে ধরলা নদী দিয়ে ভারত, চীন, প্রভৃতি দেশের সাথে বাণিজ্য করার লোক কাহিনী এখনো মানুষের মুখে মুখে। পানির অভাবে ধুধু প্রান্তরে পরিণত হওয়া ধরলার বুকে কৃষকেরা মাঝে মাঝে বোরো ধান চাষ করছেন। পানি কমে, চর পড়ে, ধরলা মরে যাচ্ছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে এক সময়ের উত্তাল ধরলা নদী মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ