Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাজিপুরে যমুনা ও ইছামতির ঢালে কালো বোরোর ফলনে কৃষকের মুখে ফুটছে হাসি

| প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

টি এম কামাল, কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে : শীতের শুরু থেকেই সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে যমুনা ও ইছামতি নদীর পানি কমতে থাকায় নিজেদের অভাব দূর করতে নদীর ঢালে চাষ করেছে ‘কালো বোরো ধান’। এই চালের ভাত সুস্বাদু হওয়ায় কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতি বিঘায় ফলনও পাওয়া যায় ১২ থেকে ১৪ মণ। জানা গেছে, কাজিপুর উপজেলা মূলত নদী বেষ্টিত। উপজেলা সদরের পূর্বপাশ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা নদী ও পশ্চিমপাশ দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতি নদী। নদী দু’টি বর্ষাকালে বন্যার সৃষ্টি করে। বন্যার পর নদীর ঢালে চাষিরা এবার কালোবোরো ধান চাষ করেছে। সু-স্বাদু হওয়ায় এ জাতের চালের আশপাশের উপজেলায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতি কেজি চাল বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। এরই মধ্যে ধানের গাছ থেকে শীষ বেরুতে শুরু করেছে। অল্প পরিশ্রম ও নাম মাত্র খরচে সোনালী ধানের শীষ দেখা দেয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটছে। কৃষি অফিস ও স্থানীয় কালো বোরো চাষিদের সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পূর্র্বপাশ দিয়ে যমুনা ও পশ্চিমপাশ দিয়ে ইছামতি প্রভাহিত হওয়ায় দু’ধারে জেগে ওঠে অনেক ঢালু চর। এসব চরের উর্বর পলি মাটিতে চাষিরা অধিকহারে স্থানীয় জাতের বোরো ধানের চারা রোপণ করেন। বিশাল বিশাল জেগে ওঠা চরে ফাঁকা রাখতে চান না বলেই সাধ্যমতো যে যতটুকু পারেন জমিতে ধান রোপণ করেন। বীজতলায় চারা তৈরির পর তা রোপণ শুরু হয়। চৈত্র মাসের মাঝামাঝি থেকে ফলন পাওয়া যায়। নদীর নিকটে হওয়ায় নদীর পানিতেই ধানের গাছ বড় হতে থাকে। কীটনাশক ও অন্য রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে কালোবোরো ধান চাষ করা হয়েছে। কালো বোরো ধান প্রতি বিঘায় সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ১৬ মণ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় চাষিরা ঘরে এই ফলন তোলার কিছুদিন পর আবার অন্য ধান ঘরে তোলে। ধান ঘরে তোলার পর চৈত্র মাসে খড় বিক্রি করে অনেক টাকা হাতে পায় নদী পাড়ের সংগ্রামী চাষিরা। কাজিপুর উপজেলা নতুন মাইজবাড়ী চরের চাষি আবুল হাসেম (৪৫) ও সোহেল (৩৮) জানান, জমির মালিক কে তা না ভেবে সুযোগ বুঝে চাষিরা ঢালু চরে কালো বোরো ধান চাষ করে থাকে। তারা দু’জন এবার প্রায় ৭ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছে। প্রাপ্ত ধান দিয়ে পরিবারের কয়েক মাসের চালের সংস্থান হবে। এছাড়া চৈত্র মাসের খরার সময় ঘাসের দুষ্প্রাপ্যতা দেখা দেয়। ওই খড় থেকে গবাদী পশুর আপদকালীন চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়। ধান চাষি জহির তালুকদার (৪৫) জানান, ধান চাষ করে ঘরে ফলন নেওয়ার পর পরের তিন-চার মাস চালের অভাব থাকে না। খোলা বাজারে চাল বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি। চাষে খরচ তেমন নেই। পানিও নদীর। শুধু একটু শ্রম দিলেই বিঘা প্রতি ১২ থেকে ১৪ মণ ধান পাওয়া যায়। তাই অনেকেই নিজেদের আর্থিক সামর্থ্য বাড়াতে এই ধান চাষ করে থাকে। কাজিপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মামুনুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, দেশের সব জায়গায় এ ধানের চাষ হয় না। তবে এ অঞ্চলের পরিশ্রমি চাষিরা আমাদের পরার্শক্রমে পরিত্যক্ত জমিতে ওই জাতের ধান চাষ করে চালের অভাব অনেকাংশে দূর করে থাকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ