বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : রায়পুরার দুর্গম চরাঞ্চলের বাঁশগাড়ি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই লাঠিয়াল বাহিনীর মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে ২টি হত্যাকান্ডসহ অর্ধ শতাধিক লোক হতাহতের পর গোটা বাঁশগাড়ি এখন এক অশান্ত জনপদে পরিণত হয়েছে। সেখানে সৃষ্টি হয়েছে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। সাধারণ মানুষ জান ও মালের নিরাপত্তা হারিয়ে সার্বক্ষণিক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। চেয়ারম্যান সিরাজুল হকের দল বন্দুকযুদ্ধে পরাস্ত হয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাবার পর আওয়ামী লীগ নেতা সাহেদ সরকারের লাঠিয়াল বাহিনী সেখানে বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়েছে। লাঠিয়ালরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ‘চাঁদা দাও, নয়তো আগুন খাও’ বলে চাঁদা দাবি করছে। যারা চাঁদা দিচ্ছে তারা এলাকায় কোনোরকমে গা বাঁচিয়ে থাকতে পারছে। আর যারা চাঁদা দিচ্ছে না তাদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে বাড়িঘর আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে।
গত ৪ দিনে দেড় শতাধিক বাড়িঘর লাঠিয়ালরা পুড়িয়ে দিয়েছে। ৫ শতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট করেছে। ধান, পাট, চাল, শস্যাদি, আসবাবপত্র, তৈজসপত্র, কাঁথা, বালিশ, কাপড়চোপড়, স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা, হাঁস-মুরগি, গরু ও ছাগলসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ লুট করে নিয়ে গেছে লাঠিয়ালরা। সিরাজুল হক চেয়ারম্যান ও তার বংশীয় আসকর বাড়ির লোকজনের বাড়িঘর সব জ্বালিয়ে ছারখার করে দিয়েছে।
লাঠিয়ালদের হাত থেকে দলবহির্ভূত সাধারণ নিরীহ মানুষও রেহাই পাচ্ছে না। সিরাজুল হকের সমর্থকরা জানিয়েছে, এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করেছে জাবেদ মাস্টার, মোসলেহ উদ্দিন মেম্বার ও তার ভাই আশাব উদ্দিন। তারা এখন প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এদিকে গত বুধবার রায়পুরার বাঁশগাড়ির চরে আওয়ামী লীগের দুই লাঠিয়াল বাহিনীর মধ্যে সংঘটিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত মাসুদ হত্যাকাÐের ব্যাপারে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মাসুদের স্ত্রী রাবেয়া আক্তার বাদি হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সাহেদ সরকারকে প্রধান আসামিসহ ৩১ জনের নামে ও ১৬ জনকে বেনামে আসামি করে রায়পুরা থানায় এ মামলা দায়ের করেছে। পাশপাশি বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে চেয়ারম্যান সিরাজুল হক বাদি হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলায়ও প্রধান আসামি করা হয়েছে সাহেদ সরকারকে।
পক্ষান্তরে সাহেদ সরকারের সমর্থক শারফিন হত্যার অভিযোগ দায়ের করার পরও মামলা রুজু করেনি পুলিশ। কারণ চেয়ারম্যান সিরাজুল হক নিজে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে শারফিনকে গুলি করে হত্যা করেছে বলে এজাহারে তাকে প্রধান আসামি করা হয়েছিল। সে এমপি রাজুর একনিষ্ঠ সমর্থক বলে পুলিশ এ মামলা নেয়নি। এই অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা শাহেদ সরকার। তিনি জানিয়েছেন, গত শুক্রবার রাতে শারফিন হত্যা মামলার এজাহার থানা পুলিশের এসআই জহিরুল ইসলামের নিকট দাখিল করা হয়। কিন্তু সকাল বেলায়ই এজাহার পায়নি বলে দাবি করেছে পুলিশ। যেই এমপির জন্য আমি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছি, সেই এমপি রাজু আমাকে ৩ বছর ধরে এলাকা ছাড়া করে রেখেছে। আমি এবং আমার পরিবার একেবারে সিএস রেকর্ড মূলে আওয়ামী লীগার। আমরা যুগ যুগ ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থেকেও আজ আওয়ামী লীগ শাসনামলে আমরা নিগৃহীত হচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, আমরা আমাদের বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আরো ২টি অভিযোগ দায়ের করেছি। পুলিশ এসব অভিযোগকারীকে ডেকে নিয়ে আরজি সংশোধন করে কঠিন ধারা বাদ দিয়ে দুর্বল ধারায় নামে মাত্র ২টি মামলা রুজু করেছে। এতে মূল আসামি চেয়ারম্যান সিরাজুল হক ও তার ৩-৪ সহযোগীকে এজাহার থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ওসি আজহারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই হত্যা মামলা গ্রহণ করব। থানায় এখনও পর্যন্ত এজাহার পৌঁছানো হয়নি। এজাহার এলেই মামলা রুজু করা হবে। জনগণের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না এলে পুলিশ নিজে বাদি হয়ে মামলা করার বিধান রয়েছে এ ব্যাপারে পুলিশ মামলা নিচ্ছে না কেন। জবাবে ওসি আজহার সাংবাদিকদের বলেন, এখনও সময় আছে, কেউ এজাহার দায়ের না করলে পুলিশই মামলা দায়ের করবে।
তবে ওসি আজহার জানান, নিহত শারফিন নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ গ্রামের মজিবুর রহমানের পুত্র। সে নিলক্ষার আলাল মিস্ত্রির শ্যালক। সে ভাড়াটে লাঠিয়াল হিসেবে বাঁশগাড়ির দাঙ্গায় যোগ দিয়েছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।