Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পাবনায় লিচুর গুটি ও বিভিন্ন স্থানে ফসল ও বাড়িঘর বিনষ্ট

ঝড় ও শিলাবৃষ্টি

| প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : গতকাল প্রবল ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বোরো ধানসহ ফসল ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। পাবনায় লিচুর গুটি বিনষ্ট হয়।
পাবনা জেলা ঈশ্বরদী উপজেলা সংবাদদাতা : পাবনায় এবার লিচুর বাম্পার ফলনের আশা করা হলেও  চারদিনের কালবৈশাখী ঝড়, শীলাবৃষ্টি লিচুর ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। গাছের গুটি হওয়া লিচু ঝড়-বৃষ্টি ও শীলে অনেকাংশেই নষ্ট হয়ে পড়ে গেছে। আবাদীরা এ নিয়ে হতাশায় আছেন। তারা বাম্পার ফলনের আশা করেছিলেন। পাবনার বিভিন্ন স্থানে লিচু গাছে অনেক গুটি ধরে ছিল। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টি বিনষ্ট করে ফেলেছে। পাবনা জেলায় এবার তিন হাজার  সাত শ’ হেক্টর জমিতে লিচু বাগান করা হয়। জেলার সবচেয়ে বড় লিচুর আবাদী এলাকা ঈশ্বরদীর ছলিমপুর। লাভজনক হওয়ায় এই স্থানে উন্নত জাতের লিচুর বাগান গড়ে ওঠে। মাটি লিচু বাগানের উপযোগী হওয়ায় প্রতি বছর ভালো ফলন হতো। এই স্থানের লিচু প্রথম চালানেই জেলার বাজার ও রাজধানী যেতো। এবারো এমনটি আশা করেছিলেন আবাদীরা। তারা জানান, লিচুগাছে গুটি আশার পর কয়েক দফা বিক্রি হয়। এরপর লিচু পাকার মুহূর্তে আরেক দফা বিক্রি হয়। যারা এগুলো কিনে নেন, তারাই এর রক্ষণাবেক্ষণ করেন। লিচু পাকার পর ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যায়। তারা পাবনা শহর ও বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজারে লিচু বিক্রি করেন। আর ট্রাকে লিচুর বড় চালান যায় ঢাকায়। পাবনার বোম্বে জাতের ও চায়না লিচু শেষ হওয়ার পরপর বাজারে আসে দিনাজপুরে প্রসিদ্ধ লিচু। সর্বত্রই এবার ফলন বিপর্যয়ে হয়েছে বলে জানা গেছে। লিচু গুটি অবস্থায় আরেক দফা ঝড়-বৃষ্টি আর শীল পড়লে প্রায় অর্ধেক লিচু বিনষ্ট হয়ে যাবে। আবাদীদের সূত্রে জানা গেছে, লিচু পাকার পর বৃষ্টি হলে আরেক বিড়ম্বনা দেখা দেয়। লিচুতে পোকার সংক্রমণ ঘটে। এই পোকা কীটনাশক দিয়ে দমন করা দ্রæত সম্ভব হয় না। লিচু বাগান ক্রেতারা দ্রæত এই লিচু বাজার মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। অনেকের লোকসান হয়।
ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
এস এম বাবুল (বাবর), ল²ীপুর থেকে জানান, ল²ীপুরে গত পাঁচদিনের অব্যাহত বৃষ্টিতে ফসলের মাঠে পানি জমে সয়াবিন, মরিচ, তরমুজ ও বাদামসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাচ্ছে হাজারো কৃষকের স্বপ্ন। পুঁজি হারিয়ে বড় ধরনের লোকসান পোহাতে যাচ্ছে জেলার কৃষক পরিবারগুলো। অসময়ের এমন বৃষ্টি যেন কৃষকদের সর্বনাশ ডেকে এনেছে।
১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে রামগতি উপজেলার চর সীতা, চর বাদাম, আলেকজান্ডার, বড়খেরী, চর আবদুল্লাহ, কমলনগর উপজেলার চর ফলকন, চর জাঙ্গালিয়া, চর কালকিনি, চর মার্টিন, চর লরেন্স, চর কাদিরা, চর বসু, ল²ীপুর সদর উপজেলার ভবনীগঞ্জ, চর উভুতি, আবিরনগর, লাহারকান্দি চর, রমনিমোহনসহ জেলার রায়পুর ও রামগঞ্জের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল এখন পানির নীচে। এতে সয়াবিনসহ বিভিন্ন বরি ফসল ডুবে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ল²ীপুর কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে জেলায় ৯২ হাজার ৩৩৬ হেক্টর জমিতে রবি ফসলের আবাদ হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় সয়াবিনের। জেলার পাঁচ উপজেলায় ৫০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় সাত হাজার ৯৫০, রায়পুরে সাত হাজার ৯৬০, রামগতিতে ১৮ হাজার ২০০, কমলনগরে ১৬ হাজার ৩১০ ও রামগঞ্জে ৮৫ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়। গত পাঁচ দিনের ভারী বর্ষণে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমির সয়াবিন এখন পানি নীচে রয়েছে। এমন পরিস্থিতির কারণে সয়াবিন চাষিরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বেন।
সরেজমিন দেখা যায়, মাঠে সয়াবিন ও মরিচ পাকতে শুরু করেছে। খুব শিঘ্রই কৃষক সয়াবিনের ফলন ঘরে তুলবেন। কৃষকদের মাঝে যখন স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছিল ফলন বিক্রি করে লাভবান হওয়ার, ঠিক তখনই সাগরে লঘুচাপ এবং প্রবল বৃষ্টিতে ডুবে আছে ফসল। ক্ষেতে জমে আছে পানি আর পানি।
ফুলবাড়ীতে বোরো ধানের জমি পানির নীচে
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, বোরো মৌসুমের শুরুতে অনুক‚ল আবহাওয়া আর কৃষি কর্মকর্তাদের সঠিক পরামর্শে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও অসময়ে টানা ভারী বর্ষণে ফুলবাড়ীসহ আশপাশের উপজেলার বেশির ভাগ মাঠের জমির ধানগাছ পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রায় পাঁচ-ছয়দিন ধরে মাঝে মধ্যেই হালকা বৃষ্টির সাথে বৈশাখী ঝড়ো হাওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বোরো ক্ষেত নুয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে গতকাল শুক্রবার রাতের টানা ভারী বর্ষণে উপজেলার বেশির ভাগ মাঠের বোরো ধানের গাছ পানিতে ডুবে গেছে।
গতকাল শনিবার সরেজমিন উপজেলার এলুয়ারী, কাজিহাল, বেতদিঘী,  দৌলতপুর, খয়েরবাড়ী, শিবনগর  ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠের প্রায় বোরো জমিতে অসময়ের বৃষ্টির পানি থই থই করছে। দ্রæত পানি নেমে না গেলে এসব জমির ধানগাছসহ সদ্য বের হওয়া ধানগুলো পচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। অল্প কয়েকদিন আগে বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে বোরো ক্ষেতে সেচের পানি সময়মতো দিতে না পারা কৃষকের এখন টানা বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাওয়া ধানের ক্ষেত নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই।
ঝড়ে তিনটি বাগানের সহস্রাধিক কলাগাছ তছনছ
রাজাপুর (ঝালকাঠি) সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠির রাজাপুরের পশ্চিম কানুদাশকাঠি গ্রামের গালুয়া ইউপির ৯ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ইসমাইল সরদারের প্রায় ১০০ শতাংশের তিনটি কলাবাগানের কলাসহ সহস্রাধিক কলাগাছ শনিবার রাতের কালবৈশাখী ঝড়ে তছনছ হয়ে গেছে। ইউপি সদস্য ঈসমাইল সরদার জানান, পশ্চিম কানুদাশকাঠি গ্রামের ইটভাটা সলংগ্ন একটি, মিস্ত্রীবাড়ির পূর্ব ও পশ্চিম পাশের দু’টি বাগানসহ তিনটি কলাবাগানের কলাসহ সহস্রাধিক রোপিত সাগর কলা, আনাজি কলা, কাঠালি কলা, শবরি কলাগাছ তছনছ হয়ে প্রায় চার লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও বাগানের বিদেশি কচুগাছ ও ফলের গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
দেড় হাজার হেক্টর বোরো ধান পানির নীচে
ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ময়মনসিংহের ঈশ^রগঞ্জে টানা বর্ষণে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর বোরো ধান পানির নীচে তলিয়ে গেছে। গত কয়েক দিনে টানা ভারী বর্ষণ হওয়ায় ওই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে এলাকার প্রান্তিক চাষিদের কাক্সিক্ষত বোরো ধান নষ্ট হওয়ায় চরম খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। ফলে মৌসুমের শুরুতেই কৃষকের চোখে-মুখে দেখা দিয়েছে হতাশার ছাপ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়ে ছিল ২০ হাজার ৭৭০ হেক্টর। এর মধ্যে এক হাজার ৫১০ হেক্টর হাই-ব্রিড ও ১৯ হাজার ৭০০ হেক্টর উফসি জাতের ধান। ভারী বর্ষণের ফলে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর নদী ও বিলের আধা-পাকা ধান তলিয়ে গেছে বৃষ্টির পানিতে। প্রায় ৫০ কিলোমিটার কাদামাটিয়া নদীতেই প্রায় হাজার হেক্টর আবাদী জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে।  বিল এলকার কয়েক শত হেক্টর জমির কাঁচা ধান তলিয়ে গেছে। বিলগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ সদর ইউনিয়নের শিরনি বিল, পুলুঙ্গা বিল, মাইজবাগ ইউনিয়নের কাতলা, শিবলী, বিলরাউল, হিঙ্গি ও কান্দি ভাঙ্গা। বড়হিত ইউনিয়নের আন্ড্রাইল, গোঁজা, বেইল, পাইঙ্গা, উল্কী, নাইওরী ও সখিনা। মগটুলা ইউনিয়নের, ভাÐার, হাতভাঙ্গা, খৈলাপুরী, বোয়ালী  ও ভাডাইল। রাজিবপুর ইউনিয়নের খেরুয়া, অলিয়া,  সরকার ও দেবস্থান বিল। উচাখিলা ইউনিয়নের রামপুর বিল। তারুন্দিয়া ইউনিয়নের  কৈইলা বিল। সোহাগী ইউনিয়নের বৌলা ও ডয়হা বিল। আঠারবাড়ী ইউনিয়নের হোনাছনিবিল। জাটিয়া ইউনিয়নের দিঘা, বার আলীয়া ও  কুমারুলী বিলের ধান বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে এলাকার প্রান্তিক চাষিদের কাক্সিক্ষত বোরো ধান নষ্ট হওয়ায় চরম খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। ফলে মৌসুমের শুরুতেই কৃষকের চোখে-মুখে দেখা দিয়েছে হতাশার ছাপ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ