হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
আবদুল আউয়াল ঠাকুর : আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার কোন বিকল্প নেই। এই সত্য সকল মহল অনুধাবন করলেও বাস্তবে একটি যাত্রীবান্ধব পরিবহন নীতির ব্যাপারে অনীহাই সকল সমস্যার মূলে কাজ করছে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, উচ্চহারের সুদ, চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক প্রভাব ও সড়ক অব্যবস্থাপনাই যাত্রী ভোগান্তির কারণ। স্বাধীনতার পর থেকে যতগুলো সমস্যা ঘুরে ফিরে বারবার আসছে তার মধ্যে পরিবহন সমস্যা অন্যতম। যখন সমস্যা প্রকট হয় তখন এ নিয়ে দুচার কথা শোনা যায় তারপর আবার অবস্থা যে তিমিরে ছিল সেখানেই ফিরে যায়। অন্যভাবে বললে বলতে হবে, পরিবহন সমস্যা আন্তঃসম্পর্কিত। দেখা যায়, সাধারণত যানজট-দুর্ঘটনা নিয়েই বেশি লেখালেখি হয় এবং এ নিয়েই সকলের ভাবনা অবর্তিত। যানটের সাথে সড়ক ব্যবস্থাপনা এবং পরিবহন ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক রয়েছে। সাধারণত যখন কোন দুর্ঘটনা ঘটে তখন তা চালকের অদক্ষতার কারণেই ঘটে থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই চালককে নিয়োগ দেন কারা? অথবা কেমন করে এসব চালক গাড়ি চালাবার লাইসেন্স পাচ্ছে ? এসব প্রশ্ন বিবেচনায় নিতে গেলে অনেক বিষয় সামনে এসে যাবে। পরিবহনের সাথে যারা জড়িত তাদের শীর্ষে রয়েছে মালিকরা। তারা ব্যবসা করছে। সে অর্থে এটি একটি ব্যবসা এবং বর্তমানে লাভজনক বলেই বিবেচনা করা হয়। এ খাতে বিনিয়োগ দিনদিনই বাড়ছে। একদিকে গাড়ি বাড়ছে অন্যদিকে জনসাধারণের দুর্ভোগও বাড়ছে। এই দুর্ভোগের নানা প্রকৃতি রয়েছে। দেশের সামগ্রিক যোগাযোগে পরিবহন খাতের যে অবদান তার বিশ্লেষণে এটা বলা যায়, এ খাত এখন জনভোগান্তির খাতে পরিণত হয়েছে। প্রতিবারের মত এবারেও দেখা গেল এ খাতের নৈরাজ্য প্রতিবিধানে যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তা অঙ্কুরেই ঝরে পড়ল। সে কারণেই ভাববার রয়েছে আর কতকাল রাজধানীসহ দেশের মানুষ মাস্তানির শিকার হবে।
এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই এই খাত সবসময়ই তথাকথিত প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং রয়েছে। রাজধানীতে সিটিং ব্যবস্থা ঠেকাতে উদ্যোগ নেয়ার দুদিনের মাথায় যোগাযোগমন্ত্রী বলছেন, সিটিং সার্ভিস বন্ধে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার ফলে জনগণের দুর্ভোগ হচ্ছে কষ্ট হচ্ছে, অনেকের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় নিয়ে সমাধান করা উচিত। এদিনে এক অনুষ্ঠানে বেসরকারি সড়ক পরিবহন খাতের সাথে জড়িত অনেকেই খুব প্রভাবশালী বলে তিনি মন্তব্য করেছন। বেসরকারি পরিবহন খাতের সাথে জড়িত একটি মহলের প্রভাব সম্পর্কে মন্ত্রী এই প্রথমবার পরিচিত হলেন, তেমনটা বলা যাবে না। এই মহলের কাছে মন্ত্রীর অসাহত্বের বিবরণ এর আগেও নানাভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এই খাতে তার প্রতাপ বা কর্তৃত্ব কতটা সে বিতর্কও কম হয়নি। এই খাতে প্রভাবশালীদের বিচরণ সাবেক এরশাদ সরকারের আমল থেকেই চলে আসছে। দেখা গেছে, মালিক সমিতি এবং শ্রমিক ইউনিয়ন উভয়ের প্রতিনিধিরাই মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন, আছেন। ফলে যে কোন সিদ্ধান্ত মনমত না হলে তা তারা মানবেন এটা জোর দিয়ে বলা যাবে না। এমন উদাহরণও রয়েছে, এক মন্ত্রী যখন চালকদের শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিলেন তো আরেকমন্ত্রী শিক্ষার কোন প্রয়োজন নেই বলে প্রকাশ্য ঘোষণা দিলেন। যে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন মানুষের প্রাণ যাচ্ছে তার প্রতিবিধানে চালকের গুরুতর সাজার জন্য দেশের অভিজ্ঞমহল বারবার আহ্বান জানানোর পরও সবেক আইনই বহাল থাকল। একে দেখতে শ্রমিকদের বিজয় বলে মনে হলেও কার্যত এর মধ্যে মূল বিজয় হয়েছে মালিক পক্ষের। চালক নিয়োগ পাচ্ছে মালিকের থেকে। অধিকাংশ গাড়ির মালিকই শিক্ষিত এবং যথাযথ প্রশিক্ষিত দক্ষ চালক রাখার বিপক্ষে। তাদের স্পষ্ট অভিমত হচ্ছে, এদের বেতন ভাতা দিয়ে গাড়ি ব্যবসা অসম্ভব। দেশে বর্তমানে ভারতীয় গাড়ি ছাড়া অন্য গাড়ি আমদানি প্রায় অসম্ভব। ভারতীয় গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করছে একচেটিয়াভাবে দুএকটি কোম্পানী। অধিকাংশ মালিকই ব্যাংকের পরিবর্তে এসব আমদানীকারকদের কাছ থেকেই কিস্তিতে গাড়ি কিনছে। এদের ১০ থেকে ১১ ভাগ হারে সুদ দিতে হচ্ছে। মালিকদের ভাষ্য মতে, ব্যাংকের সুদ আরো বেশি এবং সেখানে জটিলতাও বেশি। এসব কিস্তি বা দাদন অনেকটাই সেই সামন্ত যুগের মতই। এমন প্রহসনও রয়েছে, কিস্তির টাকা বাকি পড়লে কোম্পানীর লোকেরা রাস্তা থেকে গাড়ি নিজ অধিকারে নিয়ে নেয়। বোধকরি এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, এই সুদের হারের কারণেই মৌসুমী ফলসহ বাজারে মাছের দাম থেকে শুরু করে সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য আকাশছোঁয়া। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বলছেন, তিনি নাকি কম সুদের কথা শুনতেই চান না। অথচ এই দেশেই বিদেশি ব্যাংকগুলো অনেক কম সুদে টাকা দিচ্ছে এবং তারা লাভও করছে। সংগত প্রশ্ন হচ্ছে, এই উচ্চ সুদের টাকা কোথায় যায়, কে বা কারা খায়? পরিবহনের বেলায় শুধুু উচ্চ সুদের বিষয়টিই নয় এর সাথে যুক্ত হয়ে আছে অবৈধ অর্থ ও প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য চাঁদাবাজি।
ব্যবসার জন্য একটি গাড়ি কিনতে চাইলে বর্তমানে প্রভাবশালী মহলকে নির্দিষ্ট মূল্য ছাড়াও লক্ষাধিক টাকা দিয়ে খুশি করতে হয়। এই অর্থ ছাড়া কোন অবস্থাতেই গাড়ি রাস্তায় বের করা সম্ভব নয়। এরপর রাস্তায় গাড়ি বের হলে চলে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য চাঁদাবাজি। এমন দৃশ্য এখন যে কোন সড়কেই দৃশ্যমান যে, সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা চাঁদাবাজদের চাহিদামত টাকা না দিলে তারাও গাড়ি বন্ধ করে দেয়। সেই চাঁদাবাজরাও সরকারি প্রভাবশালী মহলেরই লোক। সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনা এখন পুরোটাই সরকারের নিয়ন্ত্রণে। এ খাতে যারা চালক-কন্ডাকটর এরাও মূলত দলীয়ভাবে মনোনীত। এসব মনোনয়ন পাবার জন্যও সংশ্লিষ্টদের অর্থ দিতে হয় এবং হচ্ছে। এখন বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন কেন, প্রতিটি গাড়িতেই যাত্রী বনাম এই বিশেষ শ্রেণীর প্রতিনিধিদের সাথে বিবাদ হচ্ছে। সম্প্রতি সিটিং সার্ভিস বন্ধ করতে গিয়ে একাধিক সাংবাদিক কন্ডাকটরবেশি মাস্তানদের হাতে নাজেহাল হয়েছেন। তাদের অপরাধ, তারা ন্যায্য ভাড়া অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত ভাড়ার পক্ষে কথা বলছিলেন। মালিক সমিতির সিদ্ধান্তে কথিত সিটিং সার্ভিস বন্ধ হলেও ভাড়ার নৈরাজ্য অব্যাহত ছিল। মূল বিষয়ে কোন মনিটরিং না থাকার কারণে পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করেছিল। অবস্থটা এমন ছিল একদিকে ঠাসাঠাসি করে বাসে ভর্তি করা হচ্ছে যাত্রী অন্যদিকে ভাড়ার বৈষম্য আরো তীব্রতর হয়েছে। সেই সাথে বিআরটিএর মোবাইলকোর্ট পরিচালনার কারণে অনেক পরিবহন এমনিতেই বন্ধ ছিল। যারা রাস্তায় বেরিয়েছে তাদের ছিল পোয়বারো। রাজধানীতে নির্দিষ্ট স্টপেজ না থাকায় ইচ্ছেমতো যাত্রী উঠানামা করছে বাসগুলোতে। ভাড়া নিয়ে তর্কাতর্কি, বিতর্ক, হৈচৈ, হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে কোথাও কোথাও মারধরের শিকার হয়েছেন যাত্রীরা। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি জানিয়েছে, বাস ও মিনিবাসে সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায়ের প্রমাণ তারা পেয়েছেন। বিদ্যমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যাত্রীকল্যাণ সমিতি একটি দৈনিককে জানিয়েছে, সিটিং সার্ভিস বন্ধ হলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে। পরিবহন নেতা খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেছেন, পরিবহনে দীর্ঘদিনের অনিয়ম একদিনে যাবে না। এ জন্য কিছু সময় দিতে হবে। রাজধানীতে গণপরিবহনের নৈরাজ্যের জন্য প্রকাশ্যত যাই বলা হোক, প্রকৃত বিবেচনায় সরকারের কোন কোন মহলই দায়ী। গণপরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্ট সবকটি সূত্রে সরকারি লোকদের একছত্র প্রভাব বিস্তারের কারণে এই খাতে শৃঙ্খলা বিধান অনেকদিন আগে থেকেই প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে এই খাতকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের ফলে সংশ্লিষ্টরা আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এক সময় বিশেষ প্রয়োজনেই রাজধানীতে সিটিং সার্ভিসের প্রবর্তন করা হয়েছিল। সে সময়ে যারা সিটিং সার্ভিসে যেতে আগ্রহী ছিলেন তারা একে স্বাগত জানিয়েছেন। এর কারণ তখন নগরীতে সাধারণ বা সাবেক নগর পরিবহন বলে যা পরিচিত ছিল তাতে কোন সম্মানজনকভাবে যাতায়াতের সুযোগ ছিল না। সে সময়ে কার্যত লোকাল বা নগর সার্ভিস এবং সিটিং দুটোই চালু ছিল। আইনগতভাবে অতীতে সিটিং সার্ভিসের কোন বৈধতা কখনোই ছিল না। এরপর ভাড়ার সুবিধার বিবেচনায় সকল লক্করঝক্কর মার্কা বাসই তথাকথিত সিটিং সর্ভিসে পরিণত হওয়ার ফলে নগরবাসী তথা সাধারণ যাত্রীরা পড়েন মহাবিপদে। সামান্য একটু পথ যেতেও তাদের তথাকথিত সিটিং ভাড়া গুনতে হতো। এই অবস্থা অনেকদিন থেকেই চলে আসছে। বাস্তব পরিস্থিতি আরো গুরুতর। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় যেসব বাস যাতায়াত করে সেসব বাসে কোন ভাড়ার তালিকা অছে বলে জানা যায়নি। ঐসব এলকার বাসগুলোতে অনেক আগে থেকেই সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। ভাড়ার তালিকা নিয়েই যাত্রীদের সাথে মূল বিরোধ। বতর্মানে চালু থাকা ভাড়ার স্তর নিয়েই যদি কথা বলা যায় তাহলে বলতে হবে, নির্ধারিত ভাড়ার মধ্যে উচ্চহারের সুদের টাকা। প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কমিশন ঘুষ সবই অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে তেল-গ্যাসের বর্ধিত মূল্যও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। সুুতরাং প্রকৃত ভাড়া কত তা নির্ধারণ করা কঠিন। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, পানির প্রবাহ যেমনি নিম্নমুখী তেমনি সবচাপ শেষপর্যন্ত সামাল দিতে হয় যাত্রীদেরই। ফলে নিম্ন বা মধ্যবিত্তরা যারা বাধ্য হয়ে বাসে যাতায়াত করেন তাদের সাথে যখন আয়ের সঙ্গতিতে বাদ সাধে তখনই বিরোধ লাগে। এই বিরোধ থামাতেই মালিকপক্ষ তথা প্রভাবশালী মহল বাসে পেটুয়া বাহিনী পালেন। কার্যত এটা খুব বেশিদিন অগের কথা নয় যখন বাসে যাত্রী চালক-কন্ডাকটার মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। তখন চালক-কন্ডাকটরদের উচ্চ পেশাগত দক্ষতার পাশাপশি সামাজিক মূল্যবোধের চাপ ছিল। সমাজ-রাষ্ট্রেও তখন মানুষের মর্যাদা ছিল। এখন রাষ্ট্রীয় স্বেচ্চাচারিতার প্রভাব পরিবহন খাতেও পড়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রভাভশালীদের সাথে এসব চালক-কন্ডাকটরের সম্পর্ক থাকার কারণে সাধারণ যাত্রীরা তাদের কাছে প্রকৃত বিবেচনায় ‘আজ্ঞাবহ’ ছাড়া আর কিছুই বিবেচিত হয় না। এটাও বিরোধের আরো একটি কারণ।
সড়ক ব্যবস্থাপনায় জটিলতাও পরিবহন খাতের নৈরাজ্যের একটি বড় কারণ। এই কারণেই যানজট। এই জটে বারটা বাজছে দেশের অর্থনীতির। প্রত্যক্ষভাবে দেখা না গেলেও যানজটের কারণে চাপ পড়ছে যাত্রী, চালক ও মালিকদের উপরও। দেশে ট্রাফিক জ্যাম বা কনজেশনের কারণে প্রতি বছর ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলরের ক্ষতি হচ্ছে। এই জ্যামের কারণ নিয়ে ইতোমধ্যেই বিস্তর অলোচনা হয়েছে। জ্যাম কমাতে একবার অটো সিগনালিং আবার ম্যানুয়েল নানা পদ্ধতির ব্যবহার করা হচ্ছে। বাস্তবে পরিস্থিতির কোন উন্নতি হচ্ছে না। এ কারণে দেখা যায়, বাসগুলোর যাতায়াতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগে যার চাপ বহন করতে হয় যাত্রীদের। চালক-কন্ডাকটরদের বেতন-ভাতা মূলত নির্ধারিত হয় ট্রিপের ওপর। অন্যদিকে মালিকদের টার্গেট পূরণ করতে পারলে সেক্ষেত্রে চালক-কন্ডাকটরা বাড়তি কিছু পয়সাও পায়। এই বাড়তি পাওনা এবং জ্যামে আটকে যাওয়া সময়ের সমন্বয় করতে গিয়েই অতিরিক্ত যাত্রীবহন এবং যাত্রী ভোগান্তি। মূলত সড়ক দুর্ঘটনার সাথেও এই জ্যাম এবং সড়ক অব্যবস্থাপনার আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে। সারা দেশের সড়ক-মহাসড়ক থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে যতবারই চেষ্টা চালান হয়েছে ততবারই তা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে প্রভাবশালীদের কারণে। এই প্রভাবশালী মহল কারা এবং তাদের পরিচয় কি তা নিয়ে কোন মহলেই কোন সন্দেহ নেই। দেখা যায়, একদিকে উচ্ছেদ হচ্ছে অন্যদিকে পুনরায় তা দখল হচ্ছে। প্রকৃত বিবেচনায় যারা এ জন্য দায়ী তাদের কোন বিচর করা বা আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি হচ্ছে না। অথচ অবৈধ দখলদারদের কারণে যেসব দুর্ঘটনা ঘটছে তাতে প্রাণ যাচ্ছে যাত্রীদের। কার্যত দেখার কেউ নেই। কেন নেই সে প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রশ্নটি আরো বড় এবং অনেকটা নির্দেশকের ভ‚মিকা পালন করছে সম্প্রতি রাজধানী থেকে সিটিং সার্ভিস তুলে দেয়াকে কেন্দ্র করে। গণপরবহনে নৈরাজ্য বন্ধের পরিবর্তে মালিকপক্ষ বা প্রভাবশালী মহলের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে সরকার। সিটিং সার্ভিসের নামে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি বন্ধ করা যেমন জরুরি ছিল তেমনি লোকাল পরিবহনের নামে নৈরাজ্যে চলতে দেয়ার পিছনেও কোন যুক্তি নেই। নির্দিষ্ট রুটের ভাড়া দিয়ে যে কোন নাগরিকের যাতায়াত করার নাগরিক অধিকার রয়েছে। অন্য কোন আইন দিয়ে এই নাগরিক অধিকার ক্ষুণœ করার পক্ষে কোন যুক্তি নেই। সে কারণে সার্ভিস সিটিং আর লোকাল যাই হোক, যে কোন দূরত্বে যে কারো যাতায়াত নিশ্চিত করার ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে। সিটিং সর্ভিস আর লোকাল সার্ভিস বলতে আসলে পার্থক্য করা হয় যাত্রীবোঝাইয়ের ভিত্তিতে। বিআরটিএর বিধান অনুযায়ী কেবলমাত্র সিটের ভাড়া নির্ধারিত। সে বিবেচনায় কোন পরিবহনে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়ার বিধান নেই। এখন দেখা যাচ্ছে একদিকে সিটিং পরিবহনকে বৈধতা দেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে অন্যদিকে লোকাল যাত্রীদের নিয়ে কোন নতুন ভাবনার কথা শোনা যায়নি। এটা অনুমান হয়ত অসংগত, এই যে সিটিং সার্ভিস বৈধকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এর মধ্যদিয়ে আবার নতুন করে বাস ভাড়া বাড়ার কৌশলও নির্ধারিত হতে পারে। কথাবার্তা যাই হোক, গণপরিবহন যাতে যাত্রীবান্ধব হয় সেটি নিশ্চিত করাই ছিল মন্ত্রীর দায়িত্ব। কোন চাপের কাছে নতি স্বীকার নয় বরং জনগণের কাছে দায়বদ্ধতাই হওয়া উচিত ছিল শেষকথা।
পরিবহন খাতে নৈরাজ্য বন্ধের দাবি অনেক দিনের পুরনো। এ খাতে শৃঙ্খলা বিধানের যৌক্তিকতা এবং প্রয়োজনীয়তা নিয়েও অনেক অলোচনা হয়েছে। দিনদিন শহরের পরিধি বাড়ছে, বাড়ছে মানুষ। এখন পর্যন্ত গণপরিবহনই নিম্ন ও মধ্যবিত্তের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। বাস্তবতা হচ্ছে, সকালে অফিসের সময়ে এবং বিকেলে অফিসফরতের সময় মানুষের দুর্ভোগ এখন পর্যন্ত চরমে রয়েছে সামনে রমযান। দুর্ভোগ আরো বাড়বে। আইনকানুন-বিধিব্যবস্থা যাই হোক না কেন এখন পর্যন্ত কোন অবস্থাতেই এটা বলা যাবে না যে, গণপরিবহন জনসাধারণের বান্ধব হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে বরং পরিবহনে যাত্রীরা একশ্রেণীর কন্ডাকটর ও চালকের হয়রানির শিকারই হচ্ছে। সে কারণে যারা আইন প্রয়োগ করছেন তাদের মূল বিষয়ের দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। এখানে দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যমান অবস্থা এই দাঁড়িয়েছে যে, নানা কৌশলে যাত্রী সাধারণের পকেট কাটাই প্রধান বিবেচ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর নানা অজুহাতে যা হচ্ছে সরকার বা তাদের প্রতিনিধিরা একে কোন না কোনভাবে সমর্থন করছে। ফলে অস্কারা আরো বেড়ে যাচ্ছে। অতীতের মতো এবারেও এটা পরিষ্কার যে, পরিবহন খাতের সাথে জড়িত সকলেই সরকারের প্রভাবশালী মহল। সুতরাং যে ধরনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হচ্ছে তার সবগুলোই হচ্ছে মালিক তথা প্রভাবশালী মহলের পক্ষে, জনসাধারণের বিপক্ষে। সাধারণত জবাবদিতহিমূলক ব্যবস্থা থাকলেও দেশের মানুষ প্রকৃত চিত্র জানতে পারে এবং তাদের মতামতও দিতে পারে। এখন তার কোন সুযোগ নেই। যারা ভাড়া বাড়াচ্ছেন, যারা চাঁদাবাজি করছেন, উচ্চহারে সুদ নিচ্ছেন তারা সবাই এক পক্ষের। সে কারণেই এটা বলা অত্যন্ত জরুরি যে গণপরিবহনের ভাবনায় কেবল একটি বিষয়কে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। যাত্রী তথা মানুষের কল্যাণ চিন্তা থাকলে যে কোন সমস্যারই সমাধান অতিসহজ।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।