Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মীরসরাইয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারে গ্যাস বিক্রি বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আমিনুল হক, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে : মীরসরাই উপজেলার হাটে বাজারে বিস্ফোরক অধিদফতর ও পরিদর্শকের লাইসেন্স ছাড়াই বিভিন্ন বাজার ও রাস্তার পাশে যত্রতত্র মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারে অবৈধভাবে গ্যাস বিক্রি হচ্ছে। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলার কয়েকটি স্থানে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে কয়েকজন আহতও হয়েছে। আগুনে পুড়ে গেছে দু’টি বাড়ি। সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার করেরহাট, বারইয়াইয়ারহাট, শান্তিরহাট, আবুরহাট, জোরারগঞ্জ, মিঠাছড়া, আবু তোরাব, মীরসরাই সদর, বামনসুন্দর দারোগাহাট, বড়দারোগাহাট, ভোরেরবাজার, বড়তাকিয়া, হাদি ফকিরহাট, নিজামপুর কলেজসহ বিভিন্ন বাজারে তিন শতাধিক দোকানে বিভিন্ন কোম্পানির সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবসা চলছে। শুধু তা-ই নয়, মুদিদোকান, চায়ের দোকান, গ্রামীণ দোকান, হার্ডওয়্যারের দোকান ও স্টেশনারি দোকানেও খোলামেলাভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করা হচ্ছে। দোকানের সামনে রাস্তা দখল করে রাখা হয়েছে এসব সিলিন্ডার। ঝুঁকিপূর্ণ এসব সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রির জন্য বিস্ফোরক দ্রব্যের লাইসেন্স গ্রহণের পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখার বিধান থাকলেও ব্যবসায়ীরা এসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না। স্থানীয় বাজারের সচেতন ব্যবসায়ীরা জানান, অসাবধানতাবশত এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো একটিতে আগুন লাগলে সম্পূর্ণ বাজার পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। জানা গেছে, ইদানীং পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহকৃত গ্যাসে কখনো কখনো হালকাভাব বা গ্যাস শূন্যতা দেখা দেয়ায় বাধ্য হয়ে অনেকেই গ্যাস সিলিন্ডার কিনছেন। দেশের যেসব এলাকায় গ্যাস পৌঁছেনি সেসব স্থানের বাসাবাড়িতেও এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এলপিজি সিলিন্ডার। এর বাইরেও হোটেল-রেস্তোরাঁ, শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং প্রাইভেট কারসহ প্রায় সবরকম যানবাহনে অবাধে ব্যবহৃত হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। কারণ এটা ব্যয়সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য। তবে এর ঝুঁকির দিকটিও অবহেলা করা যায় না। এ ছাড়া মীরসরাইয়ে দু’টি কোম্পানি গ্যাস সিলিন্ডারের কারাখানা স্থাপন করায় উপজেলাজুড়ে এখন যত্রতত্র সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি হচ্ছে। বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত হচ্ছে কয়েক হাজার গ্যাস সিলিন্ডার। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ গ্যাস সিলিন্ডারই মানসম্মত নয়। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিলিন্ডার ব্যবহৃত হয় ও হচ্ছে। আমদানিকৃত সিলিন্ডারের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত সিলিন্ডারও রয়েছে। একটি সিলিন্ডারের মেয়াদ সাধারণত পাঁচ বছর। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয় না। নি¤œমানের সিলিন্ডারের কথা বাদ দিলেও ভালো মানের সিলিন্ডারগুলোও নিয়মিত দেখভাল তথা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। ১৫-১৬ বছরের পুরনো সিলিন্ডারও ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলো প্রায়ই ভয়ঙ্কর ‘বিস্ফোরক সম্ভাব্য ’ হয়ে উঠেছে। ফলে যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে তা বিস্ফোরিত হয়ে প্রাণ ও সম্পদহানীর কারণ হতে পারে। অথচ এখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। কোনো নিয়মনীতি না মেনেই চলছে এসব গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা। প্রচÐ বিস্ফোরণ মতাসম্পন্ন এই দাহ্য পদার্থের বোতল বাজারজাত করতে এখন লাগছে না বিস্ফোরক লাইসেন্স। যে যেভাবে পারছে সেভাবেই লাভের জন্য এ বিপজ্জনক দাহ্য পদার্থ বিক্রি করে চলছে। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, এ কাজে বেসরকারি কয়েকটি কোম্পানির পরো মদদ রয়েছে। এসব কোম্পানির বিক্রি বৃদ্ধির আশায় যেখানে সেখানেই সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। উপজেলার বড়দারোগাহাট বাজারে একটি স্টেশনারির দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করা হচ্ছে। দোকানের মালিক সঞ্জিব দেবনাথ বলেন, ‘এখানকার মানুষের চাহিদার কথা বিবেচনা করে সিলিন্ডার রেখেছি। অনুমতি নিয়ে সিলিন্ডার বিক্রি করতে হয় এমন কথা আমি শুনিনি।’ ভোরের বাজারের গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রেতা কামাল উদ্দিন বলেন, লাইসেন্স করতে গেলে বিভিন্ন কাগজপত্র নিয়ে জটিলতা তৈরি করেন কর্মকর্তারা। এটা নেই, সেটা নেই বলে হয়রানি করেন। এরপর নকশা তৈরির জন্য খরচ করতে হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা। এসব কারণে বাধ্য হয়ে লাইসেন্স না করেই ব্যবসা করি। মীরসরাই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সিনিয়র ফায়ারম্যান নেছার উদ্দিন বলেন, অনুমোদনবিহীন প্রতিষ্ঠান যত্রতত্র সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করতে পারে না। ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউজ বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে বিক্রি করতে হয়। কিছু প্রাইভেট কোম্পানি কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী সিলিন্ডার বাজারজাত করছে। মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়া আহম্মেদ সুমন জানান, অনুমতি ছাড়া গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি সম্পূর্ণ অবৈধ। যারা অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসার সাথে জড়িত খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ