Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আনন্দ-উচ্ছ্বাসে কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সমাবর্তন

| প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ওয়াহিদুল ইসলাম : জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় গত ১৯ এপ্রিল। আনন্দ-উচ্ছ্বাসে রঙিন একটি দিন কাটল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের। প্রিয় ক্যাম্পাসে স্মৃতির রোমন্থনে পুরো একটি দিন আনন্দের ভেলায় ভাসলেন দেশের অন্যতম এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক-সহপাঠী সঙ্গে মাতলেন ক্ষাণিকটা সময়। প্রাণের বন্ধনে একে অন্যের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে প্রত্যেকেই যেন কয়েক মুহূর্তের জন্য ফিরে গিয়েছিলেন সেই সব হারানো দিনে। হাতড়ে ফিরেছেন ক্যাম্পাস জীবনের বিগত বছরগুলোর সেই উচ্ছল, বাধাহীন, তারুণ্য ও যৌবনের ছোট গল্পগুলোকে। বর্ণাঢ্য ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসমুখর পরিবেশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হলো। বুধবার সকাল থেকে সমাবর্তন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন, একাডেমিক ভবনসহ পুরো ক্যাম্পাসে ছিল বর্ণাঢ্য আয়োজন।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গাহি সাম্যের গান মুক্ত মঞ্চের’ মাঠে অনুষ্ঠেয় এ সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। একদিন আগে থেকে সমাবর্তনের কার্যক্রম শুরু হয়। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা সমাবর্তনের গাউন ও টুপি পরে অনুষ্ঠানস্থলে মহড়া দেন। সেখানে বেলা দেড়টা পর্যন্ত সমাবর্তন মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমার্বতনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ আজ সমৃদ্ধির সোপানে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ আজ নিম্ন আয়ের স্তর থেকে নিম্ন মধ্য আয়ের কাতারে উন্নীত হয়েছে। পদ্মা সেতু আজ কল্পনা নয়। বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীর বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, জঙ্গিবাদ দমন, ক্ষুধা দারিদ্র্য দূরীকরণসহ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে। রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘বিশ্ব পাঠশালার এক সাহসী যোদ্ধা নজরুল। জীবনসত্য অন্বেষণে তিনি ছুটেছেন নিরন্তর। নজরুলের সঙ্গে ত্রিশালের ছিল গভীর সম্পর্ক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐকান্তিক চেষ্টা ও আগ্রহে ১৯৭২ সালের ২ মে কাজী নজরুল ইসলামকে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বঙ্গবন্ধু কবি ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য ধানমন্ডিতে একটি বাড়ি বরাদ্দ দেন। বঙ্গবন্ধু ওই বাড়িটির নামকরণ করেন ‘কবি ভবন’ হিসেবে। কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের পরিবেশনায় নৃত্যসহ সূচনাসঙ্গীতের পরে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইমেরিটাস প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তা হিসেবে ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষায়িত সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সংসদীয় কমিটির সিদ্ধান্তে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে।’
প্রথম এই সমাবর্তনে ১ হাজার ৩৯৯ জনকে গ্র্যাজুয়েটদের সমাবর্তন দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ ২৯ জন শিক্ষার্থীর হাতে ৩২টি স্বর্ণপদক তুলে দেন। সমাবর্তন ঘিরে ক্যাম্পাসকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ভবনে আলোকসজ্জা করা হয়।
এদিকে সমাবর্তন উপলক্ষে শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া কালো গাউন আর সমাবর্তন ক্যাপ পরে এসেছেন। জীবনের স্মরণীয় মুহূর্তকে ফ্রেমবন্দি করছেন তারা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী জাহান আরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন দিন। বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যাওয়ার বেদনার পাশাপাশি গ্র্যাজুয়েট স্বীকৃতির আনন্দও রয়েছে এতে। শিক্ষাজীবনের বহু কাক্সিক্ষত এই মাহেন্দ্রক্ষণে আনন্দ ভাগাভাগি করতে নতুন-পুরনো শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়েছিলেন দল বেঁধে। অনেকেই ক্যাম্পাস জীবনের ফেলে আসা সেই সোনাঝরা দিনগুলোতে ফিরে যান। শিক্ষক-সহপাঠী ও দেশ বরেণ্য ব্যক্তিদের সংমিশ্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি স্থান মহোৎসবে পরিণত হয়। সমাবর্তনে অংশ নেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের চোখেমুখে উচ্ছ¡াস ছাপিয়ে উঠে। ক্যাম্পাসের প্রায় প্রতিটি জায়গায় দেখা যায় আড্ডা। ক্যাম্পাস জীবনের প্রাণের সতীর্থদের স্মৃতি ধরে রাখতে ছবি তোলার মহড়া চলে; ক্যাম্পাসের আনাচ-কানাচ থেকে ভেসে আসে ক্যামেরার ‘ক্লিক ক্লিক’ শব্দ।
সমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনে আলোক সজ্জায় সজ্জিত করা হয়। সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের গ্র্যাজুয়েট শাহিনুর রহমান বলেন, ‘গাউন পরে ক্যাম্পাসে ঘুরতে ভালো লাগছিল। কিন্তু যখন মনে হচ্ছে আজ থেকে প্রাক্তন হয়ে গেলাম তখন মনটা একটু খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসের সেই দিনগুলোর কথা আজ খুব মনে পড়ছে’।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ৯ মে দুখু মিয়ার স্মৃতি বিজড়িত ময়মনসিংহ শহরের অদূরে ত্রিশালে প্রতিষ্ঠা করা হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। এ শিক্ষালয়টি দেখতে দেখতে ১১ বছরে পা রাখলো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ২০১৭ সালেই প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হলো।



 

Show all comments
  • মুহাম্মদ নূরুল্লাহ ২৪ এপ্রিল, ২০১৭, ৭:১৯ এএম says : 0
    বিশেষায়িত করতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী চাইলে খড়কুটোর মতো বাধাদানকারী শক্তি উড়ে যাবে। নজরুলের জন্য দায় আছে আমাদের। বাঙালি মুসলিম লেখক রাজনীতিকদের প্রেরণা তিনি।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ আরিফ ২৪ এপ্রিল, ২০১৭, ২:৫৭ পিএম says : 0
    আমি ত্রিশালের মানুষ '
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ