হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
মুনশী আবদুল মাননান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দু’দেশের মধ্যে কি কি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে তা নিয়ে সরকারী মহলে এক ধরনের রাখঢাক ভাব লক্ষ্য করা যায়। শেষ মুহূর্তে জানা যায়, অন্তত ৩৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে। কারো কারো মতে, এ সংখ্যা ৪০ বা ৪১ হতে পারে। তখন কিছু চুক্তির বিষয়ও জানা যায়। অবশ্য ভারতীয় মিডিয়ায় এ সম্পর্কে বেশ বিস্তারিত তথ্যই পরিবেশন করা হয়। দুটি বিষয়ে বিশেষত নিশ্চিত হওয়া যায়। এই দুটি বিষয়ের একটি হলো, তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না। অপরটি হলো, প্রতিরক্ষা বা সামরিক সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হচ্ছে। ভারতের লক্ষ্য ছিল চুক্তি। যে কোনো কারণেই হোক, চুক্তি না হয়ে হচ্ছে সমঝোতা স্মারক। বাস্তবে, তিস্তা চুক্তি হয়নি। সামরিক সহযোগিতা সম্পর্কিত চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। সবমিলে চুক্তি ও সমঝোতা স্বারকের সংখ্যা ২২। এই সব চুক্তি ও সমঝোতার বিস্তারিত বিবরণ এখনো জানা যায়নি।
দেশের রাজনৈতিক মহলসহ বিভিন্ন মহল থেকে আগেই দাবি ওঠে, ভারতের সঙ্গে কি কি চুক্তি ও সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর হতে হচ্ছে তা প্রকাশ করা হোক, আলোচনা করা হোক, রাজনৈতিক দল ও বিদ্বৎ সমাজের মতামত নেয়া হোক। এছাড়া বিশেষভাবে বলা হয়, ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা বা সামরিক সহযোগিতা সংক্রান্ত কোনো চুক্তি বা সমঝোতা স্মরক স্বাক্ষর ঠিক হবে না এবং এর কোনো প্রয়োজন নেই। সরকার এই ‘সাধারণ মতামত’কে গ্রাহ্য করার কোনো তাকিদ বোধ করে না। জবাব হিসাবে বলা হয়, সরকার ভারতের সঙ্গে এমন কোনো চুক্তি বা সমঝোতায় যাবে না, যাতে দেশের স্বার্থ ক্ষুণœ বা ব্যাহত হয়। জোর গলায় এও জানানো হয়, চুক্তি-সমঝোতার সবকিছু পরে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। ইতোমধ্যে দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। এখনো চুক্তি-সমঝোতার বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে কিংবা আর কখনো এই বিবরণ প্রকাশ করা হবে, আলামত দেখে তা প্রতীয়মান হয় না। আসলে নেতারা যাই বলে থাকুন না কেন, সরকার বিদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি বা সমঝোতার বিবরণ প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। এ ধরনের একটি আইন তারা আগেই করে রেখেছেন। চুক্তি-সমঝোতার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ জনসমক্ষে প্রকাশ তো পরের কথা, সংসদে উত্থাপন ও আলোচনা করারও কোনো বিধান-ব্যবস্থা নেই। কেবল বলা আছে, এ বিষয়ে প্রেসিডেন্টকে অবহিত করলেই চলবে। এর অর্থ, তার সম্মতিরও কোনো প্রয়োজন নেই। সুতরাং, ভারতের সঙ্গেই শুধু নয়, অন্য কোনো দেশের সঙ্গেও এ যাবৎ যত চুক্তি হয়েছে তা সরকার স্বেচ্ছায় না জানালে জনগণের জানার কোনো উপায় নেই। এ প্রেক্ষিতে এটা বলা অসঙ্গত হবে না, ভারতের সঙ্গে এ পর্যন্ত যত চুক্তি-সমঝোতা হয়েছে তার অনুপুঙ্খ বিবরণ হয়তো কখনোই জানা যাবে না। সরকার যদি কখনো কোনো দেশের সঙ্গে জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থী চুক্তি বা সমঝোতা করে থাকে, তাও কখনো জানা সম্ভব হবে না। বলা হয়, দেশের মালিক জনগণ। অথচ সেই মালিককে না জানিয়েই সরকার ‘যাচ্ছেতাই’ করতে পারে। অতএব, দেশের মালিকানা জনগণের হাতে আছে কিনা, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। এ অবস্থাটা একার্থে বিপজ্জনক।
সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন উঠেছে, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বাংলাদেশ কি পেল? জবাবটা এসেছে এভাবে: কিছুই পায়নি। চুক্তি ও সমঝোতার সঙ্গে লেনদেনের ব্যাপারটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলাদেশ যদি কিছু না-ই পেয়ে থাকে তাহলে পেল কে? এর সোজা উত্তর: ভারত পেয়েছে। কিছু বিনিময় না দিয়েই ভারত যা চেয়েছে, কড়ায়গন্ডায় তা আদায় করে নিয়েছে। এটা যদি ব্যর্থতা হয়, স্বীকার করতেই হবে, আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ভারতের অনেক কিছু চাওয়ার আছে। সেসব পাওয়ার জন্য তার চেষ্টা ও কৌশলের অবধি নেই, এতটুকু ঘাটতি নেই। গত প্রায় এক দশক ধরে ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে যা চেয়েছে, বিনা প্রশ্নে ও অবলীলায় তা পেয়েছে। বাংলাদেশ ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো শুধুই নেচেছে, উল্লম্ফনে আত্মহারা হয়েছে।
ভারতের কাছে বাংলাদেশেরও চাওয়ার অনেক কিছু আছে। সংক্ষেপ করলেও এ তালিকা বেশ দীর্ঘ। সে তিস্তার পানি চায়, অভিন্ন সকল নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা চায়, সীমান্ত বিরোধের মীমাংসা চায়, সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যার অবসান চায়, সীমান্ত পথে মাদক ও অস্ত্রের অনুপ্রবেশ রোধ চায়, বাণিজ্য-অসমতা দূর করতে চায় এবং বাংলাদেশী পণ্যের ভারতের বাজারে অবাধ প্রবেশ চায়। বাংলাদেশ এ যাবৎ তার চাওয়ার কিছুই পায়নি।
ভারত বাংলাদেশের কাছে থেকে কি পেয়েছে, এ প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক। মোটা দাগে বলা যায়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহের ভারতের ভাষায় বিচ্ছন্নতাবাদীদের দমনে বাংলাদেশ নিজের নিরাপত্তার ঝুঁকি নিয়েও পূর্ণ সহযোগিতা করেছে। কথিত বিছিন্নতাবাদী নেতাদের ধরে ধরে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। নৌ-ট্রানজিট চুক্তির আওতায় নৌ ট্রানজিট দিয়েছে। নিজ ভ‚মি ভারতের করিডর হিসাবে ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে। স্থল ট্রানজিট চুক্তি না হলেও স্থল ট্রানজিট দিয়ে ভারতের মালামাল ও পণ্য পরিবহনের সুযোগ দিয়েছে। সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করতে দেয়ার সমঝোতা করেছে। বলতে গেলে বিনা মাসুলে তার পণ্য পরিবহনে রাজি হয়েছে। ভারতের পণ্যের জন্য বাজার উন্মুক্ত করে দিয়েছে। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের বিশেষ সুবিধা দিয়েছে এবং সর্বশেষ ভারতের ইচ্ছা পূরণে তুমুল বিরোধিতা সত্তে¡ও সামরিক সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় বাংলাদেশের মানুষের একান্ত প্রত্যাশা ছিল, আর কিছু না হোক, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হবে। দেশের কোনো কোনো মিডিয়া চুক্তি হবে না জানার পরও ‘মোদি ম্যাজিকের’ গল্প ফেদেছে। এটা ছিল আত্মপ্রবঞ্চনার নামান্তর। মোদি দেখাতে পারেননি ম্যাজিক। কেন দেখাবেন? এর কোনো প্রয়োজন ছিল না। যখন আশ্বাস দিলেই চলে তখন ম্যাজিক দেখানোর দরকার কি? বাংলাদেশের মানুষ গভীর হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছে। সম্ভবত, এই হতাশা কিছুটা হলেও ক্ষমতাসীন মহলকে স্পর্শ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর একাধিক বক্তব্য আভাস তার প্রকাশ লক্ষ্য করা গেছে। অন্তত তিস্তার পানি চুক্তি হলেও সরকারের মুখ রক্ষা হতো। সরকারী নেতারা বলতে পারতেন, এই যে আমরা তিস্তা চুক্তি করেছি, পানির ব্যবস্থা করেছি। এখন দেখানোর মতো তাদের হাতে কিছুই নেই। মোদি-মমতা নাটকে তিস্তা চুক্তি নেই হয়ে গেছে। মোদি শুধু আশ্বাস দিয়েছেন। বলেছেন, তার ও শেখ হাসিনার সরকারের আমলেই তিস্তা চুক্তি হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে সে কথায় বিশ্বাস করে খামোশ হতে হয়েছে। তিস্তা নিয়ে যে কথাবার্তা মোদি বলেছেন, বাংলাদেশ তা যৌথ ঘোষণায় সংযুক্ত করতে চেয়েছিল। চুক্তির ব্যাপারে সময় নির্ধারণ করতে চেয়েছিল। ভারত বাংলাদেশের এই চাওয়াটুকু নাকচ করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ১০ এপ্রিল দিল্লীতে ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের সভায় কথা বলতে বলতে হঠাৎই হিন্দিতে কিছু কথা বলেন যেখানে তার হতাশা স্পষ্টই ধরা পড়েছে। তিনি বলেন, ‘মুঝে পাতা নেহি দিদিমনি কেয়া করেগি, দিদিমনি কে সাথ বাথ হুয়ি। উনোনে নয়া কুচ দেখা দিয়া, লেকিন মোদিজি এসিওর কিয়া, আব হাম বেঠা হে দেখনে কে লিয়ে কেয়া হোতা হে। লেকিন দিদিমনি এক কাম কিয়া, হাম ইলেকট্রিসিটি দেয়েঙ্গে। পানি মাঙ্গা, লেকিন ইলেকট্রিসিটি মিলা। আচ্ছা হে। কুছতো মিল গিয়া।’ প্রধানমন্ত্রীর ‘পানি মাঙ্গা’ কথাটি বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যেতে পারে। সাধারণত দয়া-দাক্ষিণ্য-করুণা চাওয়ার ক্ষেত্রে মাঙ্গা শব্দটির প্রয়োগ দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রী মাঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করে পানির জন্য ভারতের কাছে দয়া-দাক্ষিণ্য-করুণা প্রার্থনা করেছেন। পানি ভিক্ষা চেয়েছেন। অথচ তিস্তার পানি ভিক্ষার সামগ্রী নয়। ন্যায্য পাওনা। তিনি মাঙ্গার স্থলে ‘চাহিয়ে’ শব্দটি ব্যবহার করতে পারতেন। বলতে পারতেন, আমাদের পানি চাই, পানির হিস্যা চাই। সেটাই হতো সঙ্গত। কিন্তু ভারত এমনই বন্ধু যে, পানি ভিক্ষায়ও সাড়া দেয়নি।
প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফিরে আসার পর স্বাক্ষরিত চুক্তি ও সমাঝোতা নিয়ে এ পর্যন্ত যত কথাবার্তা ও আলোচনা হয়েছে তার প্রায় সবই নেতিবাচক। সরকারের পক্ষের বুদ্ধিজীবী, থিংকার ও বিদ্বৎজনরাও তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকেও এ নিয়ে কথা বলতে হয়েছে। ১১ এপ্রিল গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, ভারতে তিনি কিছু চাইতে যাননি। তার ভাষায় তার বক্তব্যটি এরকম : ‘আমি কিছু চাইতে যাইনি। আমি শুধু বন্ধুত্ব চেয়েছি। ভারতের কাছে কোনো দেনা-পাওনার জন্য যাইনি। স্রেফ বন্ধুত্ব চাইতে গিয়েছিলাম, বন্ধুত্ব পেয়েছি। দেশের মানুষের জন্য সম্মান বয়ে আনতে পেরেছি- এটাই এই সফরের সবচেয়ে বড় অর্জন।’
বন্ধুর জন্য, বন্ধুত্বের জন্য মানুষ অনেক কিছু করে, অনেক কিছু ত্যাগ স্বীকার করে, এ কথা আমাদের অজানা নেই। এটা ব্যক্তিগত বন্ধু বা ব্যক্তিগত বন্ধুত্বের ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক বা রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে তা খাটে না। সেখানে লেনদেন বা দেয়ানেয়াটাই প্রধান। দেবো আর নেবো, মিলিবি মেলাবো, এটাই মূল কথা। বাংলাদেশ শুধু দেবে আর ভারত নেবে, বাংলাদেশকে কিছুই দেবে না, বাংলাদেশ কিছুই পাবে না, সেটা দ্বিপাক্ষিক ন্যায্য ও ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্কের পরিচয় বহন করে না। প্রশ্ন উঠতে পারে, বাংলাদেশ কি তবে এতদিন ভারতের বন্ধু ছিল না? এতদিন বারবার যে বলা হতো, ভারত বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু, ঐতিহাসিক সম্পর্কের বন্ধনে এ বন্ধুত্ব সুরক্ষিত, তা কি শুধু কথার কথা ছিল? ভারতের বন্ধুত্ব অর্জনের জন্য রাষ্ট্র, জাতি ও জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দেয়া হবে, উপেক্ষা করা হবে, এটা সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। বন্ধুত্ব ও সম্মান দৃশ্যগ্রাহ্য নয়, অনুভবযোগ্য বিষয়। বাংলাদেশের মানুষ অর্জিত বন্ধুত্ব ও সম্মান কিছুমাত্র অনুভব করে বলে মনে হয় না। তারা বরং উদ্বিগ্ন ও শংকিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব তিস্তার চশমায় দেখার জন্য অনুরোধ করেছেন। এ প্রসঙ্গে তার বক্তব্যটি উদ্ধৃত করা যেতে পারে। তিনি বলেছেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অন্যরকম উচ্চতায় দাবি করা হচ্ছে। কিছু ব্যক্তি ও মিডিয়া এ প্রচারণা করছে। আমি বলি, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সবচেয়ে নিমম্নে। আমরা দিয়েই যাচ্ছি। ভারত শুধু নিয়েই যাচ্ছে। আমাদের কিছুই দিচ্ছে না। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক দেখতে হবে তিস্তা নদীর চশমায়। কয়েক দশক আলোচনার পর একটা নদীর পানি পাচ্ছি না। অথচ সে পানির ওপর আমাদের ন্যায্য অধিকার। আমার ন্যায্য দাবি ৫৪ নদীর পানি। সেখানে মাত্র একটা নদীর পানি নিয়ে চুক্তি করেছে, সে চুক্তি অনুযায়ী পানি পাচ্ছি না। বাকি ৫৩ অভিন্ন নদীর পানির মধ্যে তিস্তার পানি চুক্তি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এ বাস্তবতার পরও বাংলাদেশ আর ভারতের বন্ধুত্ব সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে? স্বাধীন দেশ হিসাবে তিস্তার পানির জন্য ভারতের কাছে মিনতি করছি কেন? মিনতি করে অধিকার আদায় হয়? তিস্তার পানির জন্য ভারতের একটা প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে এত তোয়াজ করছি কেন? এটা কি আমাদের নেতৃত্বের দুর্বলতা?’
এ কথা কারো অজানা নেই, তিস্তার পানি চুক্তি নিয়ে একটি ধারাবাহিক প্রহসন মঞ্চায়িত হচ্ছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, তিস্তা চুক্তি করতে তার আপত্তি নেই। মনমোহন সিংয়ের মতো নরেন্দ্র মোদিও বলেছেন, আমরা তিস্তা চুক্তি করতে চাই। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। তার মুখ্যমন্ত্রী মমতার তিস্তা চুক্তিতে সায় নেই। তার আপত্তির কারণে চুক্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ ভারতে এমন বিধান রয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার কোনো দেশের সঙ্গে চুক্তি করলে রাজ্যগুলো তা মানতে বাধ্য। কেন্দ্রীয় সরকার এই বিধানের দিকে যাচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গের নারাজির বিষয়টি অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করছে। চুক্তি স্বাক্ষর ঝুলিয়ে রাখছে। ভারতের মিডিয়া বলেছে, এর পেছনে রাজনীতি প্রধান ভূমিকা পালন করছে। মোদির মতো মমতা ব্যানার্জিও অভিনয়টা ভালোই করছেন। বলছেন, তিস্তায় পানি নেই। যা আছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গের প্রয়োজন মিটছে না। বাংলাদেশকে কিভাবে পানি দেবো ? পানি থাকলে তো দেবো। এবার তিনি বিকল্প একটা প্রস্তাব দিয়েছেন। বলেছেন, উত্তরবঙ্গের চারটি নদীর পানি বাংলাদেশ নিতে পারে। তিনিও জানেন, ওই চারটি নদী খাল সদৃশ, বাংলাদেশকে পানি দেয়ার সক্ষমতা তাদের নেই। এ ছাড়া ওই সব নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। মমতার আগের কথা, তিস্তার উজানে বাঁধ নির্মাণ করার কারণে পশ্চিমবঙ্গে পর্যন্ত পানি আসছে অত্যন্ত কম। আশ্চর্যের কথা, পশ্চিমবঙ্গ যে গজলডোবা বাঁধের মাধ্যমে তিস্তার পানি সরিয়ে নিচ্ছে, সেটা মমতা এড়িয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে সিকিমে এক ডজনের বেশি স্থানে বাঁধ তুলে পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কিছু বলছে না। ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রকল্প কার্যকর হয়েছে। এসব তথ্য-উপাত্ত ও বাস্তবতা থেকে এটা স্পষ্ট, তিস্তার পানি বাংলাদেশের জন্য দুরাশামাত্র। এই একটি মাত্র নজির থেকেই বুঝা যায়, অন্যান্য অভিন্ন নদীর পানি পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই। বলা বাহুল্য, পানি না পেলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে, বিপর্যস্ত হবে। এটা আমাদেরই কেবল নয়, ভারত বা ভারতীয়দেরও ভালো জানা আছে। অতঃপর ভারতের বন্ধুত্ব ও সম্মান দিয়ে বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের মানুষ কি করবে?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।