বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী সুন্দরবন ঘেঁষা খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় উপক‚লবাসী। উত্তাল নদী, আকাশে মেঘ আর আবহাওয়া বৈরী হলেই কালবৈশাখী ঝড়ের ভয়ে আঁতকে উঠে তাদের মন। বেড়িবাঁধ ভাঙা জলোচ্ছ¡াসের আতঙ্কে কপালে ভাঁজ পড়ছে তাদের। নোনাপানির ভয়াবহতায় আদালতে মামলাও ঢুকছেন এলাকাবাসী।
খুলনার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের গিলাবাড়ি, সিংহের চর, ধাড়িয়াখালী ও মহেশ্বরীপুর গ্রামে লবণ পানি উত্তোলন বন্ধের দাবিতে মামলা হয়েছে। ধান চাষের ক্ষতি করায় লবণ পানি উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়ে স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল গফফারসহ এলাকার কয়েকজন বাদী হয়ে কয়রা উপজেলা নির্বাহী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন (যার নং-৯৯/১৭)। স্থিতিশীল বজায় রাখাসহ কারণ দর্শানো ও তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এতে বেড়িবাঁধেরও ব্যাপক ক্ষতি হয় বলে অভিযোগ মামলাটির বাদীপক্ষের। শুধু ওখানে নয়; খুলনার কয়রা ও দাকোপ, বাগেরহাটের শরণখোলা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় বাঁধের মাটি সরে গেছে।
পাউবোর সূত্রে জানা গেছে, পাউবো খুলনা-১-এর অধীনে ৩৬৫ দশমিক ২৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। সংস্কারের অভাবে অন্তত ১০৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অবস্থা জরাজীর্ণ। পাউবো খুলনা-২-এর অধীনে ৫১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৪৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ।
একই অবস্থা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায়। বাগেরহাটের ৩১৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় ৬০ কিলোমিটার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া প্রায় ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নিচু হয়ে গেছে। ভরা জোয়ারের সময় বাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। গেল বছরের ডিসেম্বরে বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিল এলাকাবাসী।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে, জেলার ৭৯৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ২১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধই ঝুঁকিপূর্ণ। দ্রæত সংস্কার করা না হলে আসন্ন দুর্যোগ মৌসুমে এসব বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হতে পারে বিশাল এলাকা। দেখা দিতে পারে মারাত্মক বিপর্যয়।
কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের গোলখালী গ্রামের মোঃ তসলিম মোল্যা বলেন, “বসবাস করি খুলনা জেলার মধ্যে; কিন্তু আমাদের বেড়িবাঁধ সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায়। সঙ্গতকারণে তারা আমাদের বেড়িবাঁধ সংস্কারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না। দীর্ঘদিন জরাজীর্ণ ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে একটু সংস্কার করেছি। যে কোন মুহূর্তে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নটি; মানচিত্র থেকে মুছে যেতে বসেছে পাউবোর অবহেলায়!”
কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আ খ ম তমিজ উদ্দিন বলেন, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়ন নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী বিএম আব্দুল মোমিন জানান, “পাউবো-১-এর আওতায় ৩৭৭ দশমিক ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৬০ কিলোমিটার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে নোটশিট পাঠিয়েছি। কিন্তু আপাতত কোন বরাদ্দ নেই।”
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী অপূর্ব কুমার ভৌমিক বলেন, পাউবো-২-এর ৪২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ১৫০ কিলোমিটার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। নোটশিট পেশ করার পর স¤প্রতি ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। খুব দ্রæত টেন্ডার আহŸান করে কাজ শুরু করবো। তবে এই অর্থে মাত্র ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কার করা যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের বন্যা ও জলোচ্ছ¡াসে উপকূলবাসীর ভিটে-মাটি, সহায়-সম্পত্তি, স্বপ্ন চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়েছে বারবার। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে প্রাণ হারায় উপকূলের অন্তত সাত হাজার বাসিন্দা। ২০০৯ সালে ২৫ মে আইলা আঘাত হেনে ছিল উপকূলে। ১৯৮৮ সালের ২৯ নভেম্বরের বন্যা, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের জলোচ্ছ¡াসের দুর্বিষহ স্মৃতিতে এখনো শিউরে উঠেন প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্ষতিগ্রস্তরা।
উপকূলীয় সমস্যা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিডিপির খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী এসএম ইকবাল হোসেন বিপ্লব বলেন, অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ আর সøুইসগেট। চিংড়ির ঘেরে লবণপানি তোলার ওই সøুইসগেটগুলো উপকূলের জন্য মরণ ফাঁদ। নদী খাল ভরাট হয়েছে; ফলে জলোচ্ছ¡াস হলেই উপকূলে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারে। তা ছাড়া যুগের পর যুগ বেড়িবাঁধগুলোর যথাযথভাবে সংস্কার না করে; যেনতেনভাবেই দায় সারছে কর্তৃপক্ষ। তাই উপক‚লে বাঁধের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
পাউবো খুলনা-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের বর্ণনা ও সংস্কার ব্যয় সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র প্রেরণ করেছি। প্রয়োজনীয় অর্থ না পাওয়ায় সংস্কার করতে পারছি না।
পাউবো খুলনা-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী পীযুষ কৃষ্ণ কুন্ডু বলেন, অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। কিছু স্থান নাজুক অবস্থায় রয়েছে। জোয়ার-ভাটার বেড়িবাঁধ, বলা যায় না। এই ভাল তো এই খারাপ। তবে আমরা নিয়মিত নজরদারি রাখছি।
কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ প্রসঙ্গে খুলনা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান বলেন, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতা থেকে কয়রা উপজেলার অংশটা খুলনার (পাউবোর) মধ্যে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এ বিষয়ে উন্নয়ন কমিটির সভায় পাউবোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সাথে অবৈধ সøুইসগেট বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।