Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রাষ্ট্রগণনা করে সংস্কারকৃত বাংলা বর্ষপঞ্জী : হিন্দু স¤প্রদায় করে সনাতন বাংলা বর্ষপঞ্জী অনুযায়ী

বাংলা সন গণনায় জাতীয় ঐকমত্য নেই

| প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৬ বছরেও পয়লা বৈশাখ নিয়ে আমাদের দেশে মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ বছরও গত শুক্রবার ১৪ এপ্রিল হিন্দু স¤প্রদায়ের লোকজন পয়লা বৈশাখ পালন করেননি। তারা পয়লা বৈশাখ পালন করেছে গত ১৫ এপ্রিল (শনিবার)। তবে তারা পান্তা ইলিশ দিয়ে বৈশাখী পালন করেনি। তারা পালন করেছে কাতল ও রুই মাছ দিয়ে। এদিক থেকে পয়লা বৈশাখের পান্তা-ইলিশ নিয়েও বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে ভিন্ন মত রয়েছে।
গত শনিবার নরসিংদীর বিভিন্ন বাজারে প্রচুরসংখ্যক কাতল ও রুই মাছ আমদানি ও বেচাকেনা হয়েছে। এসব বড় বড় কাতল ও রুই মাছ কিনে নিয়েছে হিন্দু স¤প্রদায়ের লোকজন। তারা জানিয়েছে, হিন্দু সমাজে পয়লা বৈশাখে ইলিশ মাছ খাওয়ার কোন প্রথা বা ধর্মীয় রীতিনীতি নেই। তবে হিন্দু সমাজের লোকজন একটি ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে বড় মাছ হিসেবে কাতল ও রুই মাছ খেয়ে থাকে। বিশ্বাসটি হচ্ছে বছরের প্রথম দিন বড় মাছ খেলে সারা বছর বড় মাছ তথা ভালো মন্দ খেতে পারবে। সচেতন হিন্দু পÐিতগণ জানিয়েছেন, বৈশাখ মাস ইলিশের মৌসুম নয়। এ মাসে রুই, কাতল মাছ বেশি পাওয়া যায়। বিশেষ করে আমের মৌসুমে কাতল ও রুই মাছে তেল হয়। খেতে সুস্বাদু হয় রুই ও কাতল মাছ। পক্ষান্তরে চৈত্র, বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্য মাসে মানুষের শরীরে বসন্ত, পানিবসন্ত ইত্যাদি রোগবালাই হয়ে থাকে। এ সময় মানুষের পেটে নানা ধরনের আন্ত্রিক রোগেরও প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। আর এ জন্যেই ইলিশের মত তৈলাক্ত মাছ বৈশাখ জৈষ্ঠ্য মাসে বাঙালিরা খুব একটা খেতো না খায় না। জাতীয়ভাবে উদযাপিত পয়লা বৈশাখের পরের দিন অর্থাৎ বৈশাখ মাসের দ্বিতীয় দিন হিন্দু সমাজে পয়লা বৈশাখ পালন সম্পর্কে তারা বলেন, বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত ড. মুহাম্মদ শহিদুল্øাহ’র সংস্কারকৃত বাংলা কেলেন্ডার অনুযায়ী পয়লা বৈশাখ পালন করে না। তারা পালন করে সনাতন বাংলা বর্ষপঞ্জী তথা লোকনাথ ডাইরেক্টরি অনুযায়ী। তারা আরো জানিয়েছেন যে, পয়লা বৈশাখ এবং এর পূর্বে চৈত্র সংক্রান্তি পালনে তাদের ধর্মীয় রীতিনীতি রয়েছে। সেই রীতিনীতি মেনেই তাদেরকে চৈত্র সংক্রান্তি ও পয়লা বৈশাখ পালন করতে হয়। এই চৈত্র সংক্রান্তি ও পয়লা বৈশাখে অনেকে কিছুটা আনুষ্ঠানিক পূজা পার্বণও করে থাকে।
জানা গেছে, বাংলা সন প্রবর্তনের পর থেকে বাংলাদেশ-ভারত, নেপাল তথা উপ-মহাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠির মানুষ বিভিন্ন রীতিনীতিতে সনটি পালন করে আসছে। সম্রাট আকবরের জ্যোতির্বিদ ফতেউল্লাহ সিরাজী বাংলা সনটি উদ্ভাবনের পর সৌর কারণেই এর মধ্যে বেশ কিছু অসঙ্গতি থেকে যায়। এ অসঙ্গতি দূর করার জন্য তৎকালীন সরকার ১৯৬৬ সালে ড. মুহাম্মদ শহিদুলল্লাহ’র নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটি বাংলা সনের বিভিন্ন ত্রæটি-বিচ্যুতি দূরীকরণ করে সকল বাঙালিদের একযোগে বাংলাসন গণনা বা পালনের জন্য সরকারের নিকট ৩ দফা প্রস্তাব পেশ করেন। প্রথম প্রস্তাবে বলা হয় বৈশাখ হতে ভাদ্র পর্যন্ত ৫ মাস হবে ৩১ দিন করে। বাকি মাসগুলো অর্থাৎ আশ্বিন হতে চৈত্র হবে ৩০ দিন করে। প্রতি চতুর্থ বছরে ফাল্গুন মাসে অতিরিক্ত এক দিন যোগ করে ফাল্গুন মাস হবে ৩১ দিনে। কিন্তু তৎকালীন সরকার ড. মো. শহিদুল্লাহর এই সংস্কারকৃত সন কার্যকর করেনি। ১৯৮১ সালে তৎকালীন এরশাদ সরকার ড. মো. শহিদুল্লাহ’র সংস্কারকৃত বাংলাসন কার্যকর করে। বাংলা একাডেমি ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহর কেলেন্ডার অনুযায়ী বাংলা সন গননা শুরু করে। কিন্তু বাংলাদেশের বাঙালি হিন্দু স¤প্রদায় ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহর এই কেলেন্ডার অনুযায়ী পয়লা বৈশাখ উদযাপন করছে না।
জ্যোতির্বিদগণের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, সনাতন বাংলা বর্ষপঞ্জী অনুযায়ী রাত ১২ টার মধ্যে সূর্য ০ডিগ্রী দ্রাগিমাংসে প্রবেশ করে। এরপর দিনই পয়লা বৈশাখ হয়ে থাকে। যে রাতে ১২ টার মধ্যে সংক্রান্তি ঘটে, সে রাতের পরদিনই মাসের প্রথম দিন হয়। কিন্তু লক্ষ্য করা যায় যে, সূর্য রাশি থেকে রাশিতে প্রবেশ বা পরিক্রমণের সময় সব রাশিতে একই সময় নেয় না। মাস ভেদে এক একটি রাশি অতিক্রমণে সময় নেয় কোনবার ২৯, কোনোবার ৩০, কোনোবার ৩১ বা কোনোবার ৩২ দিন। যে কারণে প্রতি বছর বিভিন্ন মাসের দিন সংখ্যা সমান হয় না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ