পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : গত মাসের শেষ দিকে হঠাৎ এক আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারসহ সিলেটের হাওর অঞ্চলের সব ধান। বছরে ওই একটা মাত্র ফসলই উঠে হাওর অঞ্চলের কৃষকদের ঘরে। হঠাৎ এই দুর্যোগে যখন তাদের মাথায় হাত, তখন গত সপ্তাহ থেকে হাওরের পানিতে ভেসে উঠতে থাকে মরা মাছ। মাছও হাওর অঞ্চলের মানুষের এক প্রধান সম্পদ। ভেবেছিল ধান গেছে, মাছ নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে এবার অনেক। কিন্তু এ কী হলো হঠাৎ? ঝাঁকে ঝাঁকে মরা মাছ ভেসে উঠছে হাওরের পানিতে। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল ধান পচে তার থেকে গ্যাস ছড়িয়েছে, তার কারণেই বুঝি মাছগুলো মরে যাচ্ছে। কিন্তু, এখন অনুমান করা হচ্ছে- অন্য কারণ। আর এর ফলে এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি ও টাঙ্গুয়ার হাওরের মৎস্য সম্পদ ও জলজ প্রাণীসহ জীববৈচিত্র এখন মারাত্মক হুমকির মুখে। এ নিয়ে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার গতকাল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনটির একটি সারসংক্ষেপ নিম্নে তুলে ধরা হলো-
এতে বলা হয়েছে, মেঘালয় সীমান্তের কাছে ভারতের উন্মুক্ত ইউরেনিয়াম খনির তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়েই হাওরের মাছ, ব্যাঙ মারা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, মারা যাচ্ছে হাওরের পানিতে চড়ে বেড়ানো গৃহপালিত হাঁসও। সেই সব অঞ্চলে মাইকিং করে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, সেই সব মরা মাছ যেন কেউ না খায়। ব্যাপারটি যদি সত্যিই হয়, তাহলে অনিবার্যভাবে নেমে আসবে ভয়ঙ্কর এক মানবিক বিপর্যয়। হয়তো হাওরের অঞ্চলের মানুষের দেহেও ছড়িয়ে পড়তে পারে মারাত্মক তেজস্ক্রিয়তা। আর তাতে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য রোগে।
অবশ্য মেঘালয় রাজ্য সরকার বলছে, তাদের দেশে মাছ মারা যাওয়ার ঘটনাটির সঙ্গে ইউরেনিয়াম খনির কোনো সম্পর্ক নেই। মেঘালয় রাজ্য সরকারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী বিন্দু এম লানং অবশ্য জানিয়েছেন, ইউরেনিয়ামের কারণে কোনো প্রাণীর মরে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। তাহলে ওই অঞ্চলের কোনো প্রাণীই বাঁচতো না।
কিন্তু, খাসিয়া নেতা মারকোনি থংনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারিÑ ইউরেনিয়ামের কারণেই এই মাছগুলো মারা যাচ্ছে। পানির রঙও বদলে গেছে। আমরা গত ফেব্রæয়ারি মাস থেকেই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছি। কারণ, রানিকোর নদীর কাছে যেখানে ভারতীয় ইউরেনিয়াম খনি সেখানে নদীর পানিও একই রঙ ধারণ করেছে এবং তখনো ওখানে অনেক মাছ-ব্যাঙ ভেসে উঠতে দেখেছি।
ঢাকার আণবিক শক্তি কমিশনের প্রধান ড. বিলকিস আরা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ইউরেনিয়ামের কারণেই পানির রঙ পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। এর কারণেই পানির নিচের মাছ-ব্যাঙ মারা যাচ্ছে। সাধারণত ধান পচে যে অ্যামোনিয়া গ্যাস সৃষ্টি হয়, তাতে এত মাছ মারা যাওয়ার কথা নয়।
পরীক্ষার জন্য এখনো সেখানকার পানি আনা হয়নি বলে তিনি জানান। তবে মৎস্য বিভাগের একদল কর্মী হাওর অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন।
সুনামগঞ্জ টাঙ্গুয়ার হাওরের কাছে বাংলাদেশ থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে রানিকোর মেঘালয় সীমান্তে ইউরেনিয়াম করপোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইউসিআইএল) অবস্থিত। বছরে এখান থেকে প্রায় তিন লাখ ৭৫ হাজার টন ইউরেনিয়াম আকরিক আহরণ করা হয়। প্রতিদিন প্রায় এক হাজার ৫০০ টন। উন্মুক্ত এই ইউরেনিয়াম খনি নানাভাবেই প্রাকৃতিক বিপর্যয় করে থাকে। খাসিয়া সম্প্রদায়ের ছাত্র সংগঠন সেই ১৯৯২ সাল থেকেই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছে। কিন্তু, কোনো প্রতিবাদেই কোনো কাজ হয়নি।
এদিকে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সিলেট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম বলেছেন, হাওর অঞ্চলে জলজপ্রাণীদের এমন অস্বাভাবিক মৃত্যুর সঙ্গে (ইউরেনিয়ামের) বিষয়টির সংযোগ থাকতে পারে। যদি ইউরেনিয়াম মিশ্রিত পানি হাওরে এসে পড়ে, তাহলে তা আমাদের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে।
গত ডিসেম্বরে মেঘালয়ের স্থানীয় খাসিয়া জনগোষ্ঠী সেই এলাকার রানিকর নদীর পানির রঙ নীল থেকে বদলে সবুজ হয়ে যেতে দেখেন। এর প্রেক্ষিতে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি খাসিয়া স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (কেএসইউ) একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে। সংগঠনটি সেই নদীর মাছ মরে যাওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করে। এমনকি, জলজ প্রাণীহীন নদীটি এখন মৃতপ্রায় বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
ভারতের যে নদীর পানিতে ইউরেনিয়াম মিশে যাওয়ার অভিযোগ করা হচ্ছে, সেটি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের তাহেরপুর উপজেলার জাদুকাটা নদী থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।