বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
স্টাফ রিপোর্টার : ‘শত্রু তুমি বন্ধু তুমি/তুমি আমার সাধনা’ ঢাকাই সিনেমার এই গানকে বাস্তবে রুপ দিলেন সাবেক মন্ত্রী জিয়াউদ্দিন আহমদ বাবলু। দলের মহাসচিব হয়ে বাবলু জাতীয় পার্টি থেকে এইচ এম এরশাদ ও জি এম কাদেরকে বহিষ্কার করেন; অতপর নিজেই বহিষ্কৃত হয়। এক বছরের ব্যবধানে তাদের ভাগ্নিকে বিয়ে করে তিনিই বিস্ময়ের সৃষ্টি করেন। জাতীয় পার্টির এই নেতা সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের ভাগ্নি টুম্পাকে বিয়ে করেছেন। বারিধারার দূতাবাস রোর্ডের ১০ নম্বর ‘প্রেসিডেন্ট পার্ক’ এরশাদের বাসায় গতকাল এ বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। এ বিয়েতে দেনমোহর ধরা হয় ৩০ লাখ টাকা। বিয়ের দিনই নববধূকে কোটি টাকার গাড়ি উপহার দেন ৬৫ বছর বয়সের বর বাবলু। বর-কনের উভয়েরই এটা দ্বিতীয় বিয়ে। এ বিয়েতে অবাক-বিস্ময় জাতীয় পার্টির অনেক নেতাই।
কনে এরশাদের ভাগ্নি প্রফেসর মেহেজেবুননেছা রহমান টুম্পার বাবা মরহুম ড. এম আসাদুজ্জামান ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি জাতীয় পার্টির নিলফামারী জেলার একটি আসনের নির্বাচিত এমপি ছিলেন। দৈনিক জনতার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কিছুদিন সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কনের মা মেরিনা রহমান জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের বর্তমান এমপি। এর আগেও তিনি দুইবার সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। শুক্রবার বেলা ১১টার রাজধানীর বারিধারায় এরশাদের প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় বিয়ের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা হয়। এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, এরশাদের আরেক বোনের স্বামী হাবিবুর রহমান, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কনের মা সংরক্ষিত আসন-৪৬ এর এমপি মেরিনা রহমান, বাবলুর পুত্র আশিকসহ এরশাদের পরিবার ও বাবলুর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যায় গুলশানের লা মেরিডিয়ান রেস্টুরেন্টে প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়। সেখানে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পাটি, ১৪ দলীয় জোটের অনেক নেতা উপস্থিত হলেও বাবলুর নির্বাচনী এলাকার চট্টগ্রাম-৯ আসনের লোকজনকে তেমন দেখা যায়নি। কয়েকদিন থেকে বাবলুর বিয়ে নিয়ে মুখরোচক আলোচনা চলছে।
জিয়াউদ্দিন আহমদ বাবলুর ঘনিষ্ঠরা জানান, এরশাদের ক্যাবিনেট মন্ত্রী এবং জাপার মহাসচিব হওয়ায় এরশাদের বাসায় নিত্যদিন যাতায়াতের কারণেই মেহেজেবুননেছার সঙ্গে বাবলুর চেনা-পরিচয় ছিল আগে থেকেই। দু’জনেই দাম্পত্য জীবনে ছিলেন একা। ’৮০ দশকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে জাসদ নেতা জিয়াউদ্দিন বাবলু হঠাৎ পক্ষ ত্যাগ করে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করে মন্ত্রী হয়ে দেশবাসীর মধ্যে যেমন বিস্ময় সৃষ্টি করেন; তেমনি জীবনের পড়ন্ত বেলায় ৬৫ বছর বয়সে হঠাৎ এরশাদের ভাগ্নিকে বিয়ে করে একই ধরনের বিস্ময় সৃষ্টি করলেন। বাবলুর স্ত্রী নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদা সরকার ২০০৫ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর একমাত্র ছেলে আশিককে নিয়েই গুলশানের বাসায় বসবাস করেন বাবলু। এবিএ পাস করে আশিক এখন বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করছে। কনে মেহেজেবুননেছা সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির বিবিএ প্রোগ্রামের পরিচালক। প্রথম সংসারে তারও এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
চট্টগ্রাম-৯ আসনের এমপি হলেও জিয়াউদ্দিন বাবলুর বাবা মরহুম ডাক্তার আবুল কাশেম ফেনীতেই স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। জাতীয় পার্টিতে সবচেয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিদের মধ্যে জিয়াউদ্দিন বাবলু অন্যতম। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি পাতানো নির্বাচনে লাঙ্গলের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের ঘোষণার পর এরশাদকে বন্দী করে সিএমএইচে এক মাস আটকে চিকিৎসা নিতে বাধ্য করার নেপথ্যে ছিলেন এই জিয়াউদ্দিন বাবলু। তাকে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার আনিস। আনিস-বাবলুই মূলত আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে এরশাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার ঘোষণার পরও রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টিকে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচনে রাখেন। নির্বাচনী আইনের সব রীতিনীতি ভঙ্গ করে আজ্ঞাবহ সিইসি রকীবউদ্দিন আহমদ মনোনয়ন প্রত্যাহার করা প্রার্থীদের লাঙ্গল মার্কার মনোনয়ন বৈধতা দেন। নির্বাচনের পর এরশাদকে বাদ দিয়ে রওশন এরশাদকে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা করেন। এক সময় রুহুল আমিন হাওলাদারকে বাদ দিয়ে জিয়াউদ্দিন আহমদ বাবলুকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব করতে বাধ্য হন এরশাদ। শুধু তাই নয়, দলের চেয়ারম্যানের বিশেষ উপদেষ্টার পদে বসিয়ে তাকে দলের একমাত্র ‘মুখপাত্র’ ঘোষণা করা হয়। দলের ক্ষমতা পেয়ে বাবলু-আনিস জাতীয় পার্টিকে কার্যত আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনে পরিণত করেন। ফলে অনেক পরীক্ষিত নেতাই জাপা ত্যাগ করে চলে যান। গত বছর জি এম কাদেরকে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান করায় মহাসচিবের দায়িত্ব পালনরত জিয়াউদ্দিন বাবলু জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের পদ থেকে এইচ এম এরশাদ ও কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে জি এম কাদেরকে বহিষ্কার করেন। তিনি রওশন এরশাদকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার ঘোষণা দেন। ক্ষুব্ধ হয়ে এরশাদ পাল্টা জিয়াউদ্দিন বাবলুকে দলের মহাসচিব পদ থেকে অব্যাহতি এবং জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার করেন। একই সঙ্গে বাবলুর এরশাদের প্রেসিডেন্ট পার্ক নামক ফ্ল্যাটে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। কিন্তু শাসক দলের মধ্যস্থতায় কয়েক দিনের মধ্যেই তাকে দলে ফিরিয়ে নিয়ে প্রেসিডিয়ামের সদস্য করতে বাধ্য হন এরশাদ। এখন সেই জিয়াউদ্দিন আহমদ বাবলু হলেন এরশাদের ভাগ্নি জামাতা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।