Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শ্রীপুরে ফুলের বাগানে নান্দনিক চন্দ্রমল্লিকা

| প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এম এ মতিন, শ্রীপুর (গাজীপুর) থেকে : দেশে কাট ফ্লাওয়ার চন্দ্রমল্লিকা খুব বেশি চাষ হয় না। অল্প কিছু সৌখিন ফুল প্রেমীরা এ ফুলের কিছু চাষ করে। তাও সে চন্দ্রমল্লিকা চাষ হয় শীতকালে। শীতের ঘন কোয়াশায় হাজারো চন্দ্রমল্লিকার দোলনী যে কোন ফুল পিপাসুদের মনে রঙের ছাপ মাখিয়ে দেয়। চোখের চাহনি স্থির হয়ে পড়ে চন্দ্রমল্লিকার নয়নাভিরাম কয়েক রঙের ফুলের বাজে বাজে। এ যেন ফুলের রঙিন সাগরে নিজেকে হারানোর এক রঙিন উৎসব। শীতের ফুলের গরমের দিনে রঙিন উৎসব। তেমনি রঙিন নয়নাভিরাম নান্দনিক চন্দ্রমল্লিকার বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেছেন গাজীপুরের শ্রীপুরের ফুলের রাজাখ্যাত দেলোয়ার হোসেন। পৌরসভার কেওয়া পূর্ব খন্ড এলাকায় প্রায় পৌনে এক বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন বহু রঙের চন্দ্রমল্লিকার এক চোখ জুড়ানো নান্দনিক বাগান। এলাকায় এবার নতুন এ ফুলের সৌন্দর্য দেখতে অনেক ফুল প্রেমিক জড়ো হন বাগানে। অসমের চন্দ্রমল্লিকায় ব্যবসাও হচ্ছে অনেক বেশি। এ ফুলের আকর্ষণ আর সাফল্যে আগামীতে আরো বড় পরিসরে গড়ে ওঠবে চন্দ্রমল্লিকা কানন। ফুল চাষি দেলোয়ার হোসেন জানান, আমাদের দেশে খুব বেশি চন্দ্রমল্লিকার চাষাবাদ হয় না। তবে ফুল প্রেমিদের কাছে এ ফুলের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। সেই চাহিদা পূরণে দেশের বাহির থেকে আমদানি করে সে চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে। এ দেশেও এ ফুল চাষে ভবিষ্যৎ রয়েছে অনেক। তিনি জানান, যদিও শীত কালে এ ফুলের চাষ হয়। এবার ফাল্গুন চৈত্রের গরমেও পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে সাফল্য মিলেছে। এই মৌসুমে দেশের অন্য কোথাও চন্দ্রমল্লিকার চাষবাস না থাকায় ফুলের দামও মিলেছে ভাল। নির্দিষ্ট মৌসুমের বাইরে চাষ হলেও ফুলের আকার বেশ বড় হয়েছে। ফুলের ফলনেও আশানুরূপ সাফল্য মিলেছে। দেলোয়ার জানান, দেশি ও চায়না গোলাপ ও বিলেতি জারবেরা চাষে সাফল্যের পর বহু রঙের চন্দ্রমল্লিকা চাষেও সাফল্য পেয়েছি। আগামীতে আরো বড় পরিসরে চন্দ্রমল্লিকার চাষ করা হবে। পরিচর্যাকারী শ্রমিক মিরাস উদ্দীন জানান, আমাদের বাগানে লাল, সাদা, হলুদ, গোলাপী, বাদামী, বেগুনীসহ ছয় রঙের চন্দ্রমল্লিকা রয়েছে। প্রত্যক গাছেই অসংখ্য কলি আসে। ভাল ও বড় ফুলের ফলন পেতে ২৫-৩০ কলি রেখে বাকি সব কলি কেটে দেয়া হয়। এরি মধ্যে একবার ফুল কাটিং করা হয়েছে। চোখ জুড়ানো চন্দ্রমল্লিকার বাগান দেখতে অনেকেই আসে। বহু রঙের ফুলে সবাই মুগ্ধ হয়ে যায়। প্রজেক্ট ম্যানাজার সেলিনা আক্তার জানান, চন্দ্রমল্লিকা খুব দামি ও সৌখিন ফুল। নানা রঙের চন্দ্রমল্লিকা ফুল প্রেমীদের অন্য রকম মুগ্ধতা দেয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পুনে থেকে চন্দ্রমল্লিকার ৬-৭ সপ্তাহের চারা ক্রয় করে আনা হয়। চারা রোপনের তিন মাস পরেই ফুল কাটিং (সংগ্রহ) করা হয়। এক গাছে একবারই ফুল কাটিং করা যায়। চন্দ্রমল্লিকা শীতের ফুল হলেও আমরা ব্যতিক্রম সময়ে চাষ করেছি। সময় ব্যতিক্রম হলেও সাফল্য মিলেছে ব্যাপক। পলি সেড দিয়ে ছাদ তৈরি করা হয়েছে। এতে ফুলে বৃষ্টির পানি লাগেনি। তাতে ফুলের আকার বেশ বড় হয়েছে। এক গুচ্ছ চন্দ্রমল্লিকা (একত্রে ২০-২৫টি ফুল) বাজারে এখন পাইকারি দাম ৪০০-৬০০ টাকা। সেই এক গুচ্ছ ফুল খুচরা বাজারে দাম মিলে ৭০০-৯০০ টাকা। তিনি আরো জানান, ১৪ ঘণ্টা আলোর দরকার হয় ফুল গাছের। সে আলোর চাহিদা পূরণে রাতে বাগানে বিদ্যুৎতের সাহায্যে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়। আবার নির্দিষ্ট সময়ে ১৪ ঘণ্টা অন্ধকার প্রয়োজন হয়। সে সময় দিনের বেলায় অন্ধকার সৃষ্টি করতে কালো পলি দিয়ে বাগান ডেকে দিতে হয়। শ্রীপুর উপজেলা কৃষিসম্প্রসারণ কর্মকর্তা তাহমিনা সুলতানা জানান, চন্দ্রমল্লিকার বিভিন্ন জাত রয়েছে। বিভিন্ন রঙের চন্দ্রমল্লিকা আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এদের মধ্যে ছোট ও বড় প্রজাতির চন্দ্রমল্লিকা বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাষ করা হয়। ছোট প্রজাতির মধ্যে, বাসন্তি, উজ্জ্বল হলুদ, হালকা বেগুনী ও হালকা গোলাপী। বড় প্রজাতির মধ্যে রয়েছে চন্দমা, ¯েœাবল, রোজডে, পুইসা। অক্টোবারের দিকে এর চাষ শুরু হয়। পুরো শীতকাল জুড়েই চন্দ্রমল্লিকা ফুঁটে। চন্দ্রমল্লিকা খুবই আকর্ষণীয় ফুল, তাই সব বয়সীদের কাছেই রয়েছে এর অধিক কদর। শ্রীপুর উপজেলা সিনিয়র কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এএসএম মুয়ীদুল হাসান জানান, চন্দ্রমল্লিকা শীতকালের ফুল। অক্টোবরে ফুলের কুঁড়ি আসে আর নভেম্বরে ফুল ফোঁটে। চন্দ্রমল্লিকার গাছ ৫০-১৫০ সেন্টিমিটার উঁচু হয়ে থাকে। গাছে খুঁটি বা সুতার দিয়ে বেঁধে দিতে হয় যাতে হেলে না পড়ে। পানি জমে থাকে না এমন স্থানে এ ফুলের চাষ করতে হয়। চন্দ্রমল্লিকা ফুল গাছে ২০-২৫ দিন তাজা থাকে। চারা ৪০-৪৫ সেমি লম্বা হলে গাছের জন্য ১৪ ঘণ্টা আলোর দরকার হয়। সেই আলোর চাহিদা পূরণে রাতে লাইটের (বিদ্যুৎ) মাধ্যমে আলোর ব্যবস্থা করতে হয়। লম্বা ডাটাসহ এ ফুল কাটিং করা হয়। তবে দেলোয়ারের ব্যতিক্রম সময়ে চন্দ্রমল্লিকা চাষ করে অন্যরকম সাফল্য পেয়েছে। তার অভাবনীয় সাফল্য এ ফুল চাষে আমাদের চন্দ্রমল্লিকার এক নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হবে। দেলোয়ারের সাফল্যে আমরাও গর্বিত। প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে এ চন্দ্রমল্লিকাসহ ফুল চাষ বিস্তারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ