Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাতক্ষীরায় বোরো ক্ষেতে ব্লাস্ট ছত্রাকের আক্রমণ শুকিয়ে যাচ্ছে ধানের শীষ কৃষকের মাঝে বোবাকান্না

| প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আবদুল ওয়াজেদ কচি, সাতক্ষীরা থেকে : সাতক্ষীরায় বোরো ধানের শীষ শুকিয়ে যাচ্ছে। ব্লাস্ট নামক এক ধরনের ছত্রাক সংক্রমণে এমনটি হচ্ছে। এতে কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে। খরচ তুলে আনার চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে সাতক্ষীরায়। বাতাসে ধান গাছের দোল দেখে কৃষকের মনেও দোলা লেগেছিল। তবে তাদের এখন মাথায় হাত। বøাস্ট নামক ছত্রাকের আক্রমণে ধানের শীষ শুকিয়ে যাচ্ছে। সাতক্ষীরার অধিকাংশ এলাকা জলাবদ্ধ থাকে বছরের বেশির ভাগ সময়। বোরো ধানের আবাদই অনেক কৃষকের একমাত্র চাষ। এপ্রিলে ধান পাকতে শুরু করেছে। কৃষকেরা অনেক আশা করে ছিলেন বোরো আবাদে বাম্পার ফলন পাবেন। তবে সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই বøাস্ট নামক ছত্রাকের আক্রমণে ধানের শীষ শুকিয়ে যাচ্ছে মাঠকে মাঠ। কৃষকের মুখের হাসি এখন রূপান্তরিত হয়েছে বোবাকান্নায়। যে কৃষকের নিজস্ব জমি আছে, তার বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে থেকে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। আর বিঘা প্রতি ৮ হাজার টাকা করে অন্যের জমি হারি নিয়ে যারা বোরো ধান চাষ করেছেন তারাতো আরো বিপাকে। অনেকে বাড়ির গরু-ছাগল বিক্রি করে, আবার অনেকে গাছ-গাছালি বিক্রি করে, অনেকে আবার বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে বোরো আবাদ করেছেন। ফসল সংগ্রহের এই সময় বøাস্ট রোগের আক্রমণে দিশেহারা এসব কৃষক। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ৭৪ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যা’ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৫০ হেক্টর বেশি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে দু’ লক্ষ ৯৭ হাজার মেট্রিক টন। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামের নূর হোসেন বোরো চাষ করেছেন চার বিঘা জমিতে। বিঘা প্রতি আট হাজার টাকা করে লীজের টাকা দিতে হয়েছে তাকে। জমি চাষ, বীজ, সার, সেচ, কীটনাশক ও শ্রমিকদের মুজুরি বাবদ খরচ করেছেন বিঘা প্রতি পাঁচ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ৫২ হাজার টাকা খরচ হলেও ১০ হাজার টাকার ধান পাবেন না বলে আশঙ্কা করছেন। তিনি জানান, তিন সপ্তাহ আগে যশোরের মনিরামপুরে বোরো খেতে বøাস্ট ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দেয়। তার পর দেখা দেয় সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলায়। এ খবর তার কাছে পৌঁছানোর এক দিন যেতে না যেতেই তার খেতেও বøাস্ট রোগ দেখা দেয়। এতে ফলন্ত ধানের শীষগুলো দিনের পর দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের কোন পরামর্শই তাদের কাজে লাগছে না বলে দাবি করেন তিনি। একইভাবে দেয়াড়া গ্রামের আইয়ুব হোসেন, ঘলঘলিয়া গ্রামের সাহেব আলীসহ কয়েকজন জানান, ধান লাগানোর কিছুদিন পর পাতায় এক ধরনের চোখ দেখা দেয়। চোখের পাশে কয়েকটি সাদা দাগও তারা লক্ষ্য করেন। এটাকে পাতা বøাস্ট বলা হয়। কয়েকদিন যেতে না যেতেই ধানের ফুল আসার সাথে সাথে শীষের নীচের গীট শুকিয়ে যেতে দেখেছেন। এটাকে ধানের নেক বøস্ট বলা হয়। তবে পাতা বøাস্ট ও নেক বøাস্টের খুব বেশি প্রভাব পড়েনি তাদের এলাকায়। তবে দু’ সপ্তাহ আগে থেকে গীট বøাস্ট (ধানের শীষ শুকিয়ে সাদা হয়ে যাওয়া) রোগ যেভাবে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে তাতে শুধু দেয়াড়া ইউনিয়ন নয়, পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নগুলোতে এর প্রভাব পড়েছে। ছত্রাকনাশক নাটিবো, টাটাবো ও টু-ওভার ¯েপ্র করেও মাঠের পর মাঠ সাদা হয়ে যাচ্ছে। তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের রমজান আলী, সোহাগ হোসেনসহ কয়েকজন জানান, প্রায় এক মাস আগে থেকে কপোতাক্ষেও দু’তীরের কৃষকদের ধান খেতে বøাস্ট ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দেয়। বিষয়টি তারা ইউনিয়ন সহকারি কৃষি কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফাকে জানিয়েছেন। পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। এতে কোন কাজ হয়নি। কৃষি বিভাগের পরামর্শও কোন কাজে লাগছে না। এমনকি জেলা খামার বাড়ির কৃষি কর্মকর্তা প্রকৃত ক্ষতি মানতে চাইছেন না। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ কাজী আব্দুল মান্নান জানান, বর্তমানে ধানে দানা বাঁধা শুরু হয়েছে। কিছু কিছু ধান পেকে যাওয়ায় কাটা শুরু হয়েছে। বর্তমানে কিছু কিছু এলাকায় বøাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ। কৃষকদের ছত্রাকনাশক ¯েপ্র, জমিতে পানি ধরে রাখা ও কখনো জমিতে ইউরিয়া ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে কৃষকদের মাঝে লিফলেটও বিতরণ করা হয়েছে। যদি কৃষক ভাইরা এসব অনুসরণ করেন তাহলে উৎপাদনে খুব একটা অসুবিধা হবে না বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ