Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাঠকশূন্য থাকে চাঁদপুর জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার

| প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বি এম হান্নান, চাঁদপুর থেকে : সেল্ফ ভর্তি সারি সারি বই। ফ্লোরটিও বেশ বড়সড়। চেয়ার-টেবিলসহ সবকিছুই পরিপাটি। প্রতিদিন জাতীয় ও স্থানীয়সহ মোট ১০টি দৈনিক পত্রিকাও থাকে। কর্মকর্তা-কর্মচারীও রয়েছে। প্রতিদিন সময় মতোই আগমন ও প্রস্থান ঘটে তাদের। প্রতি মাসে ১৭ হাজার টাকা বাসা ভাড়া বাবদ দিতে হচ্ছে রাষ্ট্রকে। এতো সব কিছুর আয়োজন যে উদ্দেশ্যে, তা বলতে গেলে ওয়ান থেকে টু পার্সেন্ট অর্জিত। কারণ, যাদের জন্য এ আয়োজন সেই ‘পাঠক’ না থাকায় উদ্দেশ্য হাসিলের এ দুরবস্থা। অনেকটা নিষ্প্রাণ এ চিত্রটি হচ্ছে চাঁদপুর জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারটির। গণগ্রন্থাগারের সবকিছু থাকা সত্তে¡ও এখানে পাঠক নেই। বলতে গেলে এটি ফাঁকাই থাকে। এমন নির্জীব অবস্থার কারণ হিসেবে উপলব্ধি করা গেল, এটি উপযোগী স্থানে অবস্থিত নয়। চাঁদপুর শহরের স্ট্র্যান্ড রোড এলাকায় এ জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারটি অবস্থিত। চৌধুরী জামে মসজিদ মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় এটির অবস্থান। এখানে প্রায় ৭ বছর। এ এলাকাটি শতভাগ ব্যবসায়িক এলাকা। বাসা-বাড়ি রয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি। আশপাশে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় ছাত্রছাত্রীদেরও কোনো আনাগোনা নেই এখানে। এমনকি শিক্ষার্থীদের আড্ডার জায়গাও নয় এটি। অর্থাৎ গণগ্রন্থাগারের জন্য এটি কোনোভাবেই উপযুক্ত স্থান নয়। একেবারেই অনুপযোগী স্থানে হওয়ায় এর উদ্দেশ্য হাসিল বলতে গেলে মোটেই হচ্ছে না। এর আগে শহরের জেএম সেনগুপ্ত রোড এলাকায় ইসলাম মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ছিল জেলা গণগ্রন্থাগারটি। সেখানেও ছিল অনেক বছর। এটি কিছুটা উপযোগী স্থান হলেও শতভাগ ছিল না। গত ক‘দিন আগে বেলা প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে যাওয়া হয় জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারে। দেখা গেল এটির প্রাণহীন অবস্থার চিত্র। কাউছার শেখ নামে একজন স্টাফকে পাওয়া গেল। তিনি এ প্রতিষ্ঠানটির লাইব্রেরি সহকারী। পুরো কক্ষে আরো তিনজনকে পাওয়া গেল। যাদের কেউ পত্রিকা পড়ছেন, কেউ বই পড়ছেন। প্রায় ত্রিশ মিনিট যাবৎ সেখানে অবস্থান করে ওই কর্মকর্তার সাথে কথা হয় এবং বিভিন্ন তথ্য জানা হয়। এ সময়ের মধ্যে আর কোনো পাঠককে এখানে আসতে দেখা যায়নি। এই গণগ্রস্থাগারের লাইব্রেরিয়ানের চার্জে রয়েছেন জুনিয়র লাইব্রেরিয়ান ইকবাল আহমেদ। কথা বলে জানা গেছে, এই গ্রন্থাগারটিতে বইয়ের সংখ্যা রয়েছে ২০ হাজার ৩শ’ ৩৪টি। এখানে এনসাইক্লোপেডিয়া থেকে শুরু করে সাধারণ জ্ঞানের বই রয়েছে। গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা, সমালোচনা এবং বাংলা ও ইংরেজি অভিধানসহ আরো নানা রকমের জ্ঞানসমৃদ্ধ মহামূল্যবান বইয়ের সমাহার রয়েছে এ গণগ্রন্থাগারটিতে। দেশ-বিদেশের বিখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, লেখক ও মনীষীদের জীবনী নিয়ে লেখা বই এবং বুখারি-মুসলিমসহ বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থ ও পবিত্র কোরআন শরীফের বঙ্গানুবাদ গ্রন্থও আছে এখানে। এটি সপ্তাহে বৃহস্পতি ও শুক্রবার দু’দিন বন্ধ থাকে। শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হচ্ছে এটির অফিস সময়। লাইব্রেরি সহকারী জানালেন, প্রতিদিন গড়ে ৩০/৩৫ জন আসেন এই লাইব্রেরিতে। তবে বাস্তবে এর চেয়ে কম হবে বলে মনে হলো। মহামূল্যবান বইয়ে সমৃদ্ধ জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারটি যেখানে সবসময় জমজমাট থাকার কথা সেখানে দিনের প্রায় সময়ই এটি ফাঁকা থাকে। জ্ঞান পিপাসু অনেকেরই জানা নেই পাবলিক লাইব্রেরি বা জেলা গণগ্রন্থাগারটি কোথায়। অথচ এটি যদি শহরের উপযোগী স্থান যেখানে জ্ঞান পিপাসুদের আনাগোনা থাকে সবসময়, সেখানে যদি হতো তাহলে এটির এমন নির্জীব অবস্থা বিরাজ করতো না বলে অভিজ্ঞজন মনে করেন। জানা গেছে, এই সরকারি গণগ্রন্থাগারের জন্য স্থায়ী ভবনের জায়গা প্রায় নির্ধারণ হয়ে আছে। এটি শহরের বিটি রোড এলাকায় হতে পারে। কিন্তু সেটিও একটি লাইব্রেরির জন্য উপযোগী স্থান নয়। অনেকেই পরামর্শ দিয়েছেন, শহরের কালীবাড়ি এলাকায় পৌরসভার টাউন হল মার্কেটের একটি ফ্লোর অথবা কদমতলা এলাকায় নির্মাণাধীন পৌর মার্কেটে একটি ফ্লোর এই জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারটির জন্য নেয়া যেতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ