বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : ১৪৪ ধারা জারি করে শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করার পরও রায়পুরার বাঁশগাড়ীরচরের লাঠিয়ালদের বর্বরতা ও সহিংসতা বন্ধ হচ্ছে না। সাদেক সরকারের ভাড়াটিয়া লাঠিয়াল বাহিনী এলাকা দখল করে নিয়েছে। চেয়ারম্যান সিরাজুল হক সরকার ও তার ৫/৬শ’ সমর্থক এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তারা এখন পার্শ্ববর্তী মির্জারচর, আলিনগর, মধ্যনগর, কাচারিকান্দী, গোপিনাথপুর, সায়দাবাদ, ভেলোয়ারচর ও নরসিংদী শহরে আশ্রয় নিয়েছে। চেয়ারম্যান সিরাজুল হক সরকার ও তার সমর্থকরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাবার পর সাহেদ সরকারের লাঠিয়ালরা দিঘলিয়া, চান্দেরকান্দী, বালুয়াকান্দী, বটতলিকান্দী, সুবহানপুর, জোড়বিলা ও চর-মেঘনা গ্রামসহ বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা দখলে নিয়ে সেখানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। গত বুধবার ঝড়-বৃষ্টির কারণে বিকেলের দিকে সংঘর্ষ থেমে গেলেও গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল ৯টা থেকে সাহেদ সরকারের বাহিনী, সিরাজুল হকের সমর্থকদের বাড়ীঘরে ভাঙচুর, লুটপাট ও একে পর এক অগ্নিসংযোগ করে চলছে। পুড়িয়ে দিয়েছে শতাধিক বাড়ীঘর, লুটপাট করে নিয়ে গেছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। এলাকায় শতাধিক পুলিশ মোতায়েন থাকার পরও সাহেদ সরকারের লাঠিয়ালদের রহস্যজনক কারণে দমন করতে পারছে না।
এলাকার সচেতন লোকজন জানিয়েছে, সাহেদ সরকারের ২/৩শ’ লোক গত প্রায় ১ বছর যাবৎ বাইরে থাকার পর চেয়ারম্যান সিরাজুল হক সরকার তাদের এলাকায় যাবার জন্য বিভিন্নভাবে অনুরোধ উপরোধ করেছে। তিনি নিজে এসে তাদের যার যার বাড়ীতে নিয়ে যাবেন বলে কথা দিয়েছেন। কিন্তুর এরপরও বটতলীকান্দী গ্রামের মোসলেহ উদ্দিন মেম্বার ও তার ভাই আশাব উদ্দিন তাদের জানিয়ে দেন যে, দল না জিতিয়ে তারা এলাকায় যাবে না। তাদের মদদ যুগিয়েছে আওয়ামী লীগেরই একটি শক্তিশালী অংশ। চেয়ারম্যান সিরাজুল হকের পিছনের শক্তি হিসেবে রয়েছেন রায়পুরার এমপি সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। নিলক্ষা ইউনিয়নে তার দল গত এক বছর যাবৎ অপর গ্রæপের সাথে টেঁটা ও বন্দুক যুদ্ধ করে সেখানে একক নেতৃত্ব কায়েম করেছে। কিন্তু বুধবার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নে এমপি রাজুর দল হেরে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
সাহেদ সরকারের লাঠিয়াল বাহিনীকে বাড়ীতে উঠার জন্য নিলক্ষা, চরমধুয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় লাঠিয়াল বাহিনী ভাড়া করে এলাকায় উঠার জন্য রণসাজে সজ্জিত হয়। তারা আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক ও টেঁটা বল্লম নিয়ে বিশাল বাহিনী গঠন করে গত মঙ্গলবার আশেপাশের এলাকায় ওঁৎ পেতে বসে থাকে। এ খবর রায়পুরা থানা পুলিশকে জানানোর পরও তাৎক্ষণিকভাবে আক্রমণ বন্ধে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
এলাকার লোকজন জানায়, তারা মঙ্গলবার বিকেল বা রাতে না গিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে যখন সাহেদ সরকারের লাঠিয়াল বাহিনী জোড়বিল এলাকা দিয়ে আক্রমণ করে তখন পুলিশ এলাকায় প্রবেশ করে। কিন্তু ঘটনাস্থলে যায়নি। এই সময়ের মধ্যে সাহেদ সরকারের বাহিনী শত শত রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। শত শত ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। শত শত টেঁটা ছুড়ে মারে। এ সময় চেয়ারম্যান সিরাজুল হকের বাহিনী প্রথম দিক থেকে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুললেও রহস্যজনক কারণে পুলিশের কোন সাপোর্ট না পাওয়ায় তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। সিরাজুল হকের লাঠিয়াল বাহিনীর ধারণা ছিল পুলিশ তাদের নিলক্ষার মত একচেটিয়া সমর্থন দিয়ে যাবে। কিন্তু বাঁশগাড়ীর ক্ষেত্রে এমপি রাজুর সমর্থিত বাহিনী হওয়া সত্তে¡ও পুলিশ সিরাজুল হক সরকারের বাহিনীকে সাপোর্ট দেয়নি। প্রতিরোধ করেনি সাহেদ সরকারের বাহিনীকে। সিরাজুল হকের সমর্থকরা জানিয়েছে পুলিশের এই রহস্যজনক নীরবতা সাহেদ সরকারের বাহিনীকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করার শামিল। পুলিশের রহস্যজনক নির্লিপ্ততার কারণেই দুটি হত্যাকাÐ সংঘটিত হয়েছে। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক লোক। ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে শতাধিক বাড়ীঘরে।
এদিকে গত বুধবার দুই লাঠিয়াল বাহিনীর মধ্যে বন্দুক যুদ্ধে নিহত দুই জনের লাশ এখনও এলাকায় গিয়ে পৌঁছেনি। তাদের আত্মীয়-স্বজন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত সিরাজুল হকের সমর্থক মাসুদের লাশ সেখানে ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। রাত নাগাদ মাসুদের লাশ এলাকায় পৌঁছতে পারে। নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিহত সাহেদ সরকারের সমর্থক শারফিনের লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্ত শেষে আত্মীয়-স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া দুই ব্যক্তি নিহত হবার ঘটনায় রায়পুরা থানায় এখনও কোন মামলা হয়নি। লাশ দাফন শেষে মামলা দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।