Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে মতানৈক্য বিশেষজ্ঞদের

| প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এক বছরেও রিপোর্ট চ‚ড়ান্ত করতে পারেনি সংসদীয় কমিটি
আটকে আছে ইপিজেড শ্রম বিল-২০১৬
পঞ্চায়েত হাবিব : প্রভাবশালী দেশগুলোর ক‚টনীতিকদের দেয়া প্রস্তাবের সঙ্গে দেশীয় বিশেষজ্ঞ ও সরকার সংশ্লিষ্টদের মতের মিল না হওয়ায় দীর্ঘ এক বছরেও সংসদে উত্থাপিত বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম বিল-২০১৬ বিলের রিপোর্ট চ‚ড়ান্ত করতে পারছে না সংসদীয় কমিটি। অতীতের নিয়ম ভেঙ্গে বিলটিতে পোশাক শিল্পের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিদেশী দেশগুলোর বাংলাদেশে অবস্থানকারী ক‚টনীতিকদের কমিটি বৈঠকে মতামত দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু তারা নিজেরাই যে নিয়ম পালন করেন না বাংলাদেশকে সেই নিয়ম পালনে বাধ্য করতে উত্থাপিত বিলে বিশেষ বিধান সংযুক্ত করার প্রস্তাব দেন। এতে বাদ সাধেন দেশীয় বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ক‚টনীতিকদের দেয়া প্রস্তাব নিজেদের দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। কিন্তু বাংলাদেশ জাতীয় সংসদকে আইন পাসের ক্ষেত্রে নিজ দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে।
সংসদীয় কমিটি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত বছরের এপ্রিলে বিলটি সংসদের পর দীর্ঘ একবছর সময়ে বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার বৈঠক করেও রিপোর্ট চ‚ড়ান্ত করা যায়নি। গতকাল বৃহস্পতিবারও বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভীকে নিয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় কমিটি বৈঠক করেছে। কমিটির সভাপতি আবদুল মতিন খসরুর সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে কমিটির সদস্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, সাহারা খাতুন, শামসুল হক টুকু, তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস এবং আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী ছাড়াও লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হকসহ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এবারও বিষয়টি সুরাহা হয়নি। উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে বিলটি চ‚ড়ান্ত করার প্রচেষ্টা চলছে বলে জানান তারা।
সংসদীয় কমিটি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম বিলটি সংসদে উত্থাপনের পরই এর উপর মতামত দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত, কানাডার হাইকমিশন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) ও ইন্টারন্যাশনাল লেবার অরগানাইজেশন (আইএলও)। পরে কমিটির বৈঠকে তারা প্রতিনিধি পাঠান এবং বিলের উপর মতামত দেন। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে কর্মকর্তা ডেভিট মাইকেলকে পাঠানো হয়। বাংলাদেশে টেকসই গার্মেন্ট শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে বৈঠকে তিনি বলেন, ইপিজেড শ্রম বিলটি পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু বিলে আইএলও সংশ্লিষ্ট বিষয়টি সঠিকভাবে বিবেচিত হয়নি। তিনি স্টেক হোল্ডার ছাড়াও লেবার ইউনিয়ন এবং শিল্প মালিকদের সঙ্গে আলোচনার তাগিদ দেন। এ ছাড়াও আইএলও’র পরামর্শ অনুযায়ী ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডে উন্নীত করার সুপারিশ করেন। বৈঠকে কানাডীয় প্রতিনিধিও একই পরামর্শ দেন। আইএলও’র প্রতিনিধি কেরেন কার্টস ইপিজেড সংগঠন করার স্বাধীনতার উপর জোর দেন। এ বিষয়টি যাতে বিলে থাকে এজন্য অনুরোধ জানান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির এক সদস্য ইনকিলাবকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রেও এসব নিয়ম নেই। অথচ বাংলাদেশে এখন তারা এসব প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন। তিনি বলেন, অনেকটা আন্তর্জাতিক মহলের চাপে পড়েই এদের বৈঠকে ডাকা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কমিটির আরেক সদস্য বলেন, ইপিজেডে বিদেশিদের অনেক বিনিয়োগ রয়েছে। তাই এই বিল নিয়ে তাদের আগ্রহ ব্যাপক। তিনি বলেন, উভয় পক্ষের স্বার্থ যেন রক্ষা পায় সে উদ্দেশ্য নিয়েই মূলত তাদের পরামর্শ নেয়া হয়েছে। এটা একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সর্বসম্মতিক্রমে যেন বিলটি প্রণয়ন করা যায় সেটার দিকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। দেশের স্বার্থে সাধারণত আইন প্রণয়ন করা হয় সেক্ষেত্রে উভয় পক্ষের স্বার্থ বলতে কি বোঝানো হচ্ছে-এ প্রশ্নে সংসদীয় কমিটির এ সদস্য জানান, আসলে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমরা সার্বভৌম। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। দেশের স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়েই আইন প্রণয়ন করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ