Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকার ফের একতরফা নির্বাচনের ষড়যন্ত্র করছে : মির্জা ফখরুল

| প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম


হেফাজতকে বশ করার চেষ্টা করছে
স্টাফ রিপোর্টার : সরকার আবারো একতরফা খেলার মাধ্যমে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অভিযোগ করেন। হেফাজতের সাথে আওয়ামী লীগের সখ্যতা প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান খুব পরিষ্কার। ডাবল স্ট্যান্ডার্ড করি না। ক্ষমতাসীনদের মতো আমরা কথায় এক রকম, কাজে আরেক রকম নই।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ১/১১ সময়ে আওয়ামী লীগের সব মামলা তুলে নেয়া হয়েছে, বিএনপির প্রত্যেকটি মামলা আবার নতুন করে চালু করা হচ্ছে। এই সরকার রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে বলেই এই মামলা-মোকাদ্দমা করে বিএনপিকে মোকাবিলা করতে চায়।
আমরা সরকারকে বার বার বলেছি, আসুন না খোলা ময়দানে, সমান্তরাল ময়দানে একসাথে খেলি। সেটার মধ্যে তারা নেই। তারা আমাদের সবাইকে জেলের মধ্যে ঢুকিয়ে রেখে দিয়ে তারা একতরফা খেলতে চায়। এই খেলা কখনোই এদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না।
দমননীতি’র পথ পরিহার করার আহŸান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হওয়া উচিত। আমাদের দেশনেত্রীসহ নেতা-কর্মীদের সমস্ত মামলাগুলো প্রত্যাহার করে একটা ক্ষেত্র প্রস্তুত করা উচিত যাতে করে আমরা শুধু নির্বাচন নয়, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে বিরোধী দল হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারি।
ভারত থেকে আসা নদীর ঢল ও অতিবৃষ্টিতে নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জের হাওর অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্লাবিত হওয়ায় ফসলহানির বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। গত ১৫ এপ্রিল বিএনপি মহাসচিব ওই এলাকা পরিদর্শন করে দুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন।
হাওর অঞ্চলের অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দলের চেয়ারপার্সনের নির্দেশে দুর্গত হাওর অঞ্চলের পাশে দাঁড়াতে আমরা ১৫ এপ্রিল নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় গিয়েছিলাম। আমরা যেটা দেখে এসেছি, এটা খুবই হৃদয়বিদারক। আমরা এখন পর্যন্ত যে তথ্য পেয়েছি, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জের হাওর এলাকার প্রায় তিন হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়ে গেছে এবং প্রায় ১০ লাখ টন চাল উৎপাদন হতো তা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।
এসব এলাকায় লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চরম মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে আছেন। সরকারি ত্রাণ তৎপরতা লোক দেখানো ও অপ্রতুল। দুর্গত মানুষরা কীভাবে খেয়ে-পরে বাঁচবে, কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবেÑ তা ভেবে মানবেতন দিন যাপন করছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে সাধ্যমত ত্রাণ সামগ্রী দিয়েছি ও নেতা-কর্মীদের দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছি।
নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারের হাওর অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা, প্রশাসনের উদ্যোগে দলমত নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে কমিটি গঠন করে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রকৃত তালিকা প্রণয়ন করে পরবর্তী ফসল না হওয়া পর্যন্ত তাদের ত্রাণ প্রদান, পুরাতন কৃষি ঋণ মওকুফ, আগামী ফসল উৎপাদনের জন্য সুদবিহীন কৃষি ঋণ প্রদান, কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক, তেলসহ কৃষি উপকরণ সরবরাহ, দুর্গত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দ্রæত পুনঃনির্মাণ এবং  খোনে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, নদীসমূহের ড্রেজিং ইত্যাদি দাবি জানান মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভারত থেকে আগত ৫৪টি নদীর পানি প্রবাহের ন্যায্য চুক্তি করতে হবে। উজানের ভারত ওই নদীর পানির নিয়ন্ত্রণ করছে। বর্ষা মৌসুমে পানি ছেড়ে দেয়ায় অন্যদিকে শুষ্ক  মৌসুমে পানি আটকিয়ে দিচ্ছে। এ বছর ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতির কারণে ওই এলাকার নদীর বাঁধসমূহ ‘যথাযথ সংস্কার’ হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ক্ষমতাসীনদের সাথে হেফাজতের সখ্যতার পরিপ্রেক্ষিতে দলের অবস্থান জানতে চাইলে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের অবস্থান খুব পরিষ্কার। আমরা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড করি না তো। আমরা কথায় এক রকম, আবার কাজে আরেক রকম নই, আওয়ামী লীগ যেটা সুন্দর পারে আর কী, পারছে। পিটিয়ে-পুটিয়ে বলে যে, আসো তোমাদের সাথে বন্ধুত্ব করি, ভালোবাসা করি। এগুলোর মধ্যে আমরা সহজে যাই না।
আমরা সবসময় ন্যায়ের পক্ষে আছি, ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি আছি। আমরা মনে করি যে, মাদরাসা শিক্ষাকে আধুনিক করা দরকার। বর্তমান পৃথিবীর উপযোগী তাদের চাহিদা অনুযায়ী তাদেরকে আমরা কাজে লাগাতে পারি, তারা যেন ওয়ার্কিং ফোর্স হিসেবে কাজ করতে পারে, সেজন্য তাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে গড়ে তুলতে চাই। এটাই আমাদের অবস্থান।
শিক্ষানীতির বিরোধিতা করে ২০১০ সালে আত্মপ্রকাশ করা কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে গণজাগরণ আন্দোলনের বিরোধিতা করে। ওই বছর ৫ মে তারা মতিঝিলের শাপলা চত্বরে বিশাল সমাবেশ করে। মধ্যরাতে পুলিশি অভিযানে হেফাজত কর্মীরা ঢাকা ছাড়লেও আলোচনায় থেকে যায় তারা।
এরপর নারীদের তেঁতুলের সঙ্গে তুলনা করে সরকারের মন্ত্রী, নারী অধিকার কর্মী ও সংস্কৃতি কর্মীসহ বিভিন্ন অঙ্গন সমালোচনায় বিদ্ধ হন হেফাজত আমির শফী। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার গণভবনে শাহ আহমদ শফীসহ কওমির ওলামাদের নিয়ে এক অনুষ্ঠানে তাদের ওই দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে কওমির সনদকে স্বীকৃতির ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। উচ্চ আদালত চত্বর থেকে গ্রিক দেবির মূর্তি অপসারণে উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি যে, হেফাজতে ইসলাম তখন যে দাবি করেছিল, তার মধ্যে সবগুলো দাবি নয়, কিছু কিছু দাবি আমরা যুক্তিসঙ্গত মনে করেছিলাম, আমরা সেগুলোকে সমর্থন দিয়েছিলাম। যে কাজটা উনারা (বর্তমান সরকার) এখন করলেন বিরাট ঢাকঢোল পিটিয়ে হেলিকপ্টারে দিয়ে উনারা উড়িয়ে নিয়ে আসলেন, নিয়ে এসে গণভবনে মাওলানা শফীকে (শাহ আহমেদ শফী) এবং অন্যদেরকে পাশে বসিয়ে সুন্দর করে খাবার-দাবার তুলে দিয়ে করলেন। ভালো কথা। হসপিটালিটি- আমাদের বাঙালির একটা ঐতিহ্য, সুন্দর কথা। কিন্তু কী করলেন? যেটা অতীতে হয়ে গেছে। দওডা হাদিস ডিগ্রিÑ এটা আমাদের সরকারের সময়ে গ্যাজেট নোটিফিকেশন হয়ে গিয়েছিল, আপনারা (সাংবাদিক) নিশ্চয় জানেন সেটা। কপিও আছে আমাদের কাছে, এর স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। এটাকে আবার নতুন করে বিভিন্নভাবে বশটস করে তারা চেষ্টা করছেন, এখন তাদের সঙ্গে চেষ্টা করছেন একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার।
সারা দেশে নেতা-কর্মীদের নতুন করে হয়রানি করার অভিযোগ করে স¤প্রতি কারাগারে যাওয়া দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান বাচ্চু, নাটোর জেলা নেতা বাবলু চেয়ারম্যান, আজিজুর রহমান মেম্বার, নওশাদ আলী মাস্টারের মুক্তির দাবিও জানান মির্জা ফখরুল।
একই সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার কসবা উপজেলার যুবদল-ছাত্র দলের কর্মিসভায় পুলিশি হামলায় ৩০ জন  নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানান তিনি।
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা নির্বাচনে যেতে চাই, তবে  সেজন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। সকল দল যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে তার জন্য পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে জেলে রেখে দেবেন, নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেবেন- আর বলবেন যে তোমরা নির্বাচনে যাও। তাহলে আমরা নির্বাচনে কীভাবে যাবো।
আমরা বার বার বলছি, দেশে গণতন্ত্র নেই, গণতান্ত্রিক কোনো স্পেস নেই। তাই আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সুষ্ঠু নির্বাচনে হলে আমাদের নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিলে আমরা নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। সকল দলের সমান সুযোগ ছাড়া নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফর প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভুটানের সঙ্গে আমাদের একটা জরুরি বিষয় আছে সেটা হচ্ছে জলবিদ্যুৎ। আমাদের আগে প্রস্তাব ছিল, ট্রাই পা ট্রাই- নেপাল, ভুটান, ভারত ও চীনÑ এসবের সঙ্গে চুক্তি করা দরকার ছিল। ভারত কখনো দ্বি-পাক্ষিক ছাড়া কখনোই অন্য কোনো দেশকে আনতে চায়নি, যার ফলে টোটাল বিষয়টা করা সম্ভব হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফর সফলতা কামনা করি। তবে যদি দেখি ভারতের মতো উনি খালি হাতে ফিরে আসলেন, দিয়ে আসলেন সবকিছু- তখন সেটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে  বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা  সৈয়দ মো. আলমগীর, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাখাওয়াৎ হোসেন জীবন, বিলকিস শিরিন, আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, কেন্দ্রীয়  নেতা আব্দুুল বারী ড্যানি, রাবেয়া আলী, রফিকুল ইসলাম হেলালী, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল ফারুক, নেত্রকোনা জেলা সভাপতি আশরাফ উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মির্জা হায়দার আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম মনিরুজ্জামান দুদু, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শরিফুল হাসান আরিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ