বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড়
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব গ্রহণের আগেই প্রায় দশ বছরের পুরনো দুদকের মামলার ফাঁদে আটকা পড়লেন মনিরুল হক সাক্কু। দলীয় প্রতীকে এই প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী সাক্কু আওয়ামী লীগের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হোন। প্রায় দশ বছর আগে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা একটি চলমান মামলায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লার আদালত মেয়র সাক্কুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ও মালামাল জব্দের নির্দেশ দেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এখবর কুমিল্লায় ছড়িয়ে পড়লে এঘটনাকে মেয়র সাক্কুর এবারের জয়লাভে সরকার ঈর্ষান্বিত হয়ে ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে দায়ের করা বিতর্কিত মামলাটিকে আবারো অক্সিজেন দিয়ে জাগিয়ে তোলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কুমিল্লা বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম-ফেসবুকে এনিয়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠেছে।
ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময়ে ২০০৮ সালের ৭ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারি পরিচালক শাহীন আরা মমতাজ বাদী হয়ে মনিরুল হক সাক্কু ও তার স্ত্রী জেসমিন আফরোজ টিকলির বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে ঢাকা রমনা থানায় দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৫ কোটি ৫৭ লাখ ৯শ’ ৩৩ হাজার টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ১ কোটি ১২ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয়। দীর্ঘ আট বছর তদন্ত শেষে গত বছরের ৪ ফেব্রæয়ারি দুদকের সহকারি পরিচালক নুরুল হুদা আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। তবে মামলার অভিযোগ থেকে সাক্কুর স্ত্রী আফরোজা জেসমিনকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এ মামলায় সাক্কু আগ থেকেই জামিনে রয়েছেন বলে সাক্কুর পরিবারের দাবী। এ প্রসঙ্গে মামলার সরকারি অতিরিক্ত পিপি তাপস কুমার পাল জানান, ‘ওই মামলায় ২০১০ সালে ৬ মাসের জামিন নিয়েছিলেন সাক্কু। পরে আর জামিন নেননি। তার স্ত্রী মামলাটির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। কিন্তু সে রিট খারিজ হয়ে যায়।’
এদিকে গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রসঙ্গে মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘দুদকের ওই মামলাটিতে অনেক আগেই হাইকোর্ট থেকে তার জামিন নেয়া আছে। তারপরও নিম্ন আদালত থেকে হঠাৎ করে কেনো গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলো এটা বুঝতে পারছি না। বুধবার (আজ) আগের জামিন সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র আদালতে পাঠাবো। এরপর আইনি প্রক্রিয়ায় যা যা করার আমরা সবই করবো।’
এদিকে দুদকের একটি মামলায় কুসিক মেয়র মনিরুল সাক্কুর বিরুদ্ধে গতকাল মঙ্গলবার আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ও সাক্কুর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দের নির্দেশ দেয়। বিষয়টি কুমিল্লাসহ সারাদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়ে ওঠে। ফেসবুক ব্যবহারকারিদের অনেকেই মেয়র সাক্কুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়টিকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত একজন জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধিকে জনবিচ্ছিন্ন রাখার অপকৌশল মাত্র। এতে করে সরকার নিজেই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। অনেকেই লিখেছেন কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে প্রকাশ্যে ছাত্রলীগ নেতা সাইফুলকে যারা খুন করেছে তারা মামলার আসামী হয়েও গ্রেফতার হচ্ছে না। কিন্তু দুইবারের নির্বাচিত মেয়র সাক্কুর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। তাও আবার এবারের সিটি নির্বাচনে জয়লাভ করায়। এরকম হাজারো মন্তব্য, প্রতিবাদ, নিন্দা মিনিটে মিনিটে ওঠে আসছে বিভিন্নজনের ফেসবুক আইডিতে। সদ্য শেষ হওয়া কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ফের মেয়র নির্বাচিত হওয়াটাই বিএনপির প্রভাবশালী নেতা মনিরুল হক সাক্কুর জন্য পুরনো মামলার নতুন খড়গ হয়ে দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয়সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও কুমিল্লা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের বিতর্কিত ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিন সরকারের সময়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রী পরিষদের অনেকের বিরুদ্ধে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ বিএনপির অনেক নেতার বিরুদ্ধে দুদক মামলা করেছিল। এসব সাজানো মামলার বিরুদ্ধে এখনো আইনি লড়াই করে যাচ্ছে বিএনপি। ওয়ান-ইলেভেনের সময়ের এসব মামলা বরাবরই বিতর্কিত। প্রায় দশ বছর আগে তৎকালীন কুমিল্লা পৌর মেয়র জননেতা মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে দুদক ঢাকায় মামলা করে। এছাড়াও ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে সাক্কুকে বিভিন্ন মামলার জালে আটকানোর অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি এসব মামলায় আইনি লড়াই চালিয়ে পৌর মেয়রের দায়িত্ব ফিরে পান। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠন হওয়ার পর সাক্কু দলের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে জয়লাভের মধ্যদিয়ে প্রমাণ করেছেন তিনি সিটিতে কতোটা জনপ্রিয়। গত পাঁচ বছরে সাক্কু সিটি মেয়রের দায়িত্বে থেকে নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনসহ ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। যার ফলশ্রæতিতে এবারে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে মেয়র নির্বাচিত হোন। এবারের নির্বাচনেও সাক্কু আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করেছে। সাক্কুর জনপ্রিয়তা ও দ্বিতীয়বার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার কারণে ঈর্ষান্বিত হয়ে সরকারের ইশারায় দশ বছর আগের মামলা যেনো অক্সিজেন দিয়ে পুনঃজীবিত করা হয়েছে। আমরা এনিয়ে বিচলিত নই। আইনি প্রক্রিয়ায় সবকিছু ঠিকঠাক করে মেয়র সাক্কু শপথ নেবেন, দায়িত্বেও বসবেন এবং নগর উন্নয়নে কাজ শুরু করবেন।
মেয়র সাক্কুর নামে গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন
কুমিল্লা সিটি কপোরেশনে ৩০ মার্চ ভোটের দুই সপ্তাহ পর নির্বাচিত মেয়র সাক্কুর নাম-ঠিকানাসহ গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। এখন শপথ নেয়ার বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দেখবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
গত সোমবার ইসির অনুমোদন সাপেক্ষে নির্বাচিতের গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। ইসি সচিব ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের কাজ নির্বাচন ও নির্বাচিতের গেজেট করা। গ্রেফতারি পরোয়ানার পর সাক্কুর শপথ ও দায়িত্ব নেয়া নিয়ে জটিলতার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশন সচিব বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। সেক্ষেত্রে ইসির করার কিছু নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতার হলেও শপথ নিতে বাধা থাকবে না। সেক্ষেত্রে জামিন নিয়ে শপথের ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ থাকবে। তবে মামলার চার্জশিট আদালতে গৃহীত হলে শপথ নেয়ার পরও বরখাস্ত করার সুযোগ থাকবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচিত প্রার্থীকে শপথ নেয়ার বিধান রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে শপথ নিতে না পারলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে এ সময়সীমাও বাড়ানো হতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।