রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
মোক্তার হোসেন মোল্লা, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : সোনারগাঁয়ের জামপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কৃষকের তিন ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। সোনারগাঁওয়ের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী মহল, জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত মাটি সন্ত্রাসীদের একটি সিন্ডিকেট কিছু কৃষি জমি ক্রয় করে অন্যন্যা কৃষি জমির মাটি জোরপূর্বক কেটে নিয়ে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাটি সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি জামপুর ইউনিয়নের সরকারি খাস সম্পত্তি বস্তল খালটিও। জানা গেছে, উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের কলতাপাড়া মৌজার বস্তল এলাকার তিন ফসলি কৃষি জমির মাটি জোরপূর্বক ও কিছু জমির মালিকের কাছ থেকে ক্রয় করে কেটে ফেলা হচ্ছে। প্রতিটি জমি ভেকু দিয়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ ফুট গর্ত করে কেটে নিচ্ছে মাটি সন্ত্রাসীরা। ফলে পাশের জমির মাটি এমনিতেই গর্তে পড়ে যাচ্ছে। তাই পার্শ্ববর্তী জমির মালিকরা বাধ্য হয়েই মাটি বিক্রি করতে হচ্ছে মাটি সন্ত্রাসীদের কাছে। ইতিমধ্যে কলতাপাড়া মৌজার বস্তল এলাকার ৩০০ বিঘা কৃষি জমির মধ্যে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ বিঘা ফসলি জমি কেটে ফেলেছে মাটি সন্ত্রাসীরা। এতে করে ধীরে ধীরে বাকি জমিও চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এমনকি, মাটি সন্ত্রাসীরা অপরিকল্পিতভাবে মাটি কাটছে, ফলে মাছ চাষও করা যাবে না এসব জমিতে। এছাড়া সোনারগাঁয়ের এশিয়ান হাইওয়ে থেকে সিংলাব চক পর্যন্ত মাটি নেয়ার জন্য কৃষকের ফসলি জমির ওপর দিয়ে ট্রাক চলাচলের রাস্তা করা হয়েছে। কৃষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ও জোরপূর্বক প্রায় ২০টি রাস্তা করা হয়েছে। ফসলি জমি রক্ষায় নিরীহ কৃষকরা মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রশাসনসহ রাজনৈতিক নেতাদের কাছে গিয়েও কোন সুফল পায়নি। আর এভাবে ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে কয়েক বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন ক্ষমতাশীল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আর এতে ফসলি জমি পরিণত হচ্ছে ডোবা ও অপরিকল্পিত পুকুরে। ফলে সর্বস্বান্ত হচ্ছে কৃষকরা। বিশেষ করে যারা বর্গ নিয়ে কৃষি জমি চাষ করতো তারা এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। কোন কৃষক মাটি সন্ত্রাসীদের কাছে ফসলি জমির মাটি বিক্রি করতে অস্বীকার করলে রাতের আঁধারে জোরপূর্বক মাটি কেটে নিয়ে যায়। একই অবস্থা জামপুর ইউনিয়নের পেরাব, কাহেনা, সিংলাব, পেচাইন, পাকুন্দা ও রাউৎগাঁও মৌজার বিস্তীর্ণ এলাকার প্রায় দুই হাজার বিঘা ফসলি কৃষি জমির। যার মধ্যে ইতিমধ্যে ৩শ বিঘার মাটি কেটে নিয়ে গেছে মাটি সন্ত্রাসীরা। জানা গেছে, জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হামিম শিকদার শিপলুর নেতৃত্বে কলতাপাড়া গ্রামের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আশারিয়া মোল্লার ছেলে ইদ্রিস আলী, জামপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান রুস্তম আলীর ছেলে যুবলীগ নেতা সোহরাব হোসেন, তিলাব গ্রামের যুবলীগ নেতা ডিস আল-আমিন, হাতুড়াপাড়া গ্রামের আবু সিদ্দিক মিয়ার ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা বিদ্যুৎ, কলতাপাড়া গ্রামের আব্দুল সাত্তারের ছেলে যুবলীগ নেতা ইসহাক, হাতুড়াপাড়া গ্রামের আব্দুর রবের ছেলে ফারুক ও হাতুড়াপাড়া গ্রামের যুবলীগ নেতা গুলজারের সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেট মাটি কাটছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় কৃষকরা। জামপুর ইউপির বস্তল গ্রামের দীল মোহাম্মদ ও গোলজার হোসেনের কলতাপাড়া মৌজার কৃষি জমি জোরপূর্বক মাটি কাটতে গিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে ফিরে আসে মাটি সন্ত্রাসীরা। জামপুর ইউনিয়নের পেচাইন গ্রামের নাসির উদ্দিনের ছেলে ওসমান গনি বলেন, স্থানীয় মাটি সন্ত্রাসীদের নেতৃত্বে কৃষি জমির মাটি ৪-৫ বছর ধরে ইটভাটায় বিক্রি করছে। জামপুর ইউনিয়নেরচেরাগ আলী ছেলে জসিমউদ্দিন জানায়, মাটি কাটির সাথে মোল্লা বাড়ি, বড় বাড়িসহ প্রভাবশালীরা জড়িত। স্থানীয় ফসলি জমির মালিকরা জানায়, মাটি কাটার সময় স্থানীয় জামপুর ইউনিয়ন ভূমি-সহকারী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন তাদের সহযোগিতা করেন। উপজেলা ভূমি অফিস থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে আসলে আনোয়ার হোসেন মাটি সন্ত্রাসীদের খবর দিয়ে দেন। এভাবে তিনিও সিন্ডিকেটের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় কৃষকরা। উপজেলা ভূমি অফিসে অভিযোগ দিলে শুধু প্রতিবেদন পাঠিয়েই তার দায়িত্ব শেষ করেন আনোয়ার হোসেন। জামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হামিম শিকদার শিপলু অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, তিনি এভাবে মাটি কাটা বন্ধ করতে প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছেন। সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূইয়া জানায়, যারা মাটি সন্ত্রাসী তারা আওয়ামী লীগের সদস্যও নয়। তারা স্বার্থ হাসিলের জন্য আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করছে। সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশেক পারভেজ জানায়, মাটি কাটার বিষয়টি পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ ও কৃষির জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এভাবে মাটি কাটলে সোনারগাঁয়ের খাদ্য নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পরবে। কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে ফেললে মাটির উর্বরতা হারায়। আর উর্বরতা ফিরে আসতে প্রায় ৩০ বছর সময়ও লাগতে পারে। আর এভাবে আবাদি কৃষি জমির মাটি কেটে নিয়ে গেলে এ এলাকায় ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি অন্যন্যা কৃষি জমিগুলোও প্রচÐ ঝুঁকির সম্মুখীন হবে, খাদ্য নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়বে। মাটি সন্ত্রাসীরা ফসলি জমির প্রায় ২৫-৩০ ফুট গর্ত করে মাটি কেটে নেয়ার ফলে জমিগুলো বর্তমানে অনাবাদি হয়ে পরেছে। জমিগুলো অপরিকল্পিতভাবে কাটা হচ্ছে ফলে এসব জমিতে মাছ চাষ করা যাবে না। এই কৃষি জমিতে ভবিষতেও ফসল ফলানো যাবে না। এসব কৃষি জমিতে তিনটি ফসল হতো যার মধ্যে সরিষা বা ডাল, বোরো ও বোনা আমন। এসব জমিতে মাটি কাটার ফলে বর্তমানে তিনটি বোরো স্কিম বন্ধ হয়ে গেছে। আমি স্থানীয় কৃষকদের সাথে আলোচনা করে জানতে পেরেছি, মাটি সন্ত্রাসীরা ২-৩ বছর পূর্বে থেকেই কৃষকের জমির মাটি ক্রয় করে বড় বড় গর্ত করে, এতে করে পার্শ্বের কৃষকদের জমির মাটি এমনিতে ভেঙ্গে পড়ে যা পরবর্তীতে তাদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। আমরা ফসলি জমির মাটি কাটার বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে অবহিত করেছি। মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে মাটি সন্ত্রাসীর বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। আমি তদন্ত করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন প্রেরণ করেছি। ইউনিয়ন কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে স্থানীয় কৃষকদের সচেতন করার জন্য। আমরা সচেতনা সৃষ্টির সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুবায়েত হায়াত শিপলু জানায়, মাটি সন্ত্রাসী চক্রটি অত্যন্ত শক্তিশালী। তারা ২৫-৩০ ফুট গর্ত করে ফসলি জমির মাটি কাটছে। আমি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে একজনকে সাজা দিয়েছি। তবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে গেলে তারা সবাই পালিয়ে যায়। আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি। এমনকি, সোনারগাঁ থানা পুলিশকে মাটি সন্ত্রাসীদের লিস্ট তৈরি করে তাদের গ্রেফতারের জন্য বলেছি। সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম জানায়, ফসলি জমির মাটি কাটলে তাদের আটক করুন। সন্ত্রাসীদের আটক করার ক্ষমতা সাধারণ জনগণের রয়েছে। আটক করে আমাদের খবর দিন। কৃষকরা আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে মামলা দায়ের করুক। মাটি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আদালতে এখন পর্যন্ত একটি মামলাও হয়নি। আর ইটভাটাগুলো সোনারগাঁয়ের বাইরে। সোনারগাঁয়ের মধ্যে থাকলে তাদের সতর্ক করা যেত। তবে আমি সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে পাঠিয়ে ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধ করার ব্যবস্থা করব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।