Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাধবপুরে বিলুপ্তির পথে মৃৎশিল্প

| প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাধবপুর (হবিগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : আধুনিক শিল্পের ছোঁয়ায় হবিগঞ্জের মাধবপুরে মৃৎশিল্প বিলুপ্তির পথে। বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প ধীরে ধীরে স্মৃতির খাতায় নাম লেখতে শুরু করেছে। বর্তমান বাজারে প্লাস্টিক, স্টিল, মেলামাইন, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদির জিনিস বাজারে ছেয়ে গেছে প্রতিযোগিতামূলক এই বাজারে মাটির টেকসই সামাজিকতা সব মিলিয়ে গ্রাহকরা ব্যবহারে মৃৎশিল্পে অনুৎসাহিত হচ্ছে। মৃৎশিল্পীরা যে পাড়ায় বাস করে তার নাম কুমোর পাড়া। উপজেলার হরিশ্যামা, বেঙ্গাডোবা, হরষপুরসহ আরো অনেক গ্রামে শত শত পরিবার এ পেশার উপর নির্ভরশীল। নদী পাড়ে গ্রাম ও পাল বংশের লোকেরা এ পেশার সাথে জড়িত থাকলেও বর্তমানে এ ব্যবসার বিরুপ প্রভাবে কুমোররা বাব-দাদার ঐতিহ্যবাহী এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য। শুকনো মৌসুমে ওইসব এলাকার কুমোররা এঁটেল মাটি সংগ্রহ ও খড় লাকড়ি সংগ্রহ করে সারা বছরের জন্য। পরিবারের নারী-পুরুষ সকল সদস্য এ পেশার সাথে জড়িত। প্রথম ধাপে মাটি কেটে কাঁদা বানানোর পর তারা পাকা হাতের ছোঁয়ায় সুনিপুণভাবে নরম মাটির দলা চাকার উপর রেখে চাক ঘুরিয়ে যাবতীয় মৃৎশিল্প তৈরি করে। এরপর তা রোদে শুকিয়ে এবং রং মাখিয়ে নেয়া হয় জ্বলন্ত চুল্লিতে পোড়ানোর জন্য। কুমোরদের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষাব্যবস্থা নেই। বাব-দাদার কাছ থেকেই হাতে খড়ি। তবুও খুব সুন্দর করে নিখুঁতভাবে তৈরি করে শাঙ্কি, হাঁড়ি, পাতিল, কলসি, পুতুল, ব্যাংক, পিঠা তৈরির সাচ, সড়া হাতি, ঘোড়া, নৌকা, ফুলের টব, ফুলদানি, দইয়ের পাতিলসহ নানা প্রকার জিনিসপত্র। হরিশ্যামা গ্রামের পরাণ পাল ও দিলীপ পালের সাথে কথা বলে জানা যায়, এঁটেল মাটির দাম লাকড়ির দাম বর্তমানে তাদের তৈরির জিনিসপত্রের দাম ও চাহিদা সবমিলিয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। তারা আক্ষেপ করে বলেন, পূর্বে এ শিল্পের জন্য এঁটেল মাটি বিনে পয়সায় পাওয়া যেত। আর বর্তমানে মাটি পাওয়া গেলেও অনেক দামে তা কিনতে হচ্ছে। খড় ও লাকড়ির দাম অনেক বেশি। বর্তমান বাজারের সাথে পাল্লা দিয়ে মৃৎশিল্পের দাম তেমনভাবে বাড়ছে না। তাছাড়া আধুনিক প্লাস্টিক মেলামাইন, স্টিল, অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি সামগ্রী পছন্দ সই ও টেকসই। তার এর প্রসারও দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে ফুলের টব ও দইয়ের পাতিল বাজারজাত হয়। আর এ চলাতে তাদের প্রতিনিয়ত লোকসানের কারণে তাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এজন্য এ পেশা থেকে অনেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ