Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সীতাকুন্ডে সরকারি খাগুড়িয়াছড়া দখল করে স্থাপনা নির্মাণ

| প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) থেকে : সীতাকুন্ডে প্রকাশ্যে সরকারি ছরা দখল করে সেখানে স্থাপনা নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী মহল। এতে ঐ এলাকায় পাহাড় থেকে পানি নামার পথ রুদ্ধ হয়ে বর্ষায় জলাবদ্ধ সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। ফলে স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকুন্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কদমরসুল কেশবপুর মৌজার খাগুড়িয়া ছরাটির মধ্য দিয়ে যুগ যুগ ধরে পাহাড়ি ঝর্ণার পানি সাগরে মিলিত হচ্ছে। এতে এই এলাকার কৃষি কাজ যেমন সমৃদ্ধ হয় তেমনি এই পানি মৎস্য চাষসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেন এলাকাবাসী। এদিকে সুদীর্ঘকাল ধরে খালটি জনকল্যাণে ব্যবহার হয়ে আসলেও সাম্প্রতিক সময়ে আইন-কানুনের কোনো তোয়াক্কা না করে ছরাটির মধ্যেই স্থাপনা নির্মাণ করছেন ভাটিয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ইসহাক। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সরেজমিনে কদমরসুল কেশবপুরের খাগুড়িয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একেবারে প্রকাশ্যেই ভরাট হচ্ছে সরকারি এই ছরা। দেখা গেছে কাগজে-কলমে ২২ ফিট দীর্ঘ ছরাটি দখলে এখন একেবারে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। ছরাটির পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ের বেশিরভাগ অংশই পাকা স্থাপনার নিচে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। খালের দুই পাশেই পাকা ঢালাই দিয়ে একটি ব্রিজ তৈরির কাজ চলছে। এসময় স্থাপনা নির্মাণের দায়িত্বে থাকা লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, খালের দু’পাড়ের জায়গার মালিক ভাটিয়ারী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ইসহাকের। তিনি খালের দুই পাশ একত্রিত করে একটি কারখানা নির্মাণের পরিকল্পনায় এই ব্রিজ নির্মাণ করছেন। কিন্তু সরকারি খাল কেন দখল করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়নি তারা। এদিকে এভাবে প্রকাশ্যে সরকারি খালটি দখল হয়ে যাওয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। এ বিষয়ে কেশবপুরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, এই ছরা দিয়ে সারাবছর পাহাড়ি ঝর্নার পানি নেমে আসে সাগরে। এতে এলাকার মানুষ বন্যাকবলিত হওয়া থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে প্রভাবশালী মহল যার যেদিকে খুশি দখলে মেতে উঠেছে। সবাই নিজের বাড়ি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সীমানা বাড়াতে খালের অংশ গিলে খাচ্ছেন। একই কান্ড ঘটছে এ ক্ষেত্রেও। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল খাল। এর আয়তন ২২ ফিট। কিন্তু ক্রমবর্ধমান দখলে এটি ছোট হয়ে এখন ছরায় রুপ নিয়েছে। ছরাটি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঐ এলাকার ইউপি সদস্য জহুরুল ইসলাম মেম্বার বলেন, ছরার মধ্যে একটি ব্রিজ তৈরি হচ্ছে। তবে ছরাটির ঐ অংশ সরকারি নাকি ব্যক্তি মালিকানাধীন তা আমরা জানি না। মো. ইসহাক এ বিষয়ে আমাদেরকে কিছুই জানাননি। বিষয়টি নিয়ে এসি ল্যান্ডের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকুন্ডের সহকারী কমিশনার ভূমি মো. রুহুল আমিন প্রতিবেদককে বলেন, ছরাটি দখলের অভিযোগ পেয়ে শনিবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল ইসলাম ভূইয়া ও আমি সেখানে গিয়ে জায়গাটি পরিমাপ করেছি। ছরার উপর স্থাপনা নির্মাণের প্রমাণ আমরা পেয়েছি। তবে ৩০ বছর আগের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী ছরাটি ছিল আরো ৫ ফিট পূর্ব পার্শ্বে। প্রাকৃতিকভাবেই গতি পরিবর্তন হয়ে এটি বর্তমান স্থানে এসেছে। এ জায়গাটি কার সেটা বড় নয়। প্রাকৃতিকভাবে গতি পরিবর্তিত হওয়া এসব জলাশয় কিছুতেই ভরাট বা দখলের অধিকার কারো নেই। তাই আমরা সেখানে নির্মাণ কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি। ছরাটি ২২ ফিট আয়তনের হলেও বর্তমানে দখলে অনেক ছোট হয়ে গেছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, জায়গার মালিক ইসহাক যদি সেখানে ব্রিজ করতে চান তাহলে কমপক্ষে ২২ ফিট ছরা ছেড়ে দিয়ে তারপর কাজ করতে পারবে। তিনি লিখিতভাবে সেভাবে কাজ করার আবেদন করলে আমরা বিবেচনা করব। তবে ছরা কাউকে দখলে নিতে দেয়া হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ