Inqilab Logo

রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

শিক্ষার আলোবঞ্চিত শত শত শিক্ষার্থী

বিদ্যালয়ে ১ শিক্ষক দিয়ে চলছে ৫ বছর

| প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কামরুজ্জামান টুটুল, হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) থেকে : চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে প্রায় ৫ বছর ধরে এক বিদ্যালয়ে এক শিক্ষক দিয়ে চলছে শিক্ষাকার্যক্রম। এ কারণে ঐ এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধস নেমেছে। ঠিক কি কারণে ঐ বিদ্যালয়ে শিক্ষক পাঠানো হচ্ছে না বা গিয়ে লবিংয়ের মাধ্যমে চলে আসে এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমান বলছেন, ঐ বিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষক আসছেন ১৮ এপ্রিল যোগদান করবেন। তবে বর্তমান সরকার শিক্ষার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলেও এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে অভিভাবকগণ ইনকিলাবকে জানিয়েছেন। একেবারে ব্যতিক্রম এই ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার দ্বাদশগ্রাম ইউনিয়নের চারিআনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গত ১০ মার্চ সকাল ১১টায় বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে দেখা যায় ঐ বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষসহ প্রতিটি রুমে তালা ঝুলছে। জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ডটিতে পতাকা নেই। কোথায়ও কোনো শিক্ষক বা শিক্ষার্থী নেই। সরকারের নির্দিষ্ট ডিজাইনের ২০১১-২০১২ অর্থবছরে করা ভবন বর্ণহীন আর সৌন্দর্যহীন হয়ে বোবার মতো করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীদের কলকাকলিতে মুখরিত হওয়ার কথা সেখানে জনমানবহীন একটি ভবন ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ছে না। বিদ্যালয়ের ভবনের ঠিক পেছনে মতলব উপজেলা। বিদ্যালয় মাঠের দক্ষিন পাশে একটি মাদরাসা। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময় শিক্ষক পুল থেকে ৪ জন শিক্ষককে এখানে দেয়া হয়েছে। এরা চলিত মাসের ১৮ তারিখে যোগদানের সর্বশেষ সময়। তবে যে ৪ জনকে শিক্ষক পুল থেকে দেয়া হয়েছে সেই ৪ জন সরকারের অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। আর এ কারণে সদ্য নিয়োগকৃত ঐ শিক্ষকরা যোগদানের সম্ভবনা ক্ষীণ রয়েছে। আবার এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে একজন প্যারা শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। সেই শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে আসেন না। সরজমিনে গেলে কথা হয় বিদ্যালয় সংলগ্ন পাশের বেপারী বাড়ির শিক্ষার্থী ওসমান গনি, ইয়াছিন, বৃষ্টি, আ. বোরহান বলেন, আজ আমাদের বিদ্যালয় ছুটি। স্যারে আমাদেরকে ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। এ সময় এই শিক্ষর্থীরা আরো বলেন, আমাদের এখানে কোনো সময় খেলাধুলার অনুষ্ঠান হয়না, পিটি (অ্যাসেম্বলি) হয় না। স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক আসলে লাভ নেই। একেবারে অজপাড়াগাঁয়ে হওয়ার কারণে সবাই সবার দৌড়ের কল্যাণে অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যান। অনেকে আসার আগেই বদলি ঠেকিয়ে দেয়। এই নাটকের কারণে আমাদের বাচ্চারা মেধাহীন হয়ে যাচ্ছে আর এ অবস্থা চলে আসছে বেশ কয়েক বছর ধরে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা হাছানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বিদ্যালয়ে ১ জন শিক্ষক। উপজেলা অফিসে মিটিং থাকার কারণে বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে উপজেলায় এসেছি। বর্তমানে শিশু শ্রেণীসহ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ১০৩ জন। আরেক প্রশ্নে এই শিক্ষক বলেন, আমাকে রাজারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ডেপুটেশনে পাঠানো হয়। ডেপুটেশনের মেয়াদ ৬ মাস হলে আমি দীর্ঘ ৪ বছর ৫ মাস ধরে এ বিদ্যালয়ে চাকরি করছি। অপর এক প্রশ্নে এই শিক্ষক বলেন, মাঝখান দিয়ে শিক্ষক দেয়া হয়েছিল কিন্তু কয়েক মাস থাকার পরে উনি চলে গেছেন। রয়ে গেছি এই আমি। এ সময় বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য অ্যাড. কেএম রাসেল সফিক বলেন, শিক্ষক না থাকার কারণে এখানে পড়ালেখা কিছুই হয়নি। আমরা শিক্ষক চাই। এর আমরাই সব ঠিক করে দেব। হাজীগঞ্জ উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (রাজারগাঁও ক্লাস্টার) মো. জামাল হোসেন বলেন, ঐখানে প্যারা শিক্ষক রয়েছে আর শিক্ষক পুল থেকে ইতিমধ্যে ৪ জন শিক্ষক দেয়া হয়েছে। ঐ শিক্ষকরা অন্যত্র চাকরি করছেন তারা আসবেন এমন প্রপাকাÐের বিষয়ে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে আমরা জেনেছি তবে ১৮ এপ্রিলের পরে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমান বলেন, ঐ বিদ্যালয়ে আমরা শিক্ষক পুল থেকে প্রাপ্ত ৪ জন শিক্ষককে দেয়া হয়েছে আর এরা ১৮ এপ্রিলের মধ্যে কর্মস্থলে যোগদান করবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ