Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

দিল্লির লাড্ডু : যে খায় সেও পস্তায় যে না খায় সেও পস্তায়

উপ-সম্পাদকীয়

| প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আবদুল আউয়াল ঠাকুর : প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর উপলক্ষে গণমাধ্যমে প্রকাশিত নানা ছবির মধ্যে একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, যে গাড়িতে দুই প্রধানমন্ত্রী পাশাপাশি বসেছেন তাদের সামনে লাড্ডু ভর্তি ট্রে। এই লাড্ডু ভারতের না বাংলাদেশের সেটি পরিষ্কার নয়। এ ধরনের ছবির প্রচলিত অর্থ বা মর্মার্থ যাই হোক ফিরে এসে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, সব দিক দিয়ে এ সফর ফলপ্রসূ হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, আমি কিছু চাইতে যাইনি। আমি শুধু বন্ধুত্ব চেয়েছি। ভারতের কাছে কোনো দেনা-পাওনার জন্য যাইনি, স্রেফ বন্ধুত্ব চাইতে গিয়েছিলাম, বন্ধুত্ব পেয়েছি। আমার দেশের মানুষের জন্য সম্মান বয়ে আনতে পেরেছি এটাই এই সফরের সবচেয়ে বড় অর্জন। প্রধানমন্ত্রী এই একটি মাত্র দেশই সফর করেননি। সেসব সফর নিয়ে কোনো কথা না থাকলেও ভারত সফরকে অতি গুরুত্বের সাথে দেখা হয়েছে। সরকারের থেকেও যেমনি এই সফরকে বিশেষ বিবেচনায় দেখা হয়েছে তেমনি জনগণও এই সফরকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছে। এতে দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য যাই থাকুক ভারত সফরকে হালকাভাবে দেখার কোনো কারণ নেই। এ সফর এমন এক সময় হয়েছে যখন দুই দেশের সরকারের সামনেই রয়েছে নির্বাচন। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতেও নানা ধরনের বিষয় স্থান করে নিয়েছে। সফরকে নিয়ে যত ধরনের আলোচনা এদেশে হয়েছে বা হচ্ছে, বোধকরি ভারতীয় গণমাধ্যমে তার চেয়ে খানিকটা বেশি বৈকি কম হয়নি।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে থেকেই ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো এ সফর নিয়ে লেখালেখিতে সরব ছিল। এমনকি সফর শেষ হওয়ার পরেও তার কমতি হয়নি। কী কী ধরনের চুক্তি হতে পারে এবং কোন ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বা হচ্ছে- এসব নিয়ে নানা ধরনের তথ্য এবং বিশ্লেষণ সফরের পূর্বেও যেমনি প্রকাশিত হয়েছে, তেমনি সফরের পরেও তা অব্যাহত রয়েছে। অবশেষে বহুল প্রত্যাশিত এবং বিলম্বিত সফর যখন হলো তখন দেখা গেল জনগণের প্রত্যাশার সাথে সফরের প্রাপ্তির কোনো সামঞ্জস্য নেই। হ্যাঁ, এটা বলা যায়, প্রধানমন্ত্রীর সফরকে মহিমান্বিত করার জন্য ভারতীয় প্রতিপক্ষ বেশ খানিকটা কৌশলও ব্যবহার করেছে। প্রথমত প্রোটোকল ভেঙে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বিমান বন্দরে অভ্যর্থনা জানানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের গুরুত্বকেই বোঝানো হয়েছে। জাতিগতভাবে এতে গর্বিত না হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে সফরের পর ভারতীয় মাধ্যমে যা প্রকাশিত হয়েছে সেখানেই বলা হয়েছে বাংলাদেশ এই সফর থেকে ন্যূনতম যা পাওয়ার আশা করেছিল সেটাও ঝুলে থাকল। সেখানকার খবরেই বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরের সময় তিস্তা নিয়ে আলোচনা এগোনো তো দূরের কথা ভারতীয় জনতা পার্টির বিরোধিতার কারণে সীমান্ত চুক্তিও তারা পার্লামেন্টে অনুমোদন করাতে পারেনি। এরপর ভারতে সরকার বদল হয়েছে। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি। বলা হয়েছে এরপর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সফর করেছেন। অনেক প্রত্যাশা ছিল তিস্তার পানি নিয়ে। কিন্তু সেবারও তা ভেস্তে গেল। প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গেলেন সাত বছর পর। সুতরাং আবারও প্রত্যাশার পারদ চড়ল। কিন্তু দুই দেশের শীর্ষ নেতার বৈঠক, দ্বিপক্ষীয় আনুষ্ঠানিকতা এবং সম্মত সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি মিলিয়ে ... দলিল স্বাক্ষরিত হলেও তিস্তা অমীমাংসিত থেকে গেল। সে বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে, ভারতের সাবেক এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। এরা উভয়ই তিস্তা চুক্তি না হওয়ার জন্য পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে দায়ী করেছেন। ভারতীয় অনেক কূটনীতিক ও বিশ্লেষকও এমনই বলেছেন। একসময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রীর না থাকার কথা থাকলেও তিনি পরে থাকলেন এবং তিস্তার পানি বণ্টনে সম্পূর্ণ গররাজি থাকলেন। উপরন্তু একটি উদ্ভট প্রস্তাব দিলেন। যে প্রস্তাব তিনি দিলেন তার মধ্যে এমন একটি নদীর নাম তিনি বলেছেন যেটি ম্যাপে নেই। তার অর্থ হচ্ছে, তিনি কোনো না কোনো মহল থেকে এটি পেয়েছেন। একটু পেছনে গেলে বলতে হয়, একসময় ভারতীয়রা বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের অস্তানার যেসব তথ্য দিত সেখানে বাংলাদেশের সেনানিবাসের ঠিকানাও থাকত। সে যাই হোক, বাংলাদেশের কোনো কোনো মিডিয়ায় এমন একটা ভাব দেখানো হয়েছে যে, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়াতে প্রধানমন্ত্রী এতটাই ক্ষুব্ধ যে তিনি খোদ দিল্লিতে বসেই তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত বাংলায় নয় একেবারে ভারতীয় জাতীয় ভাষা হিন্দিতেই তার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, তিস্তার পানি আসবেই তা কেউ আটকে রাখতে পারবে না। তিনি যাই বলুন, বর্তমান সরকারের আমলে তিস্তা বা পানি চুক্তি হবে এমন আশা করা ভালো, তবে এটা অনেকটাই দুরাশা। আমরা আশা করে থাকলাম যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আগামীতে যখন বাংলাদেশ সফরে আসবেন তখন তিনি নিরাশ হয়ে বাংলায় তার এ ধরনের ক্ষোভ প্রকাশ করবেন। মূল ব্যাপার হলো, তিস্তা নিয়ে কিছু হওয়ার হলে এখনই হতো। কথাটা শুধু তিস্তা বলে নয়। বাংলাদেশের পানি সমস্যা নিয়ে কথা। সফরের আগেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, আলোচনার এত কিছু রয়েছে যে সেখানে তিস্তা  কোনো বড় ব্যাপার নয়। বাস্তবে তার প্রতিফলন হয়েছে। ব্যাপারটি হচ্ছে, বাংলাদেশের পানি সমস্যা। ভারতের বৈরী নীতির কারণে সৃষ্ট সমস্যার কোনো সমাধানই হয়নি। এটা দীর্ঘদিন ধরে বলা হচ্ছে, বর্ষা মৌসুমের পানি ধরে রাখতে একদিকে গঙ্গাব্যারাজ, অন্যদিকে হিমালয়ের পাদদেশে রিজার্ভার তৈরি করা হোক। এর সবকটিতেই ভারতের আপত্তি রয়েছে। বাংলাদেশের পানি সমস্যার মূলে যে ভারতীয় আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প তা মূলত বিজেপিরই সৃষ্ট। বাংলাদেশকে মরুকরণ প্রক্রিয়া থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে শুধু গালভরা বুলি ছাড়া আর কিছু হয়েছে তেমনটা বলার কোনো কারণ নেই। যে যেভাবেই বলুক না কেন, ভারতের সাথে প্রধানমন্ত্রীর সফরে জাতীয় স্বার্থের মধ্যে পানি সমস্যার সমাধান ছিল অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। তাহলে এ সমস্যার কোনো সমাধান না হওয়া সত্তে¡ও প্রধানমন্ত্রী বলছেন সফর ফলপ্রসূ।
ভারতের সাথে বিদ্যমান অন্য সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে সীমান্ত সমস্যা। এখন অবস্থা এই যে সীমান্তে বাংলাদেশিরা ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছে জিম্মি হয়ে আছে। বিগত সফরে এর কোনো সমাধান হয়েছে তা বলা যাবে না। এদিকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। সক্ষমতা না বাড়িয়ে ভারতকে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার পক্ষে নন ব্যবসায়ীরা। এ পর্যন্ত ভারতের সাথে বাংলাদেশ এমন কোনো ব্যবসায়িক সুবিধা পায়নি যার কারণে বাংলাদেশ বিন্দুমাত্র লাভবান হয়েছে বরং বাংলাদেশ এখন ভারতের ওপর একটি নির্ভরশীল দেশে পরিণত হয়েছে। সীমান্তে অবাধ চোরাচালানিসহ বাংলাদেশকে পর্যুদস্ত করতে এমন কোনো প্রক্রিয়া নেই যা ভারতের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর সফরে এ পরিস্থিতির কোনো কার্যকর উন্নতি হয়েছে এমন কথা বলার জো নেই। বিশ্লেষকরা বিশেষ করে যারা এই সফরের অর্কিটেক্ট তারা সফরকে দেখছেন ভিন্নভাবে। তারা প্রধান সফলতার বিষয়টি বিবেচনা করছেন ভারতীয় অর্থপ্রাপ্তিকে। তারা মনে করছেন, স্বল্প সুদে যে বিপুল অংকের ঋণ পাওয়া গেছে তা বর্তমান সরকারের জন্য ছিল অপরিহার্য। এই অপরিহার্যতার কারণ ব্যাখ্যা করে তারা মনে করেন প্রথমত সরকারের কাছে কোনো টাকা নেই। দেশে বিনিয়োগে বন্ধাত্ব চলছে। এই টাকা খাটানো গেলে তাতে সম্ভাবনা দেখছেন তারা। এ কথা সরকারি মহলও স্বীকার করছে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী দুটি বড় খাতই এখন বড় ধরনের সংকটের মুখোমুখি। প্রথমত ডলারের মূল্যের কারণে পোশাক শিল্প এবং সরকারের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণ রেমিটেন্স খাত প্রায় হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। ফলে দেশে একটি মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটের পূর্বাভাস রয়েছে। এই বাস্তবতায় ভারতীয় অর্থ সেটি মোকাবিলায় যথেষ্ট সহায়ক হবে বলে তারা মনে করছে। তবে অনেকে মনে করছেন, আসন্ন নির্বাচনের আগে এ অর্থ প্রাপ্তির তাৎপর্য অনেক। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে যারা ভারতে লবি করেছেন সফর শেষে তারাও অনেকটা হতাশ। তারা মনে করছে না যে, তাদের দূতিয়ালি যথেষ্ট কাজে দিয়েছে। তারা মোটামুটি এক ধরনের অস্বস্তিতে ছিলেন যে শেষ মুহূর্তে হলেও তিস্তার পানি বণ্টনের একটা সমাধান হয়তো পাওয়া যাবে। এই মহল পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষকে দায়ী করলেও প্রকৃত প্রস্তাবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আগ্রহ-অনাগ্রহের বিষয়টিকে উড়িয়ে দেয়া যাবে না। কেন দিল্লির এই মনোভাব? এ নিয়ে নতুন বিশ্লেষণের কোনো প্রয়োজন নেই। অভিজ্ঞতা বলছে, ভারত না চাইতেই এ পর্যন্ত অনেক কিছু পেয়েছে। ধারণার অতীত তার প্রাপ্তি। সে কারণই হয়তো তারা মনে করছে, বাংলাদেশের জনগণের দায়িত্ব বর্তমান সরকারই গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে তাদের ভাবার বা করার কিছু নেই। অনেকে বলছেন, যে ধরনের চুক্তি বা সমঝোতা বিশেষ করে সামরিক খাতে ভারতের সাথে হয়েছে বা রয়েছে তা নতুন কিছু নয়। পৃথিবীর অনেক দেশের সাথেই রয়েছে। সে কথা তো এক অর্থে ঠিকই। চুক্তির ধরন তো একই হয়। বিষয় হচ্ছে, বাস্তবায়নের দিকটি। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেভাবে জঙ্গির খবর পাওয়া গেল সফরের পর তা চুপসে গেল কেন? তাহলে কী সফরের সাথে এর কোনো সম্পর্ক ছিল? বাংলাদেশ-ভারত কোন্ অভিন্ন শত্রæকে মোকাবিলা করবে সেটি বোঝা দায়। একদিন হয়তো ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বলবে বাংলাদেশের আলাদা সেনাবাহিনীর কোনো প্রয়োজন নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় যে সাত দফা চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছিল তার আদলে যে ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তি করা হয়েছিল সেটির যে মূল লক্ষ্য ছিল তা হলো বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ক্ষমতা-সক্ষমতা ক্ষুণœ করা। সেনাবাহিনীকেই বলা হয় প্রতিরক্ষা বাহিনী। সে বিবেচনায় প্রতিরক্ষার যে বিশেষ দিকটি তা যদি কোনো না কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হয় তার অর্থ কী দাঁড়াতে পারে বোধকরি তা ভেঙে বলার দরকার করে না। এবার সে ধরনের চুক্তির কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি। এই না হওয়ার পেছনে যে দুটি কারণ কাজ করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন তা হলো- প্রথমত নতুন নির্বাচনের সময় আর খুব বাকি নেই। অন্যটি হচ্ছে তিস্তা চুক্তি না করা। যারা এর সাথে পূর্বাপর জড়িত তারা বলছেন, মেলানো যাবে না বলেই সবটা এখন করা হয়নি। যদি কখনো তিস্তা চুক্তি হয় তাহলে প্রতিরক্ষা চুক্তিও হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, কিছু চাইতে তিনি যাননি। সুতরাং পাওয়ারও কোনো প্রশ্ন ওঠে না। এই না চাওয়ার মধ্যেই তিনি যা দিয়েছেন তার মাশুল হয়তো সামনে জনগণকে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে প্রোটোকল বহিভর্‚ত অভ্যর্থনা দিয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যদি জাতিকে সম্মান এবং সফরকে গুরুত্ব দিয়েছেন বলে বিবেচনা করা হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রীর ভারতের প্রেসিডেন্টের হেঁসেলে ব্যতিক্রম বলে গণ্য হবে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে যারা ওঠাবসা করেন তারা এ ব্যাপারে একমত যে, খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে তার জুড়ি নেই। অনেক ক্ষেত্রে প্রোটোকল ভেঙে তিনি নিজেই আপ্যায়ন করেন। যখন তিনি ক্ষমতার বাইরের রজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন তখনও যারা আওয়ামী লীগ কভার করত তাদের তিনি নিজেই আপ্যায়ন করতেন। এটিকে নেতিবাচকতায় দেখার কোনো সুযোগ নেই। আলোচ্য প্রসঙ্গ অবশ্য একটু ভিন্ন। ভারতের রাষ্ট্রীয় মেহমান হয়েছেন তিনি। দেশের জনগণের পক্ষ থেকে সেখানে রাষ্ট্রীয় প্রোটোকলই হচ্ছে চ‚ড়ান্ত। এটা বোধকরি সবচেয়ে ভালো হতো যদি প্রধানমন্ত্রীর পিতার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তিনি ভারতীয় প্রেসিডেন্টকে ‘নেমতন্ন’ করে নিজ হাতে রান্না করে তা পরিবেশন করতেন।
যাই হোক, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সম্পর্ককে বিবেচনায় নিলে আরো কিছু ভাবনাকে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। আগামী নির্বাচন ভারতে এবং বাংলাদেশে খুব কাছাকাছি সময়ে হতে যাচ্ছে। সুতরাং এবারের সফরে সব ক্ষেত্রেই যে নির্বাচন বিষয়টি মাথায় ছিল তা অস্বীকার করা যাবে না। যেসব চুক্তি দীর্ঘ মেয়াদে হওয়ার কথা ছিল তা হয়েছে স্বল্প মেয়াদে। অর্থাৎ এসব চুক্তি যখন আবার নবায়নের সময় আসবে তখনও বাংলাদেশ আরো একটি নির্বাচনের মুখে থাকবে। সুতরাং দর কষাকষির ব্যাপারটি থেকেই গেল। সফরের প্রাপ্তিতে জনগণের যাই হোক সরকারের দায়িত্বশীল মহল টাকার প্রাপ্তিকে যে গুরুত্বের সাথে দেখছেন তার সাথেও নির্বাচনের সম্পর্ক রয়েছে। মাত্র সেদিন সরকার বিশ্বব্যাংকের টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে হয়তো অভিজাত্যের যে বিষয় রয়েছে বোধকরি ভারতীয় অর্থ গ্রহণের মধ্যে ততটাই ঘেন্নার বিষয় রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা কীভাবে লোপাট হয়েছে জাতি আজ পর্যন্ত তা জানতে পারেনি। পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার মানি লন্ডারিং হয়েছে বলে পত্র-পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। জনগণের টাকা কারা লোপাট করছে তার কোনো জবাবদিহিতা নেই। এসব নিয়ে যাতে সংসদে কোনো আলোচনা না হতে পারে সে জন্যই অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ গঠন করা হয়েছে। যদি শেষ পর্যন্ত আগামী নির্বাচনই শেষ কথা হয় তাহলে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেবের সাথে কেবল প্রধানমন্ত্রী বা তার দল নয় জাতিরও বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। ভারত আমাদের সবচেয়ে নিকট প্রতিবেশী, বড় দেশ। বিশ্লেষকরা ভারতকে উদীয়মান পরাশক্তি হিসেবে দেখতে চান। যদিও ভারতে এখনো প্রকাশ্যে মলত্যাগীদের এবং ভ্রুণ হত্যাকারীদের নিবৃত্ত করা যায়নি। সভ্যতার নিদর্শন নিয়ে কথা না বলে এটা বোধহয় বলা যায় ভারতীয় বন্ধুত্ব যদি জনগণের বিবেচনায় হতো তাহলে তিস্তা না হোক, যৌথ নদীর পানি থেকে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার একটা ইতিবাচক আলোচনা হলেও হতে পারত। সফলতা যাই থাক সেটি হয়তো এতটাই গোপন যে জনগণের জানার সুযোগ কম, তাই জনগণ দেখতে চায় তারা কী পেল। রাষ্ট্রের বন্ধুত্বের অর্থ হচ্ছে পারস্পরিক সমতা। এক্ষেত্রে কতটা তা রক্ষিত হয়েছে সেটিই সবচেয়ে বড় বিবেচ্য বিষয়। বোধকরি সে কারণেই বলা হয়েছে- দিল্লির লাড্ডু যে খায় সেও পস্তায়, যে না খায় সেও পস্তায়।
[email protected]



 

Show all comments
  • আল আমিন ১৭ এপ্রিল, ২০১৭, ৪:২০ এএম says : 1
    লেখাটি খুব ভালো লেগেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • মিলটন ১৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:৩০ পিএম says : 0
    হাসিনা হিরো হত পারেনি মমতা হিরো হতে পেরেছেন
    Total Reply(0) Reply
  • এস, আনোয়ার ১৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১০:৩৮ পিএম says : 0
    "আপনার মান আপনি যখন দিয়েছি জলাঞ্জলী, অপমান তাকে আপনার মুখে কেমন করিয়া বলি? তবে শান্তনা স্বরুপ ধরে নেয়া যায়, "ভোগে নয়, ত্যাগেই আনন্দ, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ"। তাও না পারলে - "ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি"।
    Total Reply(0) Reply
  • বাকির ২০ এপ্রিল, ২০১৭, ৩:২৩ পিএম says : 0
    যেখানে জনগণের কথার মৃল্য থাকেনা ঐখান থেকে কি আশা করা যায়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ