Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সমন্বয়হীনতায় দৌলতদিয়ায় প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের

| প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নজরুল ইসলাম, রাজবাড়ী থেকে : দক্ষিণাঞ্চলের একুশ জেলার সঙ্গে রাজধানীসহ সারা দেশের যোগাযোগে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট। প্রতিদিন এ নৌরুট দিয়ে কয়েক হাজার বিভিন্ন যানবাহন এবং লাখ লাখ যাত্রী নদী পারাপার হয়ে থাকে। কিন্তু দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটটি অনেকদিন ধরেই পদ্মা নদী ভাঙনের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে। গত বছরের জুন ও জুলাই মাসে দৌলতদিয়ার সবক’টি ফেরিঘাট একে একে পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এ রুট দিয়ে যানবাহন পারাপার। এক রকম ভেঙে পড়ে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঘাট এলাকায় সৃষ্ট যানজটে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের। পদ্মা নদীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন রোধে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় আসছে বর্ষা মৌসুমে গত বছরের চেয়ে ভয়াবহ অবস্থার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফেরিঘাটের ব্যবসায়ীরা জানান, ফেরিঘাটে কাজ করে এমন চার কর্তৃপক্ষ বিআইডবিøউটিএ, বিআইডবিøউটিসি, সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। এদের কাজ হচ্ছে যে কোনো প্রতিক‚লতার মধ্যে ঘাট চালু রাখা। এর জন্য প্রয়োজন সর্বোচ্চ সমন্বয়। কিন্তু দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে সরকারের এই চার সংস্থার কাজের তেমন কোনো সমন্বয় নেই বললেই চলে। তারা আরো জানান, গত বছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙন শুরু হওয়ার পর কোটি কোটি টাকা খরচ করে সাময়িকভাবে ঘাট চালু রাখার চেষ্টা করা হলেও ভাঙন রোধে স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। এতে একদিকে যেমন সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্চা যায় অপরদিকে মানুষের ভোগান্তি থেকে মুক্তি মেলেনি। খুলনা থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাকের চালক মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, গত বর্ষা মৌসুমে দৌলতদিয়া ঘাটের চারটি পল্টুনই ভেঙে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সে সময় ঘণ্টার পর বসে থাকতে হতো ঘাটে এতে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছিল যাত্রীরা। বর্ষার আর মাত্র দুই মাস বাকি এখনই কাজ না করলে ঘাটের বর্তমানে যা অবস্থা এবার আরো বড় ধরনের দুর্ভোগ হবে বলে জানান তিনি। অপরদিকে এই নৌপথে বর্তমানে ১৬টি ফেরি থাকলেও একমাত্র ভাষা শহীদ গোলাম মওলা ছাড়া বাকি ১৫টি ফেরিই ত্রæটিপূর্ণ, মাঝে মধ্যেই বিকল হয়ে আটকে থাকছে মাঝ নদীতে, এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। আর বিআইডবিøউটিসি কর্তৃপক্ষ বলছে, ত্রæটিপূর্ণ ফেরিগুলো মাঝে মাঝেই পুনর্বাসন করতে হচ্ছে, ভাষা শহীদ গোলাম মওলার মতো আর দু-একটি ফেরি বহরে সংযুক্ত করা হলে দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশ মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। ১৯৮১ সালে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যুক্ত হয় ফেরি মাধবীলতা, কয়েক বছর চলার পর বিকল হয় ফেরিটি পুনর্বাসন করার পর মাঝে মধ্যে সচল আবার মাঝে মধ্যে বিকল হয়ে চলছিল ফেরিটি। এ অবস্থায় গত এক বছর বন্ধ থাকার পর গত সপ্তাহের বুধবার পুনরায় চালু করা হয়, তিনদিন চলার পর আবার শুক্রবার দৌলতদিয়া তিন নম্বর ফেরি ঘাটে নোঙ্গর করতে গিয়ে আবার বিকল হয় ফেরি মাধবীলতা। শুধু মাধবীলতা নয় বহরে থাকা ১৬টি ফেরির মধ্যে, এনায়েতপুরী, খান জাহান আলী, ভাষা শহীদ বরকত, আমানত শাহ, শাহ আলী, মাঝে মধ্যে বিকল হয়ে পড়ছে। দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ব্যবসায়ী আবুল ফকির বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরিগুলো এখন বুড়ো হয়ে গেছে সেইসাথে প্রতিবন্ধীর মতো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সামান্য ¯্রােত হলেই নদী পার হতে পারে না। আবার ফিরে চলে যায় অনেক পথ ঘুরে আসে ঘাটে এতে সময় লাগে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। যে ফেরিগুলো আছে সেই ফেরিগুলো দিয়ে ভালোভাবে পারাপার করানো সম্ভব নয়, এই ফেরিগুলো ভালোভাবে মেরামত করলে মানুষের ভোগান্তি একটু কমবে। দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে কাজ করে এমন চার কর্তৃপক্ষ বিআইডবিøউটিএ, বিআইডবিøউটিসি, সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড তারা একে অপরের উপর চাপিয়ে দিচ্ছেন দোষ। দৌলতদিয়া ঘাটের বিআইডবিøউটিসির ব্যবস্থাপক সফিকুল ইসলাম বলেন, বিআইডবিøউটিসির কাজ হচ্ছে ফেরি সচল রাখা, দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমানে ১৬টি ফেরি থাকলেও চলছে ১৩ থেকে ১৪টি। ফেরিগুলো প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ বছর আগে ক্রয় করা অনেক পুরাতন হওয়ার কারণে মাঝে মধ্যেই পুনর্বাসন করতে হচ্ছে ফেরিগুলোকে একমাত্র ভাষা শহীদ গোলাম মওলা ভালো সার্ভিস দিচ্ছে, এই ফেরির মতো আরো দু-একটি ফেরি বহরে সংযুক্ত করা হলে দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশ মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। বিআইডবিøলিউটিএর দৌলতদিয়া ঘাটের দ্বায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বলেন, বিআইডবিøলিউটিএ-এর কাজ হচ্ছে যদি কোনো ফেরির পল্টুন ভেঙে যায় সেই পল্টুনগুলো প্রতিস্থাপন করা, দৌলতদিয়া চারটি ঘাটের মধ্যে সবগুলো ঘাট এলাকায়ই ভাঙন রয়েছে। প্রধান সড়ক থেকে শাখা সড়কের কাজ করবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ তারা যদি সময় মতো রাস্তার মেরামত করে তবে পল্টুনের কোনো সমস্যা নেই, এরই মধ্যে পল্টুন নির্মাণের ব্যাপারে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে টেন্ডার আহব্বান করা হয়েছে। খুব তারাতাড়ি কাজ শুরু হবে। রাজবাড়ীর সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ভেঙে যাওয়া রাস্তা নির্মাণ করবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, কিন্তু সেখানে বড় সমস্যা ছিল জমির বন্দোবস্ত করা। রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক জিনাত আরার সার্বিক সহযোগিতায় এরই মধ্যে জমির বন্দোবস্ত হয়েছে। ওই জমিতে থাকা গাছ টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে, যার জন্য দরপত্র আহব্বান করা হয়েছে গতকাল রোববার দরপত্র জমা দেয়ার শেষদিন ছিল। গাছ কাটা শেষ হলে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার শাখা সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। রাজবাড়ীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী গৌর চন্দ্র সূত্রধর বলেন, গত বর্ষা মৌসুমে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিøউটিএ) অনুরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ ভাঙনরোধে কাজ করেছিল। এই বছরে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার জন্য কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি, যদি বরাদ্দ পাওয়া যায় তবে আমরা নদী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ