Inqilab Logo

বুধবার, ০৫ জুন ২০২৪, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মজুরি বৈষম্য দূর ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি

দামুড়হুদায় ক্ষেত-খামারে বাড়ছে নারী শ্রমিকের উপস্থিতি

প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১১ এএম, ১৭ এপ্রিল, ২০১৭

নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে : চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় কৃষিকাজসহ নানা ক্ষেত্রে পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি দিন দিন নারী শ্রমিকের উপস্থিতি বাড়ছে। তুলনামূলকভাবে নারীরা কাজে বেশি মনোযোগী সেইসাথে পুরুষ শ্রমিকের তুলনায় মজুরি কম হওয়ায় নারী শ্রমিকদের কদর বেড়েই চলেছে। গ্রামীণ জনপদে নারীরা এখন আর শুধু ঘর-সংসারের কাজে ব্যস্ত নেই। উপার্জন বাড়িয়ে সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে পুরুষের পাশাপাশি ক্ষেত-খামারেও শ্রম বিক্রি শুরু করেছে। জানা যায়, পূর্বে এ জনপদে পুরুষদের মতো নারীদের ক্ষেত-খামারে কাজ করার তেমন একটা রেওয়াজ ছিল না। কয়েক দশক আগে এলাকায় বসবাসরত বাগদি সম্প্রদায়ের কিছু কিছু নারীরা কৃষিক্ষেত্রে ধান রোপণ, ফসল তোলা ও সবজি ক্ষেতে কাজ করতে শুরু করে। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে শুধুমাত্র পুরুষদের পরিশ্রমে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে পুরুষের পাশপাশি নারীরাও ক্ষেত খামারে শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে শুরু করেছেন। তবে নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে একই কাজে পুরুষের সমপরিমাণ পরিশ্রম করলেও তারা মজুরি পাচ্ছেন কম। সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও অবজ্ঞার কারণে নারীরা বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের শ্রমের ন্যায্য মজুরি থেকে। এক সময় এ অঞ্চলের নারী শ্রমিকদের কাজ চাতালে ও গৃহস্থের বাড়িতে ধান সেদ্ধ করা, শুকানো ও চাল তৈরির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে নারী শ্রমিকরা কৃষিক্ষেত্রে ধান, ভুট্টা, সবজিসহ নানা ধরনের ফসল রোপণ পরিচর্যা ও ফসল তোলার কাজ করছেন। এছাড়া ধান, গম, ভুট্টা ইত্যাদি মাড়াই থেকে শুরু করে ঝেড়ে ঘরে তোলা পর্যন্ত সমস্ত কাজই করে থাকেন নারীরা। উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের মাঠে সবজিক্ষেতে কর্মরত নারীশ্রমিক সবেদা, আল্লাদি, মর্জিনা, মনোয়ারা, কোহিনুর, পঞ্চবালা, কাজলী ও সুবারন বলেন, আমরা জয়রামপুর গ্রামের বাসিন্দা। দল বেঁধে গ্রামের ক্ষেত-খামারে কাজ করি। এ অঞ্চলের নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৭টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত গৃহস্থের জমিতে নানা ধরনের কৃষিকাজ কাজ করতে হয়। গৃহস্থরা আমাদেরকে মজুরি দেয় ১৫০ টাকা। অথচ একই কাজের জন্য পুরুষ শ্রমিকদের দেয়া হয় ২শ’ টাকা থেকে আড়াইশ’ টাকা। তারা বলেন, দল বেঁধে ক্ষেত-খামারে কাজ করতে বর্তমানে কোনো অসুবিধা হয় না। তবে নিরাপত্তার কথা ভেবে নিজেদের এলাকার বাইরে কাজ করতে যাইনে। পুরুষদের মতো আমরাও ক্ষেত-খামারের কাজ করতে পারি। মজুরি কম হলেও সংসারের স^চ্ছলতা ফেরাতে পুরুষদের পাশাপাশি আমরাও ক্ষেত-খামারে কাজ করে থাকি। ইটভাটায় কর্মরত দর্শনা পৌর এলাকার মহম্মদপুরের মর্জিনা খাতুন ও আরতি রানী বলেন, আমরা ইটভাটায় কাজ করি। ১৪০ টাকা মজুরিতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কিলন্ লেপার কাজ করি। ভাটা মালিক প্রতি সপ্তায় এ মজুরি পরিশোধ করেন। বছরে ৫-৬ মাস ধরে কাজ করি। তাতে আমাদের স্বামী-স্ত্রী দু’জনের উপার্জন দিয়ে সংসার ভালোই চলে। সচেতন মহল মনে করেন, দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশিই হলো নারী। বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে নানামুখী কাজ করছে। তাই বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রে কৃষক হিসেবে নারীর স্বীকৃতির বিষয়টিও ভেবে দেখার দাবি রাখে। সেইসাথে বেকার নারীদের কৃষিকাজসহ নানা ধরনের কাজের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও কাজের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে পারলে পুরুষের মতো তারাও কৃষিক্ষেত্রসহ সমাজের নানা কাজে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখতে পারবে। তাতে একদিকে যেমন বেকার সমস্যার সমাধান হবে অপরদিকে নারী-পুরুষ মিলে দেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নেয়া সহজ হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ