পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সায়ীদ আবদুল মালিক : জাঁকজমকভাবেই পয়লা বৈশাখ উদযাপিত হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় প্রায় ১১ হাজার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রহরায় উৎসবমুখর হয়ে উঠেছিল ঢাকা শহরের পয়লা বৈশাখের প্রখর রোদের দিনটি। অতীতে রমনা বটমূলকেন্দ্রিক এই উৎসব এবার ছড়িয়ে পড়ে পুরো রাজধানী। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর পান্তা ইলিশ নিয়ে হৈ-হুল্লোড় এবার কম দেখা গেলেও চারুকলা অত্যন্ত বর্ণিল ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ যথারীতি আয়োজিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে বের হয়ে শাহবাগের রূপসী বাংলা হোটেল মোড় পর্যন্ত এ মিছিলে সাপ-প্যাঁচার মুখোশের বাহুল্য দেখা গেলেও অংশগ্রহণকারীর উপস্থিত অন্যবারের চেয়ে কিছুটা কম ছিল। সাংস্কৃতির মন্ত্রী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এই শোভা যাত্রার নেতৃত্ব দিলেও মিছিলের সম্মুখভাগে পরিচিত বুদ্ধিজীবী-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। নিরাপত্তাজনিত কারণেই শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের কয়েকটি রাস্তা সাময়িক বন্ধ করে রাখা হয়। শাহবাগকেন্দ্রিক রাস্তার মোড়ে মোড়ে জটলা এবং কোথাও গান-বাজনার কমতি ছিল না। রমনার বটমূল ছাড়াও রাজধানীর ধানমÐি, গুলশান, শেরেবাংলা নগরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের দিনভর গান-বাজনা দর্শকদের আকর্ষণ করেছে। তবে এবার সবচেয়ে আকর্ষণ ছিল হাতিরঝিল। আবালবৃদ্ধবনিতা যেন খুঁজে পেয়েছিল পহেলা বৈশাখ উদযাপনের প্রধান আকর্ষণ, নতুন ঠিকানা হাতিরঝিল, যমুনা ফিউচার পার্কসহ কয়েকটি বাণিজ্যিক মার্কেটও পহেলা বৈশাখে দর্শকদের আকর্ষণ করতে নানা বিনোদনের আয়োজন করে। চিড়িয়াখানা, শিশুপার্কে ছিল উপচে পড়া ভিড়। তবে সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে হাতিরঝিল স্পট।
খোলা আকাশের নিচে মুক্ত হাওয়া। বিনোদনের জন্য রয়েছে ওয়াটার টেক্সি, সার্কুলার বাস। সদ্য যোগ হওয়া আলোকসজ্জার নতুন সংযোজন হাতিরঝিলের আরও বেশি আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে। রং-বেরঙের এ আলোর সঙ্গে আছে পানির ফোয়ারা। সঙ্গে আছে মিউজিকের তাল। যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাচতে থাকে ফোয়ারাগুলো। সংগীতের তালে তালে নাচে পানি। সাথে চোখ ধাঁধানো আলোর ঝলকানি। পানির নাচনে ক্লান্ত মনে আনে প্রাণ। নিজের অজান্তেই ওঠে নেচে। লাল, নীল, সবুজ, বেগুনি বহু রঙে বর্ণিল আলো। আর সেই সব রং ধরে পানি ছোটে নাচের ভঙ্গিমায়। ঠিক এমনটাই দেখা গেল হাতিরঝিলের রঙিন আলোর ফোয়ারায়।
গত বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ফোয়ার উদ্বোধন করেন ডিজিটাল মাধ্যমে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ফাউন্টেইন বলেই এর কথা বলা হচ্ছে। ফোয়ারার পানি ১০ মিটার থেকে ৮০ মিটার পর্যন্ত ওপরে উঠতে পারে বলে জানালেন কর্তৃপক্ষের একজন। এছাড়াও ওইদিন প্রধানমন্ত্রী হাতিরঝিলে ২ হাজার দর্শনার্থী আসন ক্ষমতা সম্পন্ন অ্যাম্পিথিয়েটারের উদ্বোধন করেন। খোলা আকাশ, জলাশয়, সবুজ পরিবেশ, কিছুটা নিরিবিলি আর শীতল বাতাসে ক্লান্ত মনকে জুড়িয়ে নিতে অনেকে ছুটে আসেন হাতিরঝিলে। এখন থেকে মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ফাউন্টেইন এবং অ্যাম্পিথিয়েটারের বাড়তি বিনোদন উপভোগ করার সুযোগ পাবেন নগরবাসী। বিভিন্ন উৎসবে বাড়তি আয়োজনের পাশাপাশি প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা এবং রাত সাড়ে ৯টায় ১৫ মিনিটের জন্য চালু করা হবে এ বর্ণিল ফোয়ারা।
প্রকল্প পরিচালক জানান, এই মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ফাউন্টেন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড়।
তিনি বলেন, গ্রিক ও রোমান সভ্যতার আদলে নির্মিত অ্যাম্পিথিয়েটার ও ওয়াটার ফাউন্টেন নির্মাণে প্রায় ১২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এই অ্যাম্পিথিয়েটারে একসঙ্গে দুই হাজার দর্শক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন। এটি দেখতে পানির ওপর পাপড়ি মেলে থাকা ফুলের মতো।
তিনি জানান, এ উন্মুক্ত থিয়েটারটি রাষ্ট্রীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের পাশাপাশি নগরবাসীর সাংস্কৃতিক চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। আর বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বছরব্যাপী ঐতিহ্যকে তুলে ধরবে ওয়াটার ফাউন্টেন।
হাতিরঝিলের আশপাশের গুলশান, পুলিশ প্লাজা, মেরুল বাড্ডা, মধুবাগ ও মহানগর প্রজেক্ট এলাকা থেকে দেখা যাবে ১ হাজার ৯৮০ বর্গমিটারের এ রঙিন ফোয়ারায় জলের ধারা। হাতিরঝিলের গুলশান আড়ং ও পুলিশ প্লাজার মাঝামাঝি অংশে গোলাকার উন্মুক্ত মঞ্চ অ্যাম্পিথিয়েটার থেকেও তা উপভোগ করতে পারবেন দর্শনার্থীরা।
এর আগে এ প্রকল্পের আওতায় হাতিরঝিলে যোগ হয় ওয়াটার ট্যাক্সি। তারও আগে যুক্ত হয়েছিল সার্কুলার বাস ও থিয়েটারও।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সূত্রে জানা যায়, নগরবাসী হাতিরঝিলে যাতে আরও বেশি বিনোদন পায় সেই লক্ষ্যে স্বচ্ছ পানিতে এই ওয়াটার ট্যাক্সি চালানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর চারপাশে বিনোদনপ্রেমীদের যাতায়াত সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সার্কুলার এসি ও নন এসি বাস চালু করা হয়েছে।
এছাড়া ঝিলের পানির গুণগত মান ঠিক রাখার জন্য ২০টি ফোয়ারা নির্মাণ করা হচ্ছে। এজন্য ইউলুপ নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজে ৮ দশমিক ৯ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এখানে ১৫ তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট নির্মাণ করা হবে।
এ বিষয়ে হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক বলেন, আরও নান্দনিক রূপে নগরবাসীর সামনে এসেছে হাতিরঝিল প্রকল্প। ঝিলের জলে ওয়াটার ট্যাক্সি চলছে। এছাড়া চারপাশে সার্কুলার বাসও চলছে। নির্মাণ করা হয়েছে থিয়েটার।
গত শুক্রবার বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটিতে হাতিরঝিলে বিনোদনপ্রেমিদের উপচেপড়া ¯্রােত নামে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ভিড় রূপ নেয় জনসমুদ্রে। ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাতিরঝিল প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এর পরেই ঢাকাবাসীর জীবনে যোগ হয় এই দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো। চার বছরে হাতিরঝিলের সড়ক পাড়ের গাছগাছালি বড় হয়ে উঠেছে। বাড়ছে বিনোদন স্পট হিসেবে হাতিরঝিলের আকর্ষণ। ঝিলের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্ত ঘুরে ঘুরে দেখার জন্য চক্রাকার বাস সার্ভিস নামানো হয়েছে। পানিতে চলছে ওয়াটার বাস। পুরো স্পটের সৌন্দর্য দেখার জন্য এটি ভালো একটি বাহন।
হাতিরঝিলে নতুন পানির ফোয়ারা প্রদর্শনের বিষয়টি এখানকার বিনোদনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। নানা রঙের পানির এই প্রদর্শন যে কোনো বয়সী পর্যটকের দৃষ্টি কাড়ে। উদ্বোধন হওয়ার পর এটি দেখার জন্য অপেক্ষা করেন এখানে ঘুরতে আসা লোকজন।
গত শুক্রবার হাতিরঝিলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নানা সাজে, নানা ঢঙে, নতুন বৈশাখী পোশাক পরে ঘুরতে বের হয়েছেন বিনোদনপ্রেমীরা। অনেকে বাসে করে ঘুরেছেন পুরো হাতিরঝিল। কেউবা ওয়াটার ট্যাক্সিতে উঠে বাড়তি আনন্দ নিচ্ছেন। তবে মা-বাবার হাত ধরে ঘুরতে আসা শিশুরা বেশি খুশি বিভিন্ন ধরনের খেলনা হাতে পেয়ে। কেউবা বাজিয়ে বেড়াচ্ছে দেশের সংস্কৃতিতে নতুন যোগ হওয়া ভুভুজেলা বাঁশি। যদিও এবারের উৎসবে বাঁশিটি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
ঈরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবদুল মোছাদ্দের জানান, বিশেষ দিনে সুযোগ পেলেই বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করা তার শখ। গত স্বাধীনতা দিবসে ঘুরতে গিয়েছিলেন স্মৃতিসৌধে। আর বৈশাখে এসেছেন হাতিরঝিলে।
তিনি জানান, মূলত পানির ফোয়ারা প্রদর্শন দেখতেই পরিবার নিয়ে এসেছি হাতিরঝিলে। কিন্তু তিনি আশাহত হয়েছেন। কারণ সদ্য উদ্বোধন করা এই পানির ফোয়ারা প্রদর্শনটি শুধু রাতেই দেখানো হয়। তবে বাসে করে ঠিকই চক্কর দিয়েছেন হাতিরঝিলে।
ঘুরতে এসে হাতিরঝিল ওয়াটার ট্রাক্সিতে এসে খুবই খুশি ছোট্ট শিশু হুমাইয়া হিমু। ওয়াটার ট্যাক্সি থেকে সে যখন নামলো তখন তার চোখে-মুখে পর্বত জয় করার মতো খুশি স্পষ্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।